২৯ স্বতন্ত্র প্রার্থী ডুবিয়েছে নৌকা

18

রাহুল দাশ নয়ন

সপ্তম ধাপের ইউপি নির্বাচন শেষ। সেই সাথে শেষ হয়েছে চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার ১৬০ ইউপির নির্বাচন। বাকি আছে বাঁশখালীর ১৪ ইউপির নির্বাচন। আইনী জটিলতায় আটকে আছে আরো কয়েকটি ইউপির নির্বাচন। নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া ১৬০টি ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রার্থীরা ২৯ ইউনিয়নে হেরেছে। জয়ী হয়েছে ১৩০ ইউনিয়নে। পাঁচটি করে নৌকার প্রার্থী হেরেছে ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীতে। চারটি করে হেরেছে পটিয়া ও সাতকানিয়ায়। নৌকাকে হারিয়ে বেশিরভাগ ইউপিতে জিতেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করা আওয়ামী লীগ সমর্থক নেতারা। দুটি ইউনিয়নে জিতেছে বিএনপি সমর্থকরা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আল হানিফ বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। অনেক এলাকায় বিএনপি-জামায়াত সরাসরি নির্বাচন না করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছে। আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী পরাজিত হয়নি। শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা হয়েছে।’
জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের মধ্যে শৃঙ্খলা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনে সরকার দলীয় সংগঠনটি নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দলীয় হাইকমান্ডের কড়া নির্দেশনার পরও অধিকাংশ ইউনিয়নেই বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল। যারা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বে আছেন। ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের প্রতি তৃণমূলে আনুগত্য প্রকাশ পায়নি। উল্টো প্রার্থীদের বিরোধীতা করেছেন প্রভাবশালী নেতারা। বেশিরভাগ ইউপিতে ক্ষমতার দাপট দেখিয়েই জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নৌকা। সাধারণ মানুষ যেখানে ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়েছেন সেখানেই স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছে। এতে ভরাডুবি হয়েছে নৌকার।
চট্টগ্রামে গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম ধাপে স›দ্বীপে ১২টি ইউনিয়নে নির্বাচন হয়। সেখানে দুইটিতে দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করে আমানউল্লাহ ইউনিয়নে আনারস প্রতীকে সাইফুল ইসলাম ও আজিমপুরে মো. রকি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় ধাপে ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৩৭ ইউনিয়নের মধ্যে ফটিকছড়িতে পাঁচটিতে বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এরা হলেন বাগানবাজার ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন সাজু, নারায়ণহাট ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু জাফর মাহমুদ, হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরী, পাইন্দং ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএম সরোয়ার হোসেন স্বপন এবং জাফতনগর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়া উদ্দিন জিয়া।
তৃতীয় ধাপে গত ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৪০টি ইউপির মধ্যে সাতটিতে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী পরাজিত হন। এরমধ্যে হাটহাজারীতে পাঁচটি ও রাঙ্গুনিয়ায় দুইজন বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। হাটহাজারী ২নং ধলই ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবুল মনসুর, ৫নং নাঙ্গলমোড়া ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুনুর রশিদ, ৬নং ছিপাতলী ইউপিতে বিএনপির সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল আহসান লাভু, ১৪নং শিকারপুর ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল খালেক, ১৫নং বুড়িশ্চর ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জাহেদ হোসেন, রাঙ্গুনিয়ার লালানগরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রফিকুল ইসলাম তালুকদার, বেতাগী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শফিউল আলম নির্বাচিত হয়েছেন।
চতুর্থ ধাপে গত ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ২৭ ইউপি নির্বাচনে ছয়জন বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। পটিয়ার হাইদগাঁও ইউনিয়নে বদরুদ্দিন মো. জসিম, কুসুমপুরা ইউনিয়নে জাকারিয়া ডালিম, কোলাগাঁও ইউনিয়নে মাহাবুবুল হক, জঙ্গলখাইন ইউনিয়নে মোহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সবুজ নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছে। কর্ণফুলীর শিকলবাহায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম, লোহাগাড়ার চরম্বায় বিদ্রোহী প্রার্থী মৌলভী হেলাল উদ্দিন জয়ী হয়েছেন।
পঞ্চম ধাপে গত ৫জানুয়ারি ২৪ ইউপিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পাঁচজন জয়ী হয়েছেন। আনোয়ারায় রায়পুর ইউনিয়নে আমিন শরীফ, বোয়ালখালী আহলা করলডেঙ্গায় বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হামিদুল হক, চন্দনাইশে কাঞ্চনগর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল শুক্কুর, বরমা ইউনিয়নে খোরশেদ আলম টিটু, বরকল ইউনিয়নে আব্দুর রহিম জয়ী হয়েছেন।
ষষ্ঠ ধাপে শুধুমাত্র আনোয়ারার জুইদন্ডি ইউনিয়নে নির্বাচন হয়। সেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হন। সপ্তম ধাপে সাতকানিয়ার ১৬ ইউনিয়নে নির্বাচন হয়েছে। সেখানে আমিলাইষে বিদ্রোহী প্রার্থী মোজাম্মেল হক চৌধুরী, ঢেমশায় মির্জা আসলাম সরওয়ার রিমন, পশ্চিম ঢেমশায় রিদুয়ানুল ইসলাম সুমন, ছদাহায় মোরশেদুর রহমান নৌকার প্রার্থীদের পরাজিত করে চেয়ারম্যান হয়েছেন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, দলীয় প্রার্থীরা যেখানেই হেরেছেন, সেখানে দলের নেতারা বিরোধিতা করেছেন। নৌকার প্রার্থীর বিরোধীতা করা মানে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে বিরোধিতা করা। আমরা হারের কারণগুলো চিহ্নিত করবো। হারের পেছনে পদে আছে এমন কোন দলীয় নেতার সম্পর্ক খুঁজে পেলে ব্যবস্থা নিব।