৩০ ডিসেম্বর দেশের জনগণ জয়ী হবে

40

প্রার্থীদের উপর হামলা, নেতাকর্মী-সমর্থকদের নামে একের পর এক মামলা, প্রার্থীদের জেলে রাখা সবই সরকারের ‘নির্বাচনী প্রকল্পের’ অংশ বলে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম-১১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় মেহেদীবাগস্থ নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় তিনি বলেন, তাদের পরিকল্পনায় আছে ব্যালট পেপার, পেট্রোল বোমা নিয়ে গল্প বানাবে। আমাদের একজন প্রার্থীর গাড়িতে পেট্রোল বোমা ও পুরাতন পাইপগান রেখে নাটক সাজিয়েছে প্রশাসন। তারা প্রতিদিন গ্রেপ্তার করছে, তান্ডব চালাচ্ছে। নির্বাচনের আগে প্রার্থী জেলে গেছে, নির্বাচনী প্রচারণার পরও প্রার্থী আবার জেলে গেছে, এখনো যাচ্ছে। আদালতের মাধ্যমে রায় দিয়ে প্রার্থিতা বাতিল করা হচ্ছে। কে প্রার্থী অনেক আসনে আমরা তাও শিউর হতে পারছি না। এ ধরনের খেলাধুলার মাধ্যমে সরকার যে একটা নির্বাচনকালীন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তা বুঝা যাচ্ছে। আমি এ ধরনের কাজকে ‘নির্বাচনী প্রকল্প’ বলছি।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রতিপক্ষ যদি রাজনৈতিক দল হয় তাহলে তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা যায়। প্রতিপক্ষ যখন রাষ্ট্র হয়ে যায়, রাষ্ট্র যখন প্রার্থী হয়ে ভোটে জিততে চায়, রাষ্ট্র যখন জনগণের প্রতিপক্ষ হয়ে নির্বাচনে জিততে চায় তখন দেশের নাগরিকদের কি করার থাকে? রাষ্ট্রকে মোকাবিলার করার সেই ক্ষমতা কি জনগণের আছে? বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতাকমী, মুক্তিকামী মানুষ। সমস্ত বাংলাদেশের মানুষ ১০ বছর পর তাদের ভোটধিকার প্রয়োগ করতে উদগ্রীব হয়ে আছে। প্রায় আড়াই কোটি তরুণ সমাজ ভোট প্রয়োগ করার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে।
তিনি বলেন, এটাকে কোনো রাজনৈতিক নির্বাচন বলা যায় না। রাজনৈতিক নির্বাচন দু’টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে হয়। এটিতো রাজনৈতিক নির্বাচনের মধ্যে পড়ে না। তবে আমি আশাবাদী এই দেশের ১০ কোটি ভোটার তাদের ভোটধিকার প্রয়োগ করবে। আমি বিশ্বাস করি তরুণ সমাজ উদ্যোমী হয়ে ভোট দিবে। বাংলাদেশের মানুষ যখন ঐক্যবদ্ধ হয় তখন তারা তাদের গণতন্ত্রের দাবিতে, মানবাধিকারের দাবিতে, আইনের শাসনের দাবিতে, মৌলিক অধিকারের দাবিতে যখনই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তখনই জয়ী হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি ৩০ তারিখও বাংলাদেশের জনগণ জয়ী হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনটা এমন এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, মনে হচ্ছে নির্বাচন হচ্ছে সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে। এখানে দু’টি রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে সরকারের সাথে বিরোধী দলের নির্বাচন হচ্ছে। সরকারি সংস্থাগুলো যেভাবে নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে তাতে মনে হচ্ছে সরকারি প্রার্থীর সাথে বিরোধী দলের প্রার্থীর নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনে সরকারি প্রত্যেক সংস্থাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। মনে হচ্ছে সরকার কিছু লোককে মনোনয়ন দিয়েছে আর সকল সরকারি বাহিনী তাদের বিজয়ী করতে মাঠে নেমেছে। সব সরকারি সংস্থা তারা ব্যবহার করছে। দিন দিন এই প্রবণতা বাড়ছে।
খসরু বলেন, এতো বেশি ঘটনাবহুল নির্বাচন বাংলাদেশে আর কখনো হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। আমার জীবদ্দশায় এই রকম ঘটনাবহুল নির্বাচন আমি কখনো দেখিনি। বিরোধী দলের প্রত্যেক প্রার্থীই প্রেস ক্লাবে গিয়েছে, কেউ আহত হয়ে গিয়েছে, কেউ এলাকার সমস্যাগুলো নিয়ে গিয়েছে। সব বিষয়গুলো আপনারা জানেন। এমন কিছু ঘটছে না যা আপনারা জানেন না। যারা ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা যে খুব বেশি লজ্জা-শরম পাচ্ছে তাও কিন্তু নয়। তারা খুব নির্লজ্জভাবেই কাজগুলো করছে।
হয়রানির বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে হানা দিচ্ছে, গ্রেপ্তার করছে। এখন দেখা যাচ্ছে তাদের সাথে অন্যান্য সংস্থাও যোগ দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের নির্বাচনী কার্যক্রম চালানো অনেক কঠিন হয়ে পড়ছে। গ্রেপ্তারের তালিকায় প্রথমে বিএনপির নেতাকর্মী ছিলো তারপর যারা আগামী নির্বাচনে এজেন্ট হবে তাদের এবং এখন সমর্থকদের গ্রেপ্তার করছে। তারপর এখন প্রার্থীর উপর হামলা করছে। অনেক প্রার্থী সরাসরি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি, অনেকে বাড়িতে বন্দী অবস্থায় আছেন।
হয়রানির বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে গাড়িতে পেট্রোল বোমা, পাইপগান রেখে নাটক সাজাচ্ছে। অনেকে প্রার্থীর ড্রাইভারকে জাল নোট দিয়ে মামলা সাজাচ্ছে। এসব পেট্রোল বোমা, পাইপগান ও জাল নোট সরকারের কাছেই রয়েছে। এখন আবার টাকা ছাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। টাকাতো সরকারের কাছেই রয়েছে। সরকারি লোকজনের টাকা সুইসব্যাংকে রয়েছে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যাংকে তাদের টাকা রয়েছে। বিরোধী দলের কাছে টাকা কোথা থেকে থাকবে। টাকাগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে রয়েছে। এই টাকাগুলো কাদের তা সকলেই জানে। আবার বলা হচ্ছে বিরোধী দল ব্যালট পেপার ছাপাচ্ছে। ব্যালট পেপারতো সরকারি প্রেসে ছাপানো হয়। এটা বিরোধী দলের ছাপানোর কোনও সুযোগ নেই। সরকারের এই সব কথায় মনে সন্দেহ জাগে তাদের কোনো পরিকল্পনা আছে।
পুলিশি হয়রানির উদাহারণ টেনে তিনি বলেন, আমাদের ২৭ নং ওয়ার্ডের কর্মী সাদ্দামের বাড়িতে গিয়ে এমন তান্ডব চালিয়েছে যে তার মা হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। এর কয়েকদিন আগে জেলে যাওয়ার সময় আরেকজনের মা মারা গেছে। আমাদের আরেকজন কর্মী পুলিশের তাড়া খেয়ে ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছে। গতকাল আমাদের ৩/৪ জন থানা সভাপতির বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। তাদের গেট ভাঙ্গার চেষ্টা করা হয়েছে। যারা আজ সুরক্ষা দেয়ার কথা তারাই এখন এসব কাজে ব্যবহার হচ্ছে। তাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নাগরিকদের সুরক্ষার, আজ নাগরিকরা তাদের শিকার হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে খসরু বলেন, সেনাবাহিনীর উপর এখনো মানুষের আস্থা আছে। এখনো আমাদের সেনাবাহিনী দেশ বিদেশে যেভাবে দায়িত্ব পালন করছে সেভাবে দায়িত্ব পালন করে এ সংকটময় মুহূর্ত থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে পারেন। সে আস্থা জনগণের মধ্যে আছে।