‘৫ কারণে’ গ্রামে দ্রুত বাড়ছে আক্রান্ত-মৃত্যু

40

আসহাব আরমান

চট্টগ্রামে নগরীর পাশাপাশি উপজেলাগুলোতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে করোনা সংক্রমণ। পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যুও। পাঁচ কারণে বেড়েছে এই সংক্রমণ ও মৃত্যু। সংক্রমণের হার বেশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের চেয়ে উত্তর চট্টগ্রামে। উপজেলাগুলোর মধ্যে সীতাকুন্ড, মিরসরাই, হাটহাজারী ও ফটিকছড়িতে মারাত্মকভাবে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা গ্রামের পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।
এদিকে চট্টগ্রামে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে আসতে দেরি করা, টিকা গ্রহণে অনীহা, অপর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা, প্রশাসনের পর্যাপ্ত প্রচারণার অভাব সর্বোপরি নাগরিকদের অচেতনতার কারণে উপজেলায় সংক্রমণ বাড়ছে। এমনটি চলতে থাকলে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে উপজেলা পর্যায়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। গ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থা ততটা উন্নত নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা থাকলেও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নাগরিকরা সেসব সুবিধা পাচ্ছে না। ফলে চিকিৎসার জন্য উপজেলার রোগীদের সব সময় শহরমুখী হতে হয়। এছাড়াও গ্রামের মানুষ এখনও করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন না হওয়ায় সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে লোকজন চিকিৎসা নিতে অবহেলা করে। উপসর্গ থাকলেও সাধারণ জ্বর-সর্দি মনে করে চিকিৎসা নেয় না। উপজেলার মানুষদের মধ্যে টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রেও অনীহা দেখা গেছে। সবমিলিয়ে উপজেলায় মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। এখন গ্রামাঞ্চলের পরিস্থিতি যাতে আরও ভয়াবহ পর্যায়ে না যায় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এদিকে গ্রামের আক্রান্তরা শহরমুখী হওয়ায় নগরের হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়েছে। নগরীর কোনো সরকারি হাসপাতালে এখন আইসিইউ শয্যা খালি নেই। অথচ গ্রামের হাসপাতালের অনেকগুলোই এখনও খালি পড়ে আছে। দেশে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরুর পর গ্রামের অনেক মানুষ নানাভাবে বিভ্রান্ত ছিলেন। তাদের অনেকেই টিকা দিতে আগ্রহী হননি। টিকাবঞ্চিত লোকজনই আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও।
সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি পূর্বদেশকে বলেন, উত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় সংক্রমণের হার বেশি। নগরীর চেয়েও উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। এ অবস্থা আর কয়েকদিন চলতে থাকলে শহরের হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়বে। রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হবে। শুধু চিকিৎসায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে জনসমাগম, আড্ডা, জটলা- এসব পরিহার করতে হবে। মুখে মাস্ক রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে শয্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেনারেল হাসপাতালে শয্যা বাড়ানো হয়েছে। বিআইটিআইডিতে আইসিইউ সুবিধা চালু করা হয়েছে। হলিক্রিসেন্ট হাসপতালে করোনা রোগী ভর্তি চালু হয়েছে। চমেক হাসপাতালে শয্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সাথে নগরীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর জন্য শয্যা বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চট্টগ্রামে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮ হাজার ৫৫৫ জন। এদের মধ্যে উপজেলার বাসিন্দা ১৪ হাজার ১৩২ জন। এই সংখ্যা মোট আক্রান্তের ২০ দশমিক ৬১ শতাংশ। চট্টগ্রামে করোনায় এই পর্যন্ত মারা গেছেন ৮১০ জন। এদের মধ্যে উপজেলার বাসিন্দা ২৯৯ জন। তবে গত ১৫ দিনের চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন। চলতি মাসের ১৫ দিনে চট্টগ্রামে আক্রান্ত ও মৃত্যু দুটোই বেড়েছে। এই সময়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ১৯২ জন। এদের মধ্যে ১৪ উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৭৯ জন। যা মোট আক্রান্তের ৩৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ। একই সময়ে করোনায় মারা গেছেন ১০৪ জন। এদের মধ্যে উপজেলার বাসিন্দা ৭০ জন। অর্থাৎ ১৫ দিনে মোট মৃত্যুর ৬৭ দশমিক ৩০ শতাংশ উপজেলার বাসিন্দা।
এদিকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চেয়ে উত্তর চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে সংক্রমণ। এর মধ্যে হাটহাজারীতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৩৫৮ জন। যা উপজেলারগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। রাউজানে ১ হাজার ৮৮৩ জন, ফটিকছড়িতে ১ হাজার ৭১৩ জন, সীতাকুন্ডে ১ হাজার ৭৬৫ জন, মিরসরাইয়ে ১ হাজার ৮৫ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ৯৬৪ জন এবং সন্দ্বীপে ২৯৫ জন। এদিকে দক্ষিণ চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে পটিয়া উপজেলায়। এই উপজেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ১৮২ জন, বোয়ালখালীতে ৯০৩ জন, আনোয়ারায় ৭৪৮ জন, বাঁশখালীতে ৭০৩ জন, চন্দনাইশে ৫৯৫ জন, সাতকানিয়ায় ৫৩৪ জন এবং লোহাগাড়া ৪০৪ জন।