৩ ম্যাচ নিষিদ্ধ হলেন সাকিব

20

 

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টির ম্যাচে মাঠে বিতর্কিত আচরণের জন্য নিষিদ্ধ হলেন সাকিব আল হাসান। প্রতিযোগিতাটিতে মোহামেডানের পরের তিন ম্যাচে খেলা হবে না বাঁহাতি এই অলরাউন্ডারের। ঘটনার পরদিন গতকাল শনিবার ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিস- সিসিডিএমের প্রধান কাজী ইনাম আহমেদ আচরণবিধি ভাঙায় মোহামেডান অধিনায়ককে তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ করার কথা জানান। সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে তাকে।
বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসানের গুলশানের বাসার নিচে এক সংবাদ সম্মেলনে কাজী ইনাম জানান, আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারির রিপোর্টের ভিত্তিতে এই শাস্তি পেয়েছেন সাকিব। এখানে দু’টি অভিযোগ ছিল। প্রথমটা হচ্ছে সাকিব লাথি মেরে উইকেট ভেঙে দিয়েছিলেন, যেটা আপনারাও দেখেছেন। আরেকটা হচ্ছে ৫ ওভার ৫ বল করার পর যখন আম্পায়ার কাভারের জন্য গ্রাউন্ডসম্যানদের ডেকেছিলেন তখন সাকিব গিয়ে উইকেট তুলে ফেলে দেন। আমরা রিপোর্ট দেখেছি। দুটি লেভেল থ্রি অফেন্সের জন্য তাকে তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই বিষয়টি এখানেই শেষ’।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে গত শুক্রবার দুপুরে আবাহনী লিমিটেডের বিপক্ষে ম্যাচে তিন দফায় বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দেন সাকিব। প্রথমবার লাথি মারেন স্টাম্পে, একটু পর তিন স্টাম্প তুলে আছাড় মারেন। পরে মাঠ ছেড়ে যাওয়ার সময় অশালীন ভঙ্গি করেন আবাহনীর ড্রেসিং রুম বা গ্যালারির দিকে। সে সময় তিনি ও আবাহনী কোচ খালেদ মাহমুদ তেড়ে যান পরস্পরের দিকে।
তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ওই দিনই বিকেলে ফেসবুকে লিখিত বক্তব্যে সাকিব এই কান্ডের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ‘মানবিক ভুলের’ জন্য ক্ষমা চান।
ঘটনার সূত্রপাত আবাহনীর রান তাড়ার পঞ্চম ওভারে। ১৪৬ রান তাড়ায় সাকিবের প্রথম ওভারে টানা দুই বলে ছক্কা-চার মারেন আবাহনী অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ওই ওভারের শেষ বলে মুশফিকের প্যাডে লাগে বল। বোলার সাকিব আম্পায়ারের দিকে তাকিয়ে আবেদন করার দুই-তিন সেকেন্ডের মধ্যেই এগিয়ে বাঁ পায়ে লাথি মারেন স্টাম্পে। আম্পায়ার ইমরান পারভেজের সঙ্গে ক্ষীপ্ত ভঙ্গিতে কথা বলতেও দেখা যায় তাকে। এই পর্ব চলে বেশ কিছুক্ষণ।
পরের ওভারের পঞ্চম বলের পর বৃষ্টি শুরু হলে মাঠকর্মীদের দিকে ইশারায় কাভার আনতে বলেন আম্পায়ার মাহফুজুর রহমান। সাকিব তখন আবার আম্পায়ারের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলতে থাকেন কিছু একটা। এরপর হুট করেই তিনটি স্টাম্পই তুলে আছাড় মারেন মাটিতে।
এবারও আম্পায়ারের সঙ্গে তর্ক হয় তার। এবার এক পর্যায়ে গিয়ে উপড়ে ফেলা স্টাম্পের একটি নিয়ে উল্টো করে আবার মাটিতে পোঁতার চেষ্টা করতে দেখা যায় তাকে।
মাঠে উত্তপ্ত পরিস্থিতির শেষ পর্ব সাকিবরা মাঠ ছাড়ার সময়। আবাহনীর ড্রেসিং রুম বা গ্যালারির দিকে অশালীন ভঙ্গি করেন তিনি। এসময় আবাহনীর ড্রেসিং রুমের বাইরে থেকে তার দিকে কিছু বলতে বলতে এগিয়ে যান কোচ খালেদ মাহমুদ। তেড়ে যান সাকিবও। মোহামেডানের ক্রিকেটারদের কয়েকজন তখন থামান সাকিবকে। মাঠ ছাড়ার সময় মোহামেডানেরই শামসুর রহমান দৌড়ে আবাহনীর ড্রেসিং রুমের দিকে গিয়ে থামান খালেদ মাহমুদকে।
বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে শেষ পর্যন্ত সাকিবের মোহামেডান জেতে ৩১ রানে। খবর বিডিনিউজের
নেপথ্যের কারণ জানতে চান বিসিবি প্রধান :
অন্যদিকে ঘটনাটির সূত্র ধরে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পুরো চিত্রটা জানতে চেয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সেজন্য পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছেন বিসিবি প্রধান। যাদের মাধ্যমে তিনি বুঝতে চান, সাকিবের আচরণের নেপথ্যের কারণ।
বিসিবি সভাপতির বাসভবনের নিচে গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিসিডিএমের চেয়ারম্যান কাজী ইনাম আহমেদ জানান, সুযোগ-সুবিধা এতো বাড়ানোর পরও এমন ঘটনা কেন ঘটল জানতে চান নাজমুল হাসান পাপন। বোর্ড সভাপতি আমাদের ডেকেছিলেন। আমি ও জালাল ইউনুস ভাই উনার সঙ্গে কথা বলেছি। উনি পুরো বিষয়টা জানতে চেয়েছেন কি হয়েছে। এ নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। উনি জানতে চেয়েছেন, এই ঘটনার মূল কারণটা কি। (সাকিব) কেন এমন করল, সেটা উনি জানতে চান।
তদন্ত কমিটিতে কাজী ইনাম, জালাল ইউনুসের সঙ্গে আছেন বিসিবি পরিচালক নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও শেখ সোহেল এবং বিসিবির প্রধান ম্যাচ রেফারি রকিবুল হাসান।
সিসিডিএম প্রধান জানান, আগামি দুই দিনের মধ্যে সবার সঙ্গে কথা বলে বোর্ড সভায় পরিষ্কার একটা চিত্র তুলে ধরবেন তারা। সামনে তিন দিন পর আমাদের বোর্ড মিটিং আছে। উনি বলেছেন এর আগে তদন্ত করার জন্য। আমরা সব ক্লাবের ম্যানেজার ও অধিনায়কদের সঙ্গে বসব আগামি দুই দিনের মধ্য। তাদের সঙ্গে কথা বলব এবং এই ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের খেলার কোনো ঘটনা নিয়ে, কোনো ইস্যু নিয়ে, কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের যদি কোনো আপত্তি থাকে, কোনো পয়েন্ট থাকে আমরা শুনব।
কাজী ইনাম জানান, এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে লিগ চালানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিসিবি প্রধান। ‘উনার কথা হচ্ছে, আমরা ভালোভাবে লিগ চালাতে চাই। এই সময়ে অনেক খেলোয়াড় অনুরোধ করেছিল, লিগটা হতে হবে। আমরা সুন্দর করে লিগটা করছি। আমাদের খেলাগুলো কিন্তু পিচভিশনে লাইভ দেখানো হচ্ছে। সেখানে স্ট্রেট ভিউ আছে। অনেক উন্নতি হয়েছে। উনি প্রশ্ন করেছেন, এতো আয়োজনের পর এমন হলে লিগ চালানোর দরকার কি?’- বলে ইনাম আহমেদ।
তিনি আরো জানান, বোর্ড সভাপতি এই বিষয়ে অত্যন্ত সিরিয়াস। এই জন্যই আজকে আমি এসেছি এখানে। উনার সঙ্গে দেখা করেছি। উনি এটার বিস্তারিত একটা প্রতিবেদন চান, এর তদন্ত চান। জানতে চান, আমরা এতো যত্ন নিয়ে এই লিগগুলো চালাচ্ছি তাহলে কেন এমন হচ্ছে। আমরা এটা নিয়ে বসব, সবার সঙ্গে আলাপ করব। আমাদের প্রতিবেদন তৈরি করব। যার ভিত্তিতে ১৫ তারিখের বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হবে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে।