২২০টি টিনের ঘর পুড়ে ছাই,রহস্যজনক অগ্নিকান্ড, পুড়ে নিহত ৯

86

নগরীর চাক্তাই এলাকার ভেড়া মার্কেট সংলগ্ন বস্তিতে গত শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে রহস্যজনক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ২২০টি টিনের ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ ঘটনায় পুড়ে মারা গেছেন একই পরিবারের ৪ জনসহ ৯ জন। গতকাল রবিবার রাত ১১ টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত অগ্নিকান্ডের কারণ বের করতে পারেনি চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। অগ্নিকান্ডের এ ঘটনাকে রহস্যজনক বলে উল্লেখ করেছেন বস্তি ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে কারণ অনুসন্ধানে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। এছাড়া ৪ সদস্যের আরও একটি তদন্ত কমিটি করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্র জানিয়েছেন, শনিবার রাত ৩টা ৩২ মিনিটে অগ্নিকান্ডের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে ৪টা ১৫ মিনিটে এবং সম্পূর্ণ নির্বাপন হয় সকাল ৮টা ৫ মিনিটে। এতে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিটের ৮৪ জন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্য কাজ করেন।
এছাড়া অগ্নিকান্ডে নিহত ৮ জনের লাশ উদ্ধারের কথা নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন। তাদের মধ্যে ৭ জনের নাম জানা গেলেও ২ জন অজ্ঞাত বলে জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অগ্নিকান্ডের কারণ রহস্যজনক। তারা জানিয়েছেন, ঘটনার রাত ১২টার দিকে কালো পোশাকধারী ৭-৮ জন যুবক কলোনিতে প্রবেশ করেছিল। তাদের কারও মুখে কালো মাস্ক, আবার কারও মুখ কালো রুমাল দিয়ে ঢাকা ছিল। কলোনিতে বহিরাগতদের নিয়মিত আসা যাওয়া থাকায় ওই যুবকদল নিয়ে তেমন কেউ আগ্রহ দেখাননি ওই সময় তারাই গভীর রাতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে।
মুদি দোকানদার বাবুল। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তার দোকানের সবকিছু। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, যেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, সেটা ছিল পাটের বস্তার দোকান। সেখানে আগুন নিভে গেলেও, মুহূর্তেই আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। আধা ঘণ্টা না পেরুতেই পুড়ে ছাই হয়েছে প্রায় ২২০টি ঘর। স্বাভাবিক কোন অগ্নিকান্ড হলে এত তাড়াতাড়ি আগুন ছড়িয়ে পড়া সম্ভব নয় বলে দাবি করেছেন তিনি।
ফরিদ চেয়ারম্যান কলোনির কেয়ারটেকার ছগির মেম্বার বলেন, গত ১৫-১৬ দিন আগে ফায়ার সার্ভিসে কে যেন ফোন করে বলেছে, এ বস্তিতে আগুন লেগেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিন-চারটি গাড়ি চলে আসে। পরে তারা জানতে পেরেছে, কলটিতে ভুয়া তথ্য দেওয়া হয়েছিল। পরে তারা চলে যায়। শনিবার রাতে তাদের আগুনের খবর দিয়ে ফোন করা হলে, আগের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে তারা দেরি করে এসেছে।
ছোটকাল থেকে এ কলোনিতে বড় হয়েছেন রুমা আক্তার। গত ১২ বছর ধরে চেয়ারম্যান কলোনির কেরানির (ভাড়া তোলার দায়িত্ব) কাজ করছেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদেরকে আগুনের খবর দিয়েছেন রহিমা আক্তার। যিনি পরে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। তিনি ডাকার সময় বলেছিলেন, তিনজন ছেলে বস্তিতে আগুন দিয়েছে। সকালে তাদের নাম বলার কথা থাকলেও না বলেই চলে গেছেন রহিমা।
আগুনের কারণ জানতে চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন বলেন, অগ্নিকান্ডের কারণ এখনও জানা যায়নি। খাস জমিতে গড়ে তোলা বস্তির কাঁচা ঘরগুলো খুবই কাছাকাছি ছিল। এছাড়া আশপাশে প্রচুর দাহ্যবস্তু রয়েছে। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে, এর সাথে কোন নাশকতাকারী জড়িত কি-না, তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। এজন্য আমাকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. ইলিয়াস হোসেন পূর্বদেশকে বলেছেন, অগ্নিকান্ডের ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারাই এর কারণ বের করবেন। তদন্ত কমিটিতে জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাশহুদুল কবীরকে আহবায়ক, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ১ জন, ফায়ার সার্ভিসের ১ জন ও স্থানীয় কাউন্সিলর সদস্য হিসেবে আছেন।