৪৬৭ কিলোমিটার সড়কে বসছে এলইডি বাতি

89

ধবধবে সাদা আলো, বিদ্যুৎ ও জনবল সাশ্রয় করে এলইডি বাতি। তাই আগের সোডিয়াম ও সিএফএল টিউবলাইট থেকে সরে এসে সড়কে এলইডি বাতি ব্যবহার করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। ১৫০ কিলোমিটার সড়কে এলইডি বাতি লাগানো শেষ হয়েছে। এছাড়া ভারত সরকারের অর্থায়নে আরও ৪৬৭ কিলোমিটার সড়কে বসানো হবে এ বাতি। আগামী দুই বছরের মধ্যে ৬১৭ কিলোমিটার সড়কজুড়ে রাতের আঁধার ছাড়িয়ে ধবধবে সাদা আলো দিবে এলইডি বাতি।
সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, নগরীতে মোট ১ হাজার ৪৩ কিলোমিটার সড়কে বাতি রয়েছে। এরমধ্যে সোডিয়াম বাতি রয়েছে ৮শ ৯০ কিলোমিটার। সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ও জাইকার অর্থায়নে এলইডি বাতি রয়েছে ১৫০ কিলোমিটার। এদিকে অনুমোদিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৪৬৭ কিলোমিটার সড়কে সোডিয়াম বাতির বদলে বসানো হবে এলইডি বাতি।তবে ওই সরানো সোডিয়াম বাতিগুলো নগরীর অবশিষ্ট সড়ক ও নতুন আবাসিকে সংযোজন করা হবে। ফলে নগরীর সবক’টি সড়কে বসবে বাতি। এমনটায় মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, জাইকার অর্থায়নে ৭৫ দশমিক ১৯ কিলোমিটার সড়কে এলইডি বাতি লাগানো প্রায় শেষের দিকে। এ সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে জানান দায়িত্বরত প্রকৌশলী। এতে মোট খরচ হচ্ছে ৪১ কোটি টাকা। এলইডি বাতি লাগানো বিভিন্ন সড়ক পরিদর্শনকালে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে নগরীতে মূলত আলোকায়ন ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করে এবং এই দায়িত্ব পালনের জন্যই নগরবাসী কর প্রদান করে। এই দুটি খাতের সফলতার উপরই নির্ভর করে চসিকের সক্ষমতা। তাই এই দু’টি খাতকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়। নগরীর সড়ক আলোকায়ন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পর্যাপ্ত আলোকায়নের অভাব বা রাতে সড়ক অন্ধকারে ডুবে থাকলে নগরবাসীর দুর্ভোগ বাড়ে এবং অপরাধ প্রবণতা ও দুর্ঘটনাও বাড়ে। তাই এই ক্ষেত্রে কোন শিথিলতার অবকাশ নেই। তিনি আরো বলেন, আমি আলোকিত নগরী চাই, এ জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করি।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৯ জুলাই অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায় চসিকের ২৬১ কোটি টাকার এলইডি বাতি প্রকল্প। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শুরু করা যায়নি। কেননা ভারত সরকারের অর্থায়নে হওয়ায় কাগুজে জটিলতায় সময় লেগেছে বেশি। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির ১৮ মাস মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তা অনুমোদনের পথে বলে জানা গেছে। অনুমোদন হয়ে গেলে দুইমাসের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হবে এবং নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে বাতি লাগানোর কাজ শেষ হবে। পূর্বদেশকে এমনটা জানিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) ঝুলন কুমার দাশ।
২৬১ কোটি টাকার প্রকল্পে যা থাকবে :
‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকার সড়ক আলোকায়ন ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন কাজ’ শীর্ষক এ প্রকল্পের আওতায় ৪০, ৬০, ৯০, ১০০ ও ২৫০ ওয়াটের ২০ হাজার ৬০০টি এলইডি বাতি এবং ২০ হাজার ২৬৭টি জিআই পোল বসানো হবে। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬০ কোটি ৮৯ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকার (প্রায় ২৬১ কোটি) টাকা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের গৃহীত এ প্রকল্পের আওতায় ৪১ ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ১০ কিলোমিটারে এলইডি লাইট লাগানো হবে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে বৈদেশিক ঋণ সহায়তা ও সরকারের নিজস্ব অর্থ দিয়ে। যার মধ্যে ভারত সরকার ঋণ দিচ্ছে ২১৪ কোটি ৪৬ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা (প্রকল্প ব্যয়ের ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ) এবং জিওবি থেকে ৪৬ কোটি ৪৩ লক্ষ ৫ হাজার টাকা (১৭ দশমিক ২০ শতাংশ )।
নগরীর আলোকায়নে প্রায় ৫১ হাজার ৫৭৩টি সোডিয়াম বাতি রয়েছে। বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির ও সামাজিক সংগঠন কার্যালয়ের ১ হাজার ৫৩৪টি সুইচিং পয়েন্ট থেকে এই বাতিগুলো ‘অন-অফ’ করা হত। এ কাজে প্রত্যেক পয়েন্টে নিয়োজিত আছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের একজন করে মোট ১ হাজার ৫৩৪ জন ইমাম, মুয়াজ্জিন ও পুরোহিত। তাঁদের প্রত্যেককে ২ হাজার ৫শ টাকা করে সম্মানি প্রদান করে আসছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সুইচ কমে আসবে প্রায় ৫০০টি। ফলে সিটি কর্পোরেশনের অর্থ সাশ্রয় হবে বছরে সাড়ে ১২ লাখ টাকা।
জানা গেছে, স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে বাতিগুলোর সুইচ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যার জন্য স্থাপন করা হবে ৪টি কেন্দ্রীয় সার্ভার স্টেশন। যেখান থেকে সহজেই ‘অন-অফ’ ও কমানো-বাড়ানো যাবে। এছাড়াও প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরবর্তী পাঁচবছর পর্যন্ত সকল ধরনের ব্যবস্থাপনা খরচ বহন করবে বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।