১৭ ব্র্যান্ডের ক্রিমে ক্ষতিকর মাত্রায় পারদ

22

নিজস্ব প্রতিবেদক

রং ফর্সাকারী ক্রিমে বিপজ্জনক মাত্রায় পারদ (মার্কারি) পেয়েছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। তাদের পরীক্ষাগারে দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া ১৭টি ব্র্যান্ডের রং ফরসাকারী ক্রিম পরীক্ষা করে মাত্রাতিরিক্ত মার্কারি ও হাইড্রোকুইনোন পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মাত্রার চেয়ে বেশি পারদ ও হাইড্রোকুইনোন মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং এসব ক্রিম দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ হতে পারে বলে জানিয়েছে বিএসটিআই। বিএসটিআই জানায়, তারা খোলা বাজার থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রং ফরসাকারী ক্রিমের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে। এতে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মাত্রায় মার্কারি ও হাইড্রোকুইনোনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ক্ষতিকর চিহ্নিত হওয়া ১৭টি ব্র্যান্ডের মধ্যে ১৪টি পাকিস্তানি, একটি চীন ও বাংলাদেশের এবং অপরটি নামহীন। চামড়ায় ব্যবহার্য ক্রিমের সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ মান অনুযায়ী মার্কারির গ্রহণযোগ্য সর্বোচ্চ মাত্রা ১ পিপিএম। আর হাইড্রোকুইনোনের গ্রহণযোগ্য সর্বোচ্চ মাত্রা ৫ পিপিএম। কিন্তু উল্লিখিত ১৭টি ব্র্যান্ডের অধিকাংশ ক্রিমে মার্কারির মাত্রা পাওয়া গেছে ৪০ থেকে ২২২ পিপিএম। আর দুটি ক্রিমে ৮ পিপিএম ও ৩০ পিপিএম মাত্রার হাইড্রোকুইনোন পাওয়া গেছে।
বিএসটিআই’র পরিচালক (সিএম) মো. নূরুল আমিন জানান, খোলা বাজার থেকে ১৭টি ব্র্যান্ডের রং ফরসাকারী ক্রিম সংগ্রহ করে নিজস্ব পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়। এসব ক্রিমে ৪০ থেকে ২২২ পিপিএম মার্কারি এবং দু’টি ক্রিমে ৮ পিপিএম ও ৩০ পিপিএম মাত্রার হাইড্রোকুইনোন পাওয়া যায়। অনতিবিলম্বে এসব ক্রিম বিক্রয় ও বিতরণ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় আমদানিকারক, সরবরাহকারী ও বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএসটিআইয়ের নিয়মিত মোবাইল কোর্ট ও সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
পরীক্ষায় পাকিস্তানের গৌরি কসমেটিকস (প্রাইভেট) লিমিটেডের গৌরি ব্র্যান্ডের ক্রিমে ১০২ দশমিক ৯২ পিপিএম, এসঅ্যান্ডজে মার্কেটিং ব্র্যান্ডের ক্রিমে ২০৯ দশতিক ৯১ পিপিএম, কিউসি ইন্টারন্যাশনালের ক্রিমে ২১৬ দশকি ৬৯ পিপিএম, ক্রিয়েটিভ কসমেটিকসের ডিউ ব্র্যান্ডের ক্রিমে ১৩৩ দশমিক ৫০ পিপিএম, গোল্ডেন পার্ল কসমেটিকসের ক্রিমে ১২৪ দশমিক ২৮ পিপিএম ও পুনিয়া ব্রাদার্স (প্রা.) লি.এর ফাইজা ক্রিমে ১৮৩ দশমিক ৩৯ পিপিএম, নুর গোল্ড কসমেটিকস (প্রা.) লি. এর নূর হারবাল ক্রিমে পারদের মাত্রা ২২২ দশকি ২১ পিপিএম ও নুর গোল্ড ক্রিমে ১৪৩ দশমিক ৬০ পিপিএম, হোয়াইট পার্ল কসমেটিকসের ক্রিমে ২০১ দশমিক ৯৯ পিপিএম, লাওয়া ইন্টারন্যাশনালের পাক্স ২১৯ দশমিক ১৩ পিপিএম, লাইফ কসমেটিকসের ফ্রেশ অ্যান্ড হোয়াইটে ৬২ দশমিক ৬৮ পিপিএম, ফেস লিফট কসমেটিকসে ১৯০ দশমিক ৫০ পিপিএম, শাহীন কসমেটিকসের ফেস ফ্রেশে ২০১ দশমিক ৪০ পিপিএম পারদ পাওয়া যায়।
চায়না ব্র্যান্ডের মধ্যে গুয়াংজু টাটা বায়ো টেকনোলজি লি. ডা. রাসেল নাইট ক্রিমে ৬৫ দশমিক ৪৪ পিপিএম, নাবিহীন ফোরকে প্লাস ব্র্যান্ডে ৪০ দশমিক ৬০ পিপিএম পারদ পাওয়া যায়।
অন্যদিকে পাকিস্তানি ব্র্যান্ড আনিজা কসমেটিকসের আনিজা গোল্ড ব্র্যান্ড ক্রিমে ১৯২ দশমিক ৩০ পিপিএম মার্কারি ও ৩০ পিপিএম হাইড্রোকুইনোন এবং দেশি ব্র্যান্ড গোল্ড কসমেটিকস ইন্ডাস্ট্রিজের গোল্ড ক্রিমে ৮৮ দশমিক ৭০ পিপিএম মার্কারি ও ৮ দশমিক ২০ পিপিএম হাইড্রোকুইনোন পাওয়া গেছে।বিএসটিআই জনস্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে অনতিবিলম্বে মাত্রাতিরিক্ত পারদযুক্ত এসব রং ফরসাকারী ক্রিম বিক্রয় ও বিতরণ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। অন্যথায় আমদানিকারক, সরবরাহকারী ও বিক্রেতাদের (অনলাইনসহ) বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে। একই সঙ্গে বিএসটিআই’র অনুমোদনহীন এসব ক্রিম ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য ক্রেতাদের সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
এর আগে ২০২০ সালের মার্চ মাসে এসব ব্র্যান্ডের অধিকাংশকে ক্ষতিকারক আখ্যায়িত করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল বিএসটিআই। বাজারে এসব ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিযানও চালাচ্ছিল সংস্থাটি। কিন্তু তারপরও বাজারে এসব ব্র্যান্ডের রং ফরসাকারী ক্রিম নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে। নতুন করে আবার বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা শেষে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিএসটিআই।