৩০ জনকে পুড়িয়ে মারা হলো মিয়ানমারে

14

পূর্বদেশ ডেস্ক

মিয়ানমারে নারী ও শিশুসহ ৩০ জনের বেশি মানুষকে গুলি করে মারার পর দেহ পোড়ানো হয়েছে। গত শুক্রবার দেশটির গোলযোগপূর্ণ কায়া রাজ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। ওই অঞ্চলের এক স্থানীয় বাসিন্দা, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং স্থানীয় একটি মানবাধিকার গোষ্ঠীর কাছ থেকে এ খবর জানা গেছে। খবর একটি অনলাইন বার্তা সংস্থার
স্থানীয় কারেনি মানবাধিকার গোষ্ঠী বলেছে, শনিবার তারা হাপ্রুসো শহরের মো সো গ্রামের কাছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর খুন করা বৃদ্ধ, নারী ও শিশুসহ অভ্যন্তরীনভাবে বাস্তূচ্যুত মানুষদের পোড়া মৃতদেহ খুঁজে পেয়েছে।
গোষ্ঠীটি তাদের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলেছে, ‘আমরা এমন অমানবিক ও নৃশংস এ হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানাই; এই ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।’
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে বলেছে, সেনারা ওই গ্রামে বিরোধী সশস্ত্র বাহিনীর বেশ কয়েকজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে গুলি করে হত্যা করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই অস্ত্রধারীরা সাতটি গাড়িতে ছিল। সামরিক বাহিনীর নির্দেশের পরও তারা থামেনি। এ বিষয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং স্থানীয় গণমাধ্যমের শেয়ার করা ছবিতে পোড়া লাশ দেখা গেছে। মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী বেসামরিক মিলিশিয়াদের অন্যতম বড় বাহিনী ‘কারেনি ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স’ বলেছে, নিহতরা তাদের সদস্য নন, বরং সহিংসতা থেকে বাঁচতে আশ্রয়ের খোঁজে থাকা সাধারন মানুষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারেনি ফোর্সের এক কমান্ডার রয়টার্সকে বলেন, ‘নারী-শিশুসহ বিভিন্ন আকৃতির মানুষের মৃতদেহ দেখে আমরা স্তম্ভিত হয়েছি।’
এক গ্রামবাসী বলেন, শুক্রবার রাতে আগুন লাগার বিষয়টি তিনি টের পেয়েছিলেন। কিন্তু গোলাগুলি চলছিল বলে কী হচ্ছে তা দেখতে তিনি ঘটনাস্থলে যেতে পারেননি। ফোনে রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আজ (শনিবার) সকালে ঘটনা দেখতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি পুড়ে যাওয়া মৃতদেহ। শিশু, নারীদের কাপড় চারপাশে ছড়িয়ে আছে।’
গত ১ ফেব্রæয়ারি মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকারকে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক বাহিনী।
এরপর থেকেই দেশটিতে সামরিক জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলে আসছে। গ্রামাঞ্চলের জঙ্গলে জঙ্গলে জান্তার বিরুদ্ধে লড়তে সংগঠিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী। মাঝে মধ্যেই তাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ হচ্ছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের (কেএনইউ) নতুন করে লড়াই শুরু হয় গত সপ্তাহে। সহিংসতার শুরু থেকেই ৪ হাজার ২শ মানুষ পালিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে থাইল্যান্ডে ঢোকে।
থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, মিয়ানমারের কারেন রাজ্যে সাম্প্রতিক সহিংসতা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। এই সহিংসতায় সীমান্ত এলাকায় বাস করা থাই মানুষজনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
থাই কর্তৃপক্ষ শনিবার মিয়ানমার সেনাবাহিনী-বিদ্রোহী সংঘর্ষের জেরে রকেট চালিত একটি গ্রেনেড হামলায় সীমান্তের থাই অংশে একটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছে।