৩৬০০ জনকে আসামি করে দুই মামলা

23

বাঁশখালীর গন্ডামারায় নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে পুলিশের গুলিতে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় দু’টি মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ ও প্রকল্প কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পৃথক মামলা দু’টি করা হয়েছে। দু’টি মামলায় এজহার নামীয় ও অজ্ঞাত মিলিয়ে ৩ হাজার ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার দিন গত শনিবার রাতে মামলাগুলো দায়ের করা হয়। দু’টি মামলা তদন্তে বাঁশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন এস আলমের হয়ে প্রকল্পের চীফ কোর্ডিনেটর ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে ২২ নামীয় ও ১ হাজার ৫০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি এবং বাঁশখালী থানার পুলিশ উপপরিদর্শক (এসআই) রাশেদুজ্জামান বেগ বাদী হয়ে দুই থেকে আড়াই হাজার জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রকল্পের পক্ষে করা মামলাটি প্রকল্পে মালামালে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় করা হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশের পক্ষে করা মামলাটি পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় করা হয়েছে।
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিউল কবীর বলেন, গত শনিবার ঘটনায় ১০ কোটি টাকার মালামাল প্রকল্প এলাকা থেকে লুট করা হয়েছে। এছাড়া অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরো ১৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যে কারণে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি ও প্রকল্প কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আরেকটি মামলা করা হয়েছে। পুলিশের দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়েছে। প্রকল্পের পক্ষ থেকে করা মামলায় ২২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে ২২ জন আসামির নাম এখনই বলা যাচ্ছে না।
জানা যায়, গতকালকেই ময়নাতদন্ত শেষে পাঁচ শ্রমিকের লাশ বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এস আলমের পক্ষ থেকে প্রতিজন নিহতের পরিবারকে তিন লক্ষ টাকা ও অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও ১৫ জন আহতকে ৫০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ প্রকল্পের সমন্বয়কারী আদিল বিল্লাহ পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে প্রশাসনের উপস্থিতিতে প্রতিজন নিহতের পরিবারকে তিন লক্ষ টাকা করে দিয়েছি। পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দিয়েছি। অসুস্থ ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হয়েছে’।
এদিকে নিহত পাঁচজনের মধ্যে মাহমুদ রেজা (১৯) বাড়ি বাঁশখালীর গন্ডামারায়। দাফনের জন্য তার লাশ গতকাল বিকালে গন্ডামারার পূর্ব বড়ঘোনা নেয়া হয়। তার বাড়ির পাশে পূর্ব বড়ঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় প্রচুর লোক সমাগম ঘটে। নিহত রেজার পরিবার জানায়, তারা তিনভাই তিন বোন। মারা যাওয়া রেজা সবার ছোট। দশদিন পূর্বে সে কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রে রাজমিস্ত্রী হিসেবে যোগ দেয়। সে চাম্বল বাংলাবাজার শাহ আহমদ দাখিল মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার্থী ছিলো।
উল্লেখ্য, গত শনিবার নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ জন নিহত হন। আহত হন ২১জন। এদের মধ্যে ছয় জন পুলিশ আহত রয়েছেন। এর আগে ২০১৬ সালে ৪ এপ্রিল বাঁশখালীতে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিরোধী ঘটনায় ৪ জন, ২০১৭ সালের ফেব্রূয়ারিতে একজন নিহত হয়। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত এই কয়লাবিদ্যুৎ নির্মাণ করতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতায় ১০ জন নিহত হয়েছেন।