১৭ পাহাড়ের নিচে মৃত্যুঝুঁকিতে ৭০০ পরিবার

79

চট্টগ্রামে ৩০টি পাহড়ের পাদদেশে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে তিন হাজার পরিবার। এর মধ্যে নগরীর ১৭ পাহাড়ের নিচে রয়েছে প্রায় ৭০০ পরিবার। এখনো পর্যন্ত মাত্র ৫০ পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। আপাতত লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। তবে আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হলেও সেখানে যেতে আগ্রহী নয় লোকজন।
জানা গেছে, নগরীর ১৭টি পাহাড়ের নিচে জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে ৮০০ পরিবার বসবাস করছে। এর মধ্যে কিছুদিন আগে ৫০ পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। গত দুইদিনে উচ্ছেদ করা হয় আরো ৫০ পরিবার। শহরের বাইরে রয়েছে আরো ১৩টি পাহাড়। এসব পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে দু’হাজারেরও বেশি পরিবার। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোর মধ্যে রয়েছে, মতিঝর্ণা, বাটালি হিল, খুলশী, লালখান বাজার, পাহাড়তলী, টাইগার পাস, আমবাগান, পাহাড়তলী রেল কলোনি, বায়েজিদ বোস্তামি, হিলভিউ টাংকির পাহাড়, হাটহাজারী উপজেলার ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী সিটি কর্পোরেশন ওয়ার্ডের শাহ আমানত কলোনি, জঙ্গল পাহাড়তলী, কাছিয়াঘোনা, লেবু বাগান, ভাটিয়ারীসহ সীতাকুÐের সলিমপুর, লতিফপুর ও রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন পাহাড়গুলোর পাদদেশ ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে লক্ষাধিক মানুষ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ মে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৯তম সভায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত পরিবারগুলোকে ১৫ জুনের মধ্যে উচ্ছেদে বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি।
জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের উচ্ছেদে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এজন্য পর্যাপ্তসংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা উচ্ছেদ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে লোকজনকে।
জানা যায়, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের মধ্যে রয়েছে লালখান বাজার মতিঝর্ণা ও বায়েজিদ বোস্তামি হিলভিউ টাংকি পাহাড়। লালখান বাজার মতিঝর্ণায় পাহাড়ের পাদদেশে কয়েকশ’ পরিবারের বসবাস। পাহাড়ের কোলঘেঁষে বসবাস করছে এসব পরিবার। পাকা, আধাপাকা, মাটির ঘর তৈরি করে তারা বসবাস করছে। পাহাড় কেটে ঘর তৈরি করা হয়েছে।
বায়েজিদ বোস্তামি হিলভিউ এলাকায় টাংকি পাহাড়ের পাদদেশে বসতি প্রায় ৮শ’ পরিবারের। টাংকি পাহাড়ের কোলঘেঁষে তাদের বসবাস। সামান্য বৃষ্টিতেই পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে। তাতে ঘরবাড়ি ভেঙে যায়। তাদের জেলা প্রশাসন থেকে বার বার উচ্ছেদের নোটিশ দিলেও তারা সরে না গিয়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। মতিঝর্ণা এলাকায়ও একই অবস্থা। পাহাড়ের নিচে শত শত পরিবার বসবাস করছে। ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘর এমনকি পাকা, আধা পাকা ঘর তৈরি করে বসবাস করছে তারা। পাহাড়টির চরিদিকেই দখল করে ঘর তৈরি করা হয়েছে।
অন্য পাহাড়গুলোরও একই অবস্থা। ভারী বর্ষণে যেকোনো সময় পাহাড়ধসে পড়ে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে।
এদিকে জালালাবাদ আবাসিক এলাকা সংলগ্ন মধু শাহ পাহাড়ে ‘মৃত্যুঝুঁকি’ নিয়ে বাস করা ৩৪টি পরিবারকে গতকাল রবিবার উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। এসময় ব্যক্তি মালিকানাধীন মধু শাহ পাহাড় দখল করে গড়ে উঠা একাধিক অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিলুর রহমান, চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফোরকান এলাহী অনুপম, বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাবরিনা আফরীন মোস্তফা এবং কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল ইসলাম এ উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রবিবার অভিযান চালিয়ে মধু শাহ পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা ৩৪টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ শেষে উদ্ধারকৃত জায়গা সংশ্লিষ্ট মালিককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে প্রশাসন। পাহাড়ের বাসিন্দাদের সাময়িকভাবে বসবাসের জন্য ইতোমধ্যে আটটি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করেছে জেলা প্রশাসন।
নগরীর আকবর শাহ ও পাহাড়তলী এলাকার পাহাড়ের বাসিন্দাদের জন্য পাহাড়তলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়; কৈবল্যধাম, লেকসিটি, ফয়’স লেক এলাকার ১ ও ২ নম্বর ঝিল এলাকার জন্য ফিরোজা শাহ-ই বøক স্কুল; মধুশাহ পাহাড় ও পলিটেকনিকাল সংলগ্ন পাহাড়ের জন্য চট্টগ্রাম মডেল হাই স্কুল; জালালাবাদ হাউজিং সংলগ্ন পাহাড়ের জন্য জালালাবাদ বাজার সংলগ্ন শেড; লালখান বাজারের টাংকির পাহাড়ের জন্য আল হেরা ইসলামিয়া মাদ্রাসা; মিয়ার পাহাড়ের জন্য রৌফাবাদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়; মতিঝর্ণা পাহাড়ের জন্য লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পোড়া কলোনির বাসিন্দাদের জন্য ছৈয়দাবাদ স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
জানা যায়, আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী নয় লোকজন। শনিবার রাতে কিছু লোক গেলেও ত্রাণসামগ্রী নিয়ে আবারো নিজ নিজ ঘরে ফিরে গেছে।