২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন : প্রধানমন্ত্রী

21

রাসেল চৌধুরী, কক্সবাজার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনেও আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা ২০১৮ তে ভোট দিয়েছেন নৌকা মার্কায়। আমরা তাই এই কক্সবাজারের উন্নয়ন করেছি। পরপর তিনবার ক্ষমতায় আসতে পেরেছি। ২০০৯ সাল থেকে এই ২০২২ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি আছে বলেই এদেশে উন্নয়ন হচ্ছে, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।’ নৌকার আদলে গড়া মঞ্চে দাঁড়িয়ে দেয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা সমবেতদের উদ্দেশে এসময় প্রশ্ন করেন-‘আপনারা কি নৌকায় ভোট দেবেন?’ তখন জনসভায় উপস্থিত মানুষ হাত তুলে তার কথায় সায় দেয়। শেখ হাসিনা আবার বলেন, ‘আপনারা হাত তুলে আবার বলেন, দেবেন আপনারা?’ উপস্থিত জনতা হাত তুলে তার কথায় সায় দিলে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
গতকাল বুধবার বিকালে কক্সবাজারের শহীদ শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়োজিত আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুর ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে উক্ত জনসভা পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান। জনসভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমÐলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম,সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, স্থানীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এমপি সায়মুম সরওয়ার কমল, এমপি আশেক উল্লাহ রফিক, এমপি জাফর আলম, সংরক্ষিত মহিলা এমপি কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ দাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী, মাহবুবুর রহমান মাবু, এম এ মনজুর, হেলাল উদ্দিন কবির, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি নজিবুল ইসলাম, সদর আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহমুদুল করিম মাদু, সাধারণ সম্পাদক রেজাউর রহমান প্রমুখ।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। বাবা-মা-ভাই-আত্মীয়-স্বজন হারিয়ে আমি রিক্ত, নিঃস্ব। কিন্তু যে বাংলাদেশের মানুষের জন্য তারা প্রাণ দিয়ে গেছেন, তাদের জন্য কাজ করব। এদেশের মানুষের মাঝেই খুঁজে নেব প্রয়াত আত্মীয়-স্বজনকে।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যে গ্রেনেড যুদ্ধের মাঠে ব্যবহার করা হয় সে গ্রেনেড মারা হয়েছিল আমাদের ওপর। আমাদের আইভি রহমানসহ অনেকে মারা গেছেন। আল্লাহর রহমতে আমি সেদিন বেঁচে গিয়েছিলাম। ধ্বংস করা ছাড়া এরা (বিএনপি-জামায়াত) কিছু পারে না। ৭৫ এর পর এরা ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল। এরা কী দিয়েছে বাংলাদেশকে। জিয়া সরকার তো কিছুই দিতে পারেনি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘জামায়াত-বিএনপি এই দেশের মানুষকে কী দিয়েছে। মানুষ খুন, মানি লন্ডারিং, বোমাবাজি এসব দিয়েছে তারা দেশকে। খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে দিয়েছে। তার কারাদÐ হয়েছে। তারেক রহমানেরও কারাদÐ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের সমস্যা আমরা জানি, আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি। আমার বাবা যখন জেল থেকে বের হতেন তখন আমাদের নিয়ে কক্সবাজারে আসতেন। আমরা এখানে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। এতই উন্নয়ন করেছি এক সময় দেখবেন এই মহেশখালী সিঙ্গাপুরের চেয়ে সুন্দর হবে। কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতে আরও দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দেবো। আমাদের সবসময়ের লক্ষ্য এই অঞ্চলের উন্নয়ন।’
জনসভা দুপুরে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে জনসভাস্থলে আসতে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে আসেন নেতাকর্মীরা। সকাল থেকে মহেশখালীর গোরকঘাটা জেটিঘাট থেকে শতাধিক স্পিডবোট, ট্রলার ও নৌকা নিয়ে মানুষ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারে আসেন।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি বাড়াবাড়ি কেন করছে আমরা জানি। তারা নয়াপল্টনে অফিসে গিয়ে নাকি আশ্রয় নেবে এবং আগুন-লাঠি নিয়ে রাস্তায় নামবে।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আছেন বলে আমরা এখনও ভালো আছি। তিনি আছেন বলেই আমরা এখনও পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো আছি। সব ঠিক হয়ে যাবে। সবাই করোনার ভ্যাকসিন পেয়েছেন। আজকে যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার জন্য আমরা একটু বিপদে আছি। কিন্তু শেখ হাসিনার মতো নেত্রী আছেন বলে আমরা পরিস্থিতিকে সামলিয়ে এগিয়ে যেতে পারছি। এখন আমাদের মূল্যস্ফীতি কমে যাচ্ছে। জ্বালানি আমরা পেয়ে যাবো। আমাদের এখন দ্রব্যমূল্য আরও কমতে থাকবে। এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ সঙ্কট কোথাও নেই।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ফখরুল এখন তত্ত¡াবধায়ক সরকার বলে চিল্লায়। এতে কোনও লাভ হবে না। বিএনপিকে বিশ্বাস করবেন না। হাওয়া ভবনের যুবরাজ, অর্থ পাচারে সাত বছরের দÐিত তারেক রহমানকে বিশ্বাস করবেন না। বড়লোকদের বাড়ির সামনে লেখা থাকে কুকুর থেকে সাবধান। আমরা বলি, বাংলাদেশের মানুষ বলে, বিএনপি থেকে সাবধান, তারেক রহমান থেকে সাবধান।’
২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন : কক্সবাজারে ২৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও চারটি নতুন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে শহীদ শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়োজিত আওয়ামী লীগের জনসভায় সুইচ টিপে তিনি এই প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন করেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২৯টি প্রকল্পে ব্যয় হবে ১ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। ভিত্তিপ্রস্তদর স্থাপন করা চারটি প্রকল্পে ব্যয় হবে ৫৭২ কোটি টাকা। উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার গণপূর্ত উদ্যান, বাহারছড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মাঠ, কুতুবদিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভবন, পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিস ভবন, কক্সবাজার জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় ভবন, শেখ হাসিনা জোয়ারিয়ানালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা একাডেমিক ভবন, আবদুল মাবুদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা একাডেমিক ভবন, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা একাডেমিক ভবন, কক্সবাজার জেলার লিংক রোড-লাবনী মোড় সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প, রামু-ফতেখাঁরকুল-মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প, টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ জেলা মহাসড়কের হাড়িয়াখালী থেকে শাহপরীরদ্বীপ অংশ পুনঃনির্মাণ প্রশস্তকরণ এবং শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, বাঁকখালী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিষ্কাশন সেচ ও ড্রেজিং প্রকল্প (১ম পর্যায়), শাহপরীর দ্বীপে সি ডাইক অংশে বাঁধ পুননির্মাণ ও প্রতিরক্ষা কাজ, ক্ষতিগ্রস্ত পোল্ডারসমূহের পুনর্বাসন প্রকল্প, রামু কলঘর বাজার-রাজারকুল ইউপি সড়কে বাঁকখালী নদীর ওপর ৩৯৯ মিটার দীর্ঘ সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রদূত ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী সেতু, কক্সবাজার জেলায় নবনির্মিত ছয়টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভবন, চারটি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন (রামু, টেকনাফ, মহেশখালী ও উখিয়া), কক্সবাজার পৌরসভার এয়ারপোর্ট রোড আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প, শহীদ সরণি আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম সড়ক আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প, নাজিরারটেক শুঁটকি মহাল সড়ক আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প, টেকপাড়া সড়ক আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প, সি বিচ রোড আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প, মুক্তিযোদ্ধা সরণি আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প, সৈকত-সরণ আবাসিক এলাকা সড়ক আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য প্রস্তুত চার প্রকল্প হলো বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (২য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্প, কুতুবদিয়া উপজেলার ধুরুং জিসি মিরাখালী সড়কে ধুরুংঘাটে ১৫৩.২৫ মিটার জেটি ও আকবর বলি ঘাটে ১৫৩.২৫ মিটার জেটি নির্মাণ প্রকল্প, মহেশখালী উপজেলার মহেশখালী গোরকঘাটা ঘাটে জেটি নির্মাণ প্রকল্প এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য উখিয়া-টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদ বরাবর পোল্ডারসমূহের (৬৭/এ, ৬৭, ৬৭/বি এবং ৬৮) পুনর্বাসন প্রকল্প।