২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করলেন বাবা

10

বান্দরবান প্রতিনিধি

ছেলেকে জঙ্গীবাদে প্ররোচিত করায় মসজিদের ইমামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ জঙ্গী আল আমিনের পিতা নুরুল ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বান্দরবান চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই মামলা দায়ের করেন তিনি। পরে ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে ৫ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ২৫ আগস্ট তাবলিগের কথা বলে তার ছেলে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর থেকে ছেলের আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে জানতে পারি স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাবিবুল্লাহ’র প্ররোচনায় বিভিন্ন মাধ্যমে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রশিক্ষণ নিতে বান্দরবানের রুমা উপজেলার গহীন অরণ্যে আশ্রয় নেয় এবং প্রশিক্ষণ নেয়াকালীন তার ছেলে রুমার গহীন জঙ্গলে মারা গেলে অন্যান্য জঙ্গীরা তাকে সেখানে কবর দেয় বলে জানতে পারি। সে খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে কবর পাওয়া গেলেও সেখানে ছেলের মরদেহের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাই যারা আমার ছেলেকে ভুল বুঝিয়ে এ পথে নিয়ে এসে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে তাদের সকলকে শাস্তির আওতায় আনতে এই মামলা দায়ের করছি।
এদিকে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আগামি পাঁচ দিনের মধ্যে রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেনকে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দেন।
মামলার আসামিরা হলেন কুমিল্লার মোখলেছুর রহমানের ছেলে আনিসুর রহমান মাহমুদ (৩২), অজ্ঞান ঠিকানার শামীম মাহফুজ স্যার (৪৭), নারায়ণগঞ্জের আনোয়ার হোসেনের ছেলে মোশাররফ হোসেন বাবু (৩৪), সিলেটের হাফিজ মাওলানা হোসাইনের ছেলে আব্দুল্লাহ মায়মুন ওরফে শায়েখ (৩৪), সিলেটের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে মাসকুর রহমান রনবীর (৪৪), সুনামগঞ্জের মৃত সৈয়দ আব্দুল কালামের ছেলে সৈয়দ মারুফ আহমেদ মানিক (৩১), আব্দুল কাদের সুজন ওরফে ফয়েজ সোহেল, কুমিল্লার মৃত মমতাজ আহমেদের ছেলে মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ হাবিব (৩৫), বান্দরবানের জাওতন লনচেও এর ছেলে নাথানা লনচেও ওরফে নাথান বম (৫০), লাল মোহন বিয়াল ওরফে কর্নেল সলোমান (৫০), কুমিল্লার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে মো. বায়োজিদ ইসলাম মোয়াজ ওরফে বাইরু (২১), নোয়াখালীর আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে নিজামুদ্দিন হিরণ ইউসুফ ওরফে বাপুয়াল (৩২), বান্দরবানের সাংবেম বমের ছেলে লালদন সাং বম পাদন (২৭), কুমিল্লার আব্দুর রহমানের ছেলে দিদার ওরফে চম্পাই (২৭), সিলেটের আব্দুস সালামের ছেলে শিবির আহমেদ (২৬), অজ্ঞাত ঠিকানার ইসমাইল হোসেন হানজালা ওরফে ফাহিম, কুমিল্লার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সালেহ আহম্মদ সাইহা (২৭), সিলেটের মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলামের ছেলে মো. সাদিকুর রহমান সুমন ওরফে ফারকুন (২৯), কুমিল্লা মজিবুর রহমানের ছেলে ইমরান বিন রহমান শিথিল ওরফে বিল্লাল (১৮)।
বান্দরবানের রুমা ও রোয়াংছড়ি থেকে আটককৃত ৫ জঙ্গির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত রবিবার বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন দূর্গম রেমাক্রী প্রাংশার পাহাড়ি এলাকায় নিখোঁজ জঙ্গি আল আমিনের লাশের সন্ধানে সেখানে র‌্যাব সেনাবাহিনী অভিযান চালালেও কবরে কোনো লাশের সন্ধান পায়নি। জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত জঙ্গিরা জানায় আল আমিনকে হত্যার পর দূর্গম পাহাড়ে কবর দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের পর সেখানে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) একটি পরিত্যক্ত আস্তানা ও কবরের সন্ধান পাওয়া গেলেও ঐ কবরে লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। অভিযানের আগেই কে বা কারা সেখান থেকে লাশ সরিয়ে ফেলেছে। এ ঘটনার পর নিখোঁজ জঙ্গি আল আমিনের পিতা বাদী হয়ে এই মামলাটি করেন।
গত ২৩ আগস্ট কুমিল্লার কান্দিরপাড় এলাকা থেকে তাবলীগে যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হন মো. আল আমিন। পরে তার খোঁজ না পেয়ে কুমিল্লা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন তার বাবা। হত্যার পর প্রমাণ লুকাতে কবর থেকে লাশ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে সন্দেহ আল আমিনের বাবার।