১৬ জানুয়ারি সারাদেশে বিক্ষোভের ডাক বিএনপির

11

ঢাকা প্রতিনিধি

১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন ও বিদ্যুতের দাম কমানোর দাবিতে আগামী ১৬ জানুয়ারি সারাদেশে জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবে বিএনপি। গতকাল বুধবার ঢাকায় সাড়ে তিন ঘণ্টার গণঅবস্থান কর্মসূচি শেষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
এদিকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ১০ বিভাগীয় শহরে বিএনপি ও সমমনা দল এবং জোটের গণ-অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে ফের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়ায়। সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিরোধী দলগুলো। অন্যদিকে, বিরোধী জোটের এই কর্মসূচি চলাকালে সতর্ক পাহারায় ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সম্ভাব্য সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ঠেকাতে প্রতি ওয়ার্ড ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে ছিলেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ, পূর্বপ্রান্তে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, আরামবাগের ইডেন কমপ্লেক্সে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণফোরাম, বিজয়নগরের পানির ট্যাংকের কাছ থেকে ১২ দলীয় জোট, পুরানা পল্টনে সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট এবং কাওরান বাজারে এফডিসির কাছে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এলডিপিও আলাদা আলাদাভাবে একই কর্মসূচি পালন করে।
জামিনে মুক্তি পাওয়ার দুই দিনের মাথায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল এ কর্মসূচিতে যোগ দেন। নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, আগামী ১৬ জানুয়ারি ১০ দফা দাবি আদায় এবং বিদ্যুতের মূল্য কমানোর দাবিতে সারাদেশে সকল মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌর সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হবে। ঠিক আছে তো? কর্মীরা এ সময় করতালি দিয়ে দলের নতুন এই কর্মসূচিতে সমর্থন দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সাধারণ মানুষ আজ বলছে, তারা আর পারে না। চাল কিনতে পারে না। খাদ্য কিনতে পারে না। ওয়াসার এমডি আমেরিকায় ১৪টি বাড়ি কিনেছে। তিনি কত হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। আজকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তারা সব ব্যাংক লুটে ফোকলা করে দিয়েছে। সরকার লুটের রাজ্য গড়ে তুলেছে।
তিনি বলেন, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে আবারও একদলীয় শাসন কায়েম করা। আমরা সেটা হতে দেব না। আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। আমাদের নেতা দেশনায়ক তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আজকে জনগণ জেগে উঠেছে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জেগে উঠেছে। গণমাধ্যমও ভূমিকা রাখছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেও ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশ বানচাল করা যায়নি। ঢাকাসহ দেশের মানুষ সফল করেছেন। আসুন, আমরা ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে নতুন প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য দেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হই।
সরকারের পদত্যাগ, একাদশ সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকার গঠন করে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বে যে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে, এটি ছিল তার দ্বিতীয় কর্মসূচি। গত ২৪ ডিসেম্বর ৯ বিভাগীয় শহরে এবং ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রথম কর্মসূচিতে গণমিছিল করেছিল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।
গতকাল গণঅবস্থানে যোগ দিতে বিএনপিকর্মীরা সকাল থেকেই ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে একপাশে পলিথিন ও মাদুর বিছিয়ে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন তারা।
ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আব্দুল কুদ্দুস, আফরোজা খানম রীতা, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, মাসুদ আহমেদ তালুকদারসহ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে অবস্থান কর্মসূচির কার্যক্রম শুরু হয় কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে। এরপর দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন জাসাস শিল্পীরা।
কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু।
ফকিরাপুর থেকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত সড়কের একপাশে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে অবস্থান কর্মসূচি সমাবেশের রূপ পায়। ‘জ্বালো জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘এই মুহূর্তে দরকার, তত্ত¡াবধায়ক সরকার’- ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে পুরো এলাকা সরব করে রাখেন তারা।

আওয়ামী লীগের সতর্ক পাহারা
বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচির পাল্টায় একই সময়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে ‘সতর্ক পাহারায়’ ছিলেন আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারা। ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, মীরপুর শাহ আলী মাজারের পাশে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ, শাহবাগে ছাত্রলীগ, শহীদ মিনারে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ, আর ফার্মগেইটে মহানগর উত্তর যুবলীগ নেতাকর্মীরা বুধবার সকাল থেকে সমাবেশ করেন।
অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করেছে। মঞ্চের ব্যানারে লেখা ‘বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রতাবর্তন দিবসের আলোচনা সভা’।
সচিবালয়ের সামনে ও স্টেডিয়ামের আশপাশে তারা বাস, পিকআপ রেখে মিছিল নিয়ে সমাবেশে জমায়েত হন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে এই অবস্থানের কারণে আশপাশের এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সমাবেশ মঞ্চে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান সিরাজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যোগ দেন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কর্মসূচিতে। সভাপতি মÐলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ যুবলীগ উত্তরের সমাবেশে যোগ দেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজসহ ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে এসে শাহবাগের এ কর্মসূচিতে যোগ দেন।