৪ বছর ধরেই জিপিএ-৫ কমছে

51

গত ৪ বছর ধরে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ক্রমান্বয়ে কমছে জিপিএ- ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। প্রতিবছর পাঠ্যক্রমে নতুন সংযোজন ও রচনামূলক প্রশ্নের মান বৃদ্ধির কারণে এমনটা হচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। এবারে ৩ হাজার ৭৪১ জন ছাত্রী ও ৩ হাজার ৬৫২ জন ছাত্র মিলিয়ে মোট ৭ হাজার ৩৯৩ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। যা গত চার বছরের তুলনায় সর্বনিম্ন!
গতকাল ফলাফল ঘোষণার সময় শিক্ষাবোর্ডের পর্যালোচনা থেকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. মাহবুব হাসান বলেন, বাংলা, গণিত, ফিন্যান্স ও ব্যাংকি এবং বিজ্ঞানের মতো বিষয়ে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা কমে গেছে। এজন্য জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা গতবারের চেয়ে ৭০১ জন কম হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ফল ভালো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ৪ বছরের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৬ সালে ৮ হাজার ৫০২ জন, ২০১৭ সালে ৮ হাজার ৩৪৪ জন, ২০১৮ সালে ৮ হাজার ৯৪ জন এবং ২০১৯ সালে ৭ হাজার ৩৯৩ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত দাস বলেন, সৃজনশীল পদ্ধতি প্রায় প্রতিবছরই ‘আপডেট’ করা হচ্ছে। যেটা এর অন্যতম কারণ। কেননা গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন এসব বিষয়ে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সেসব বিষয়গুলো পুরোপুরি নিতে পারছে না। তাছাড়া গ্রামাঞ্চলে প্রচুর দক্ষ শিক্ষকের অভার রয়েছে। শিক্ষকরা নিয়মমাফিক খাতা মূল্যায়ন করছেন ঠিকই। কিন্তু ছাত্ররা সৃজনশীলের নম্বর অর্জনের ধাপগুলো বুঝতে সক্ষম হচ্ছে না। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি ‘গ্যাপ’ থেকে যাচ্ছে, যার কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে দাবি করেন এই প্রধান শিক্ষক।
শিক্ষাবিদ ড. আনোয়ারা আলম পূর্বদেশকে বলেছেন, গত ৪ বছর ধরে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। ব্যাপারটা সত্য হলেও যথেষ্ট দুঃখজনক। কেননা আমাদের শিক্ষার্থীদের গিনিপিক বানানো হচ্ছে। প্রতি বছর নতুন নতুন পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হচ্ছে। আমরা প্রতিবছরই শিক্ষার্থীদের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছি। ফলে শিক্ষার্থীরা যেমন চাপ নিতে পারছে না, তেমনি শিক্ষকরাও খাতা মূল্যায়ণে দ্বিধায় ভুগছেন। আমাদের হাতে ২০১০ শিক্ষানীতি রয়েছে। যা এক কথায় অসাধারণ উপহার আমাদের জন্য। কিন্তু আমরা সেটার পূর্ণ বাস্তবায়ন না করে প্রতিবছরই নতুন সংযোজন করছি। যার কারণে শিক্ষার মান তো বাড়ছে না বরং শিক্ষার্থীদের উপর মানসিক অস্থিরতা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর এ কারণেই আমাদের এমন ফলাফল দেখতে হচ্ছে। এছাড়াও পরীক্ষায় কমানো হয়েছে নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্ন আর বাড়ানো হয়েছে রচনামূলক প্রশ্ন। যেটাও চরমভাবে প্রভাব ফেলেছে শিক্ষার্থীদের উপর।