৩ মেয়াদে ৯ কৌশল পাল্টে যাবে পাউবো

39

রাহুল দাশ নয়ন

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ভালোভাবেই পড়েছে। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর সাজানো সব পরিকল্পনা তছনছ করে দিচ্ছে। যে কারণে প্রযুক্তিতে স্বয়ংক্রিয়করণ এবং তথ্য আদান-প্রদানে প্রচলন বাড়াতে আগেভাগেই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে দেশের পানি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। ২০৪১ সালের মধ্যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্বল্পমেয়াদ, মধ্যমেয়াদ ও দীর্ঘমেয়াদে ৯টি কৌশল নির্ধারণ করেছে পাউবো। এরমধ্যে আগামি সাত বছরের মধ্যেই প্রথম দুই মেয়াদে সেচ, উপক‚লীয় পোল্ডার, পানি বিজ্ঞান, আন্তঃদেশীয় পানি প্রবাহ, জমি সংক্রান্ত তথ্য সম্পূর্ণভাবে অটোমেশনের আওতায় আনতে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম চৌবে বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের ই-গভন্যান্স ও উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তিন মেয়াদে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। কর্মপরিকল্পনায় যে ৯টি কৌশলকে বিষয়বস্তু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো সম্পূর্ণরুপে অটোমেশনের আওতায় আনা সম্ভব হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রমে আরো বেশি গতি বাড়বে’।
পাউবো সূত্র জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ কার্যক্রম অটোমেশনে গেটগুলোতে সোলার পাওয়ারচালিত ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি) ডিভাইস বসিয়ে সফটওয়ারের মাধ্যমে পানির প্রবাহমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে পানির অপচয় রোধ এবং সেচ সুবিধার আওতাধীন এলাকার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে। আগামি এক বছরের মধ্যে পাইলটিং হিসেবে একটি প্রকল্প এলাকার গেট অটোমেশনের আওতায় আনা হবে। পরবর্তীতে পাউবোর আওতাধীন সকল সেচ প্রকল্প এলাকার গেটগুলোর অটোমেশনের আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি সেচের আওতায় থাকা ক্ষেতের মাটিতে ময়েশ্চার পরিমাপের ডিভাইস বসানো এবং পানি অপচয় বন্ধে সেই তথ্যের সাথে আগামি বৃষ্টিপাতের তথ্যের সমন্বয়ে সেচের পানি ছাড়ার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও সেচের পানি কী পরিমাণ দেওয়া হলো, কী পরিমাণ পানি রিজার্ভ আছে, কী পরিমাণ এলাকায় আরও পানি দেওয়া সম্ভব এসব বিষয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
উপক‚লীয় যেসব পোল্ডার আছে সেগুলো অটোমেশনের আওতায় আনার পাশাপাশি মনিটরিংয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। উপক‚লীয় অঞ্চলে যেসব পোল্ডার আছে সেগুলো জোয়ার ও বন্যার পানিতে ভেঙ্গে যায় এবং এলাকা প্লাবিত হয়। সেসব পোল্ডারকে কার্যকর পদ্ধতিতে রক্ষণাবেক্ষণ ও নাম্বারিং করা হবে। পোল্ডারগুলো গুগল ম্যাপে দেখানো, পোল্ডারের বর্তমান অবস্থা, পোল্ডের সামনে ফ্লাডিং এলাকায় পানির পরিমাণ মাপতে আইওটি ডিভাইস বসানো এবং মনিটরিং করা হবে।
পানি বিজ্ঞান সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি একত্রিকরণ ও বিশ্লেষণ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে গেজ রিডিং অটোমেশন, পানি বিজ্ঞান সংক্রান্ত তথ্যাদি সংগ্রকে পরিমাণগত তথ্যের পাশাপাশি গুনগত তথ্য সংগ্রহ, পানি বিজ্ঞান সংক্রান্ত তথ্যাদি বিশ্লেষন উন্নয়নে এ দপ্তর কাজ করবে। এজন্য আগামী বছরের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ২০০টি গেজ রিডিং (বিপদসীমা পরিমাপ যন্ত্র) পদ্ধতির অটোমেশন বসানো হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫০০টি গেজ রিডিং বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন নদীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলিতে কী পরিমাণ বালি পাস হচ্ছে তা নির্ণয় করে ড্রেজিং করা এবং পানি বিজ্ঞান সংক্রান্ত তথ্যাদি হতে প্রাপ্ত ডেটা সংরক্ষণে পূর্ণাঙ্গ সাপোর্ট সিস্টেম বানানোর উদ্যোগ নিতে প্রস্তাবনা করা হয়েছে।
তিস্তা ব্যারেজের উপরের অংশে আন্তঃদেশীয় সীমান্তের নিকটে পানির লেভেল এবং গতি পরিমাপের জন্য আইওটি ডিভাইস বসানো হলে ক্ষতির পরিমাণ কমে যাবে। এছাড়াও সুনামগঞ্জ তথা হাওর অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের ফলে যে বন্যা হয় আন্তর্জাতিক তথ্যভান্ডারের সাথে সমন্বয় করে সেটির তথ্য সংগ্রহে উন্নয়ন কার্যক্রম করলে আন্তঃদেশীয় পানি প্রবাহের তথ্যাদি সংগ্রহ এবং ঢল/বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সতর্ক বার্তা পেতে সহায়ক হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের যেসব জমি আছে তার তথ্যাদি সংরক্ষণ ও অটোমেশনে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভ‚মি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন চালু করতে যাচ্ছে। এজন্য আগামি এক বছরের মধ্যে সকল জমির তথ্য সংগ্রহ ও পরবর্তীতে জমি সংক্রান্ত তথ্য আপডেট ক্লাউডে নিয়ে আসা ও অটোমেশনে আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (রাঙামাটি বিভাগ) তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপকূলীয় এলাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ড এসব এলাকা রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতিদিনই পানির উচ্চতা বাড়ছে। যে কারণে আগেভাগে কিছু পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তিন মেয়াদে ২০২৩ সাল থেকে ২০৪১ সালের মধ্যেই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। অটোমেশনের আওতায় এনেই সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে বিশ্বে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যে কথা বলা হচ্ছে তার চ্যালেঞ্জ সহজেই আমরা মোকাবেলা করতে পারবো’।