৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে সম্মত আইএমএফ

9

পূর্বদেশ ডেস্ক

এমন এক সময়ে আইএমএফ এর উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঢাকা সফর করছেন, যখন এ সংস্থা থেকে বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়ে শর্তসহ খুঁটিনাটি চ‚ড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।
চার দিনের সফরে বাংলাদেশে অবস্থানরত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহিবলের (আইএমএফ) উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন।
গতকাল রবিবার সকাল ১০ টায় ঢাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে তাদের এই বৈঠক শুরু হয়। ১৪ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত এ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও বৈঠকের সূচি রয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের।
এমন এক সময়ে আইএমএফ এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঢাকা সফর করছেন, যখন এ সংস্থা থেকে বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়ে শর্তসহ খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।
ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশ সফরের অংশ হিসেবে গত শনিবার ঢাকা পৌঁছান অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ। এইএমএফ বলছে, এই সফর বংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সহায়ক হবে বলে তারা আশা করছে।
প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ।
বাংলাদেশ যেসব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে আছে, সেসব বিষয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি আইএমএফ কীভাবে সেসব চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণে সহযোগিতা করতে পারে, সেসব বিষয় আসবে এসব বৈঠকে।
বাংলাদেশে নারী অধিকার কর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে আইএমএফ এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকের।
করোনা পরিস্থিতি সামলে আগামি দিনগুলোতে বিশ্বব্যাপি অর্থনৈতিক যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে তাতে বাংলাদেশও আছে। এমন পরিস্থিতিতে গত জুলাই মাসে আইএমএফ এর কাছে ঋণ চায় বাংলাদেশ। আইএমএফ এর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অক্টোবরের শেষে ঢাকায় আসেন।
দুই সপ্তাহ সরকারে বিভিন্ন দপ্তর, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের পর ঋণের বিষয়ে প্রাথমিক সমঝোতার কথা জানানো হয় সরকারের তরফ থেকে। খবর বিডিনিউজের
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ৯ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আইএমএফ সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি। এই অর্থ বাংলাদেশ পাবে সাত কিস্তিতে। সব ঠিক থাকলে ফেব্রæয়ারিতেই প্রথম কিস্তির ৩৫২ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ডলার তারা ছাড়তে পারে। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী শেষ কিস্তি বাংলাদেশ হাতে পাবে ২০২৬ সালে। সুদের হার হবে ২.২ শতাংশ।
আইএমএফ কর্মকর্তা রাহুল আনন্দ তখন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করে আইএমএফের নির্বাহী পরিষদে উপস্থাপন করবেন। সকল আনুষ্ঠানিকতা সেরে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে আইএমএফ বোর্ড এ ঋণ প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে পারে।
সব ঠিক থাকলে ৪২ মাসের চুক্তিতে সরকারের নেওয়া ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচিতে’ সহায়তা হিসেবে আইএমএফের এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) এবং এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি থেকে ৩২০ কোটি ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় পাবে বাকি ১৩০ কোটি ডলার।
তবে ঋণের শর্ত নিয়ে কোনো পক্ষই তখন স্পষ্ট কিছু জানায়নি। সাংবাদিকদের প্রশ্নে রাহুল আনন্দ বলেছিলেন, আইএমএফ এর ঋণ পেলে অন্যান্য বৈশ্বিক উৎস থেকে ঋণ পাওয়া বাংলাদেশের জন্য সহজ হবে। তার পরামর্শ ছিল, প্রবৃদ্ধির চাকাকে আরও গতিশীল করার জন্য কাঠামোগত সমস্যাগুলোতে নজর দিতে হবে, সেই সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণ, উৎপাদন সুসংহত করা এবং জলবায়ু সহি‘ুতা গড়ে তুলতে হবে।
বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে রাহুল আনন্দ বলেছিলেন, মহামারির সময়ে শুধু ব্যাংকিং চ্যানেল খোলা থাকায় বাংলাদেশে রেমিটেন্স বেশি এসেছিল। সেই গতি ধরে রাখতে হলে সরকারি উদ্যোগ বাড়াতে হবে।
রেমিটেন্স বাড়াতে সরকারও ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, যার মধ্যে হুন্ডি বন্ধের কিছু উদ্যোগও রয়েছে। অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ লেনদেনে জড়িত থাকার অভিযোগে মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবার কয়েকশ এজেন্টের হিসাব সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।