৩য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ শিশুসাহিত্যের ধ্রুবতারা রমজান আলী মামুন

12

সাঈদুল আরেফীন

বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যের ইতিহাস লিখতে গেলে অবশ্যই বলার অপেক্ষা রাখেনা, তেমনি আমাদের চট্টগ্রামের শিশুসাহিত্যের এমন তরুণ সৃষ্টিশীল লেখকদের মধ্যে রমজান আলী মামুন ও একজন ছিলেন। যদি বলি, বিখ্যাতদের পাশাপাশি ধুমকেতুর মতো আবির্ভাব ঘটে যাওয়া কিছু কিছু ক্ষণজন্মা লেখক আমাদের সাহিত্যকে আলোর দ্যুতি ছড়িযে দিয়ে গেছেন নিজেদের মতো করে। তাও অতি অল্প বয়সে। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য, কবি আবুল হাসান সহ এমন বিরল লেখকদের পাঠক এখনো শ্রদ্ধাভরে স্মরন করেন। রমজান আলী মামুন তেমনই আমাদেরই একজন। খ্যাতিমান তো বটেই। শিশুসাহিত্যিকদেরও প্রিয় শিশু সাহিত্যিক আজ আমাদের মাঝে নেই। বিগত তিনটি বছর আগে হুট করে আমাদের মাঝ থেকে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। প্রিয় শিশুসাহিত্যিক রমজান আলী মামুন যে নেই সেই কথাটি আজ আমাদের অনেকেই মানতে পারি না কোনমতে। এখনো মামুন আমাদের ভাবায়। আমাদের কাঁদায় তার প্রতিটি সাহিত্যকর্ম তো বটেই, তার সাংগঠনিক দক্ষতা, সাহিত্যপ্রেম। অনুজ-অগ্রজ লেখক বন্ধুদের নিয়ে তার নিত্যদিনের ভাবনার করিডোরে আজও আমরা অনেকেই হারিয়ে যাই। মামুন এই তিন বছর না থাকলেও আমাদের অন্তরকে ছুঁয়ে ছুয়ে গেছেন প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গী হয়ে। আজ ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ অপরাহ্নের এই দিনে বাংলাদেশের সাহিত্যের আকাশটাকে শোকাচ্ছন্ন করে আমাদের চির সতীর্থ বন্ধু সময়ের আলোচিত কবি ও শিশুসাহিত্যিক রমজান আলী মামুন চির বিদায় নিয়ে যান। মামুন আমাদের মাঝ থেকে চলে গেলেও আমরা তাকে ভুলিনি। কোনদিন ভুলবো না। মামুন মরেও আমাদের মাঝে চিরঞ্জীব হয়ে আছেন সব সময়। মামুনের প্রাণখোলা হাসি এখনো আপ্লুত করে রাখে সাহিত্যের অঙ্গন। মাত্র ৫২ বছর বয়সে কবি রমজান আলী মামুনের এই অকাল মৃুত্যতে বাংলাশিশুসাহিত্যের বিরাট ক্ষতি হয়েছে। সময়ের আগেই চলে যাওয়াতে শিশুসাহিত্যের অঙ্গনে একটা শূণ্যতা রয়েই গেছে। বেঁচে থাকলে আমরা রমজান আলী মামুনের কাছ থেকে আরো অনেক কিছু পেতাম। আজানা অচেনা প্রকৃতি, পৃথিবী, সৌন্দর্য ও জগতের নানা বিষয় তাঁর লেখায় ওঠে আসতো। হয়তো বিধির বিধান এমনটাই ছিলো। রমজান আলী মামুনের মতো চির তরুণ শিশুসাহিত্যিককে এভাবে হারাতাম না।
ছোট্ট জীবনকালে মামুন বেশ কটি শিশুকিশোর সাময়িকী ও পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। সাহিত্য আড্ডা ও সাহিত্য আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন সংগঠক হিসেবে শিশুসাহিত্যিক হিসেবে রমজান আলী মামুনের ছিলো আলাদা ও স্বাতন্ত্র্য ইমেজ। আশির দশক থেকে মামুন লিখছেন অবিরল। শিশু কিশোরদের জন্য দীর্ঘদিন ধর্ েলিখে জনপ্রিয়তা ধন্য কবি রমজান আলী মামুন সাহিত্যের বিভিন্ন শাখাতে ইতোমধ্যে তাঁর পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন। কবি ও ছড়াকার হিসেবে, গল্পকার ও উপন্যাস লিখে শিশু কিশোরদের মধ্যে যথেষ্ট সাড়া জাগিয়েছেন। ছোট বড় মিলিয়ে মামুনের ১৫ টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিলো। শুধু তাই নয় বড়োদের জন্যও লিখতেন মামুন। অনেকগুলো গ্রন্থের পরেও বড়োদের জন্য লিখেন প্রেমের কবিতা ‘তোর জন্য কষ্ট আমার ’

bty

সংগঠক ও শিক্ষানুরাগী হিসেবেও মামুন জীবদ্দশায় প্রচুর সামাজিক কাজ করেছেন। লামাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লামাবাজার এএএস সিটি কর্পোরেশন বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি সম্পন্ন করেন ১৯৮৪ সালে। এসএসসি পাশের পর নগরীর ওমরগণি এম ই এস কলেজে ভর্তি হয়ে পূর্ণোদ্যমে নেমে পড়েন শিশুসাহিত্য চর্চায়। এর পাশাপাশি শিশুসাহিত্যিক তকমাটা গায়ে লাগিয়ে স্থির হয়ে বসেও থাকেননি তিনি। নিজ বাড়ির পাশে পার্ড়াই যুবকণ্ঠ, উত্তরা কিশোর সংঘ, শাপলা কুঁড়ির আসর চট্টগ্রাম মহানগর কমিটিতে সরাসরি জড়িত হন। স্বকাল সাহিত্য পরিষদের সাথে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই প্রত্যক্ষ ভাবেই জড়িত হন। মৃত্যুর পূর্বে পর্যন্ত ছিলেন সাহিত্যও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঐতিহ্য সাংস্কৃতিক ফোরাম’ এর সিনিয়র সহ-সভাপতি, টেরীবাজারস্থ বদরপুকুরপাড় উত্তরপাড় সামাজিক সংগঠন ‘যুবকণ্ঠের’ সভাপতি। ব্যক্তিজীবনে শিক্ষানুরাগী ও সামাজিক সংগঠক তকমাও লাগিয়েছেন গায়ে। মানুষের সেবায় মনোনিবেশ করতেন সার্বক্ষণিকভাবে। যুক্ত ছিলেন ঘাটফরহাদবেগ সরকারি প্রাথমিক বালক বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সদস্য ও শিক্ষক অভিভাবক কমিটির সভাপতি হিসেবে। এককসময়ের জনপ্রিয় কিশোর সাময়িকী ‘কিশোর সমাবেশ’ সম্পাদনা করতেন নিজ উদ্যোগে। এছাড়া আওয়াজ কথন, সাহিত্য সংবাদ সম্পাদনার সাথে জড়িত ছিলেন ওতপ্রোতভাবে। ছিলেন মাসিক আন্দরকিল্লার বিভাগীয় সম্পাদক। সম্পাদনা করতেন মাসিক আন্দরকিল্লার ছোটদের পাতা রোদ্দুর’। মামুনের সম্পাদনায় আবির প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে দু;টি কাব্যগ্রন্থ ‘বনে নয় মনে মোর’ও ‘হৃদপিÐে জোছনা।
বর্তমানে আলোরপাতা সহযোগী সম্পাদক ও কথন এর নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যুক্ত থেকে শিশুসাহিত্যের সেবা করে গেছেন নিররসভাবে। ব্যক্তি জীবনে শিশুসাহিত্যিকরা তো বটেই প্রতিটি মানুষের হৃদয়টা জয় করে গেছেন তিনি। সদালাপী, অমায়িক, সজ্জ্বন বন্ধুবৎসল ও পরোপকারী হিসেবে ওঁর তুলনা নেই। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই-চলো দু’হাত তুলে সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করি-আল্লাহ যেনো তাঁকে মাগফিরাত দিন, বেহেশত নসীব করুন।

লেখক : কবি, শিশুসাহিত্যিক ও কলাম লেখক