২৪ ঘণ্টায় ৫০ জনের মৃত্যু নতুন শনাক্ত ২,৯২৮

39

করোনা ভাইরাসে দেশে আরও ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে; এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৬৮ জনে। একদিনে আরও ২ হাজার ৯২৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ২ লাখ ৭ হাজার ৪৫৩ জন হয়েছে। আইইডিসিআরের ‘অনুমিত’ হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১ হাজার ৯১৪ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত ২৪ ঘণ্টায়। তাতে সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল মোট ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৬ জনে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকাল সোমবারের বুলেটিনে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা এই তথ্য জানান।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ৮ মার্চ, তা ২ লাখ পেরিয়ে যায় শনিবার। এর মধ্যে ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ। আর ১৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ১৭ জুলাই তা আড়াই হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনে রেকর্ড ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়।
নাসিমা সুলতানা বলেন, গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৩৫ জন পুরুষ এবং ১৫ জন নারী। ৪২ জন হাসপাতালে এবং ৮ জন বাড়িতে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে একজনের বয়স ছিল ১০ বছরের কম। ১ জনের বয়স ছিল ৯০ বছরের বেশি। এছাড়া ২ জনের বয়স ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে, ৪ জনের বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে, ২০ জনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে, ৯ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১১ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।
এই ৫০ জনের মধ্যে ২১ জন ঢাকা বিভাগের, ৭ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ১০ জন খুলনা বিভাগের, ৫ জন রাজশাহী বিভাগের, ২ জন বরিশাল বিভাগের, ২ জন রংপুর বিভাগের এবং ৩ জন সিলেট বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
বুলেটিনে জানানো হয়, দেশের ৮০টি পরীক্ষাগারে গত একদিনে ১৩ হাজার ৩৬২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। দেশে এ পর্যন্ত মোট ১০ লাখ ৪১ হাজার ৬৬১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৯১ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। আর শনাক্ত রোগীর সংখ্যার বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ, মৃতের হার ১ দশমিক ২৯ শতাংশ। খবর বিডিনিউজের
জার্মানিকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ :
দুই লাখ কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের মাইলফলক পেরিয়ে যাওয়ার পর সরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যায় ইউরোপের দেশ জার্মানিকেও টপকে গেছে বাংলাদেশ। গতকাল গতকাল সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২ লাখ ৭ হাজার ৪৫৩ জন শনাক্ত রোগী নিয়ে বাংলাদেশ এখন আক্রান্তের সংখ্যায় বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় ১৭তম।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর জানায় আইইডিসিআর। এরপর শনিবারের বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মোট ২ লাখ ২ হাজার ৬৬ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করার কথা জানায়। একদিনে আরও ২ হাজার ৪৫৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় গত রবিবার পর্যন্ত দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ ৪ হাজার ৫২৫ জনে। আর তাতেই জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড-১৯ ড্যাশবোর্ডে বাংলাদেশ আক্রান্তের সংখ্যায় জার্মানিকে টপকে যায়।
জার্মানিতেও করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছিল মার্চ মাসের শুরুতে। সেখানে সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় এপ্রিলের শুরুতে। ২ এপ্রিল এক দিনেই ৬ হাজার ৯০০ রোগী শনাক্ত হয় সেখানে, যা এক দিনের সর্বোচ্চ। এরপর ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে জার্মানিতে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এখন ৫০০ জনের নিচে নেমে এসেছে।
গত রবিবার নতুন করে ৩০৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ায় ইউরোপের দেশটিকে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৯৪৩ জনে। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় আক্রান্তের সংখ্যায় জার্মানির অবস্থান এখন ১৮তম। জার্মানিতে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজার ৯৪ জনের। আর ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭১০ জন ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
আর বাংলাদেশে সরকারি হিসাবে গতকাল সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মারা গেছেন ২ হাজার ৬৬৮ জন; আর ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৬ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
এ পর্যন্ত মোট ২২টি দেশের সরকার এক লাখের বেশি রোগী শনাক্তের তথ্য দিয়েছে। এ তালিকায় সবার উপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে প্রথম রোগী শনাক্তের পর এ পর্যন্ত সেখানে ৩৭ লাখ ৭৩ হাজার ৭২৩ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। লকডাউনের কড়াকড়িতে সংক্রমণের বিস্তার কিছুটা কমে এলেও বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার পর জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা আবার বাড়তে থাকে যুক্তরাষ্ট্রে। গত ১৬ জুলাই সেখানে ৭৭ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ। ২০ লাখ ৯৮ হাজার ৩৮৯ জন শনাক্ত রোগী নিয়ে এই তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। গত ২৬ ফেব্রæয়ারি সেখানে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ লাখ লাখ ছাড়িয়ে যায়। জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহেও দেশটিতে রোগীর সংখ্যা ছিল ১০ লাখের ঘরে। আর জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে এসে এখন তা ২১ লাখ ছুঁই ছুঁই করছে।
এই তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে প্রথম রোগী শনাক্ত হয় ৩০ জানুয়ারি। এখন ভারতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ২০৬ জন। বাংলাদেশের প্রতিবেশী এ দেশটিতে রোগীর সংখ্যা মার্চের শেষ সপ্তাহে ১ হাজার ছাড়ায়। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ছাড়ায় ১ লাখ। জুলাইয়ের ১৮ তারিখ আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়ানোর পর ভারতে সংক্রমণের গ্রাফ এখনও ঊর্ধ্বমুখী। বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল এই দেশটিতে গত রবিবার ৪০ হাজার ৪০০ রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা এক দিনের সর্বোচ্চ।
জনস হপকিন্সের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে থাকা রাশিয়ায় সংক্রমণের প্রথম খবর আসে ৩১ জানুয়ারি। দেশটিতে এখন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৭ লাখ ৭৬ হাজার ২১২ জন। রাশিয়ায় রোগীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছিল মার্চের শেষ সপ্তাহে, আর এপ্রিলের শেষে তা লাখ ছাড়িয়ে যায়। জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়ানোর পর সংক্রমণের গতি কিছুটা ধীর হয়ে এলেও এখন সেখানে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছয় হাজারের বেশি।
মহামারির প্রকোপ দেরিতে শুরু হলেও দক্ষিণ আফ্রিকায় ভাইরাসের বিস্তার বেড়েছে দ্রæত। ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৩২৮ শনাক্ত রোগী নিয়ে দেশটি এখন রয়েছে তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে। গত রবিবারও সেখানে ১৩ হাজার ৪০০ নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
তালিকায় এর পরের তিনটি অবস্থানে রয়েছে লাতিন আমেরিকার তিন দেশ পেরু, মেক্সিকো ও চিলি। তিন দেশেই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩ লখ ৩০ হাজারের বেশি। তালিকার নবম স্থানে থাকা যুক্তরাজ্যে এখন আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৯৬ হাজারের বেশি। পরের দু’টি স্থানে থাকা ইরান ও পাকিস্তানে আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ২ লাখ ৭৬ হাজার ও ২ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি। খবর বিডিনিউজের
পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে বিপর্যস্ত দেশ স্পেন ও ইতালি এখন নেমে এসেছে তালিকার ১২ ও ১৪তম অবস্থানে। স্পেনে ২ লাখ ৬০ হাজার আর ইতালিতে ২ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে এ পর্যন্ত। এ দুই ইউরোপীয় দেশের মাঝে অবস্থান করছে সৌদি আরব, সেখানে শনাক্ত হয়েছে আড়াই লাখের বেশি রোগী।
এক লাখের ঘরে থাকা বাকি দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের উপরে আছে ফ্রান্স ও তুরস্ক। আর বাংলাদেশের পরে আছে জার্মানি, কলোম্বিয়া, আর্জেন্টিনা, কানাডা ও কাতার।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে ভারতে। পাকিস্তান আছে তালিকার ১১ নম্বরে। দক্ষিণ এশিয়ায় এরপরই বাংলাদেশের অবস্থান। এ অঞ্চলে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ভুটান, ৮৯ জন রোগী নিয়ে দেশটির অবস্থান তালিকার ১৯৫ নম্বরে। এছাড়া ২৭২৮ শনাক্ত রোগী নিয়ে শ্রীলঙ্কা ১৩১ নম্বরে, ২৯৬৬ রোগী নিয়ে মালদ্বীপ ১২৮ নম্বরে, ১৭ হাজার ৮৪৪ জন রোগী নিয়ে নেপাল ৮৪তম অবস্থানে এবং আফগানিস্তান ৩৫ হাজার ৫২৬ জন রোগী নিয়ে তালিকার ৭১ নম্বরে রয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে চীনের উহান থেকে নতুন এই করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছিল। নানা কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে এপ্রিলের শুরুতেই চীন পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। চীনে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৮৫ হাজার ৩১৪ জন, তালিকায় দেশটির অবস্থান এখন ৪৮তম।