১৫ দিনেই দেশে এক হাজার মৃত্যু

5

দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর হু হু করে মৃত্যু বাড়ায় গত ১৫ দিনেই দেশে এক হাজার রোগী মারা গেছেন। গত বছর মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর বাংলাদেশে হাজার মৃত্যু ঘটতে এটাই সবচেয়ে কম সময়। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশে আরও ৯৪ জন কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, এ নিয়ে মহামারীতে মৃত্যুর সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
বুধবার বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে সবচেয়ে বেশি ৯৬ জনের মৃত্যুর খবর এসেছিল। গত ৩১ মার্চ ৫২ জনের মৃত্যুর পর থেকে দৈনিক মৃত্যু কখনোই ৫০ এর নিচে নামেনি। খবর বিডিনিউজের।
গত বছরের জুন, জুলাই ও আগস্টে টানা তিন মাসে হাজারের বেশি মৃত্যু দেখেছিল বাংলাদেশ। পরে তা কমতে কমতে গত ফেব্রূয়ারিতে এক মাসে মৃত্যু ২৮১ জনে নেমে এসেছিল।
কিন্তু এবার এপ্রিলের প্রথম ১৫ দিনেই হাজার মৃত্যুর তথ্য আসলো, যখন সংক্রমণের তীব্রতা বাড়ায় ‘কঠোর’ লকডাউন দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে বিশ্বে অঞ্চলভিত্তিক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৭ শতাংশ মৃত্যু বেড়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়; যদিও এ সময়ে আমেরিকা ও আফ্রিকা অঞ্চলে মৃত্যু কমেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই সময়ে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
আর এই অঞ্চলে ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার পর এখন সবচেয়ে বেশি মৃত্যু বাড়ছে বাংলাদেশে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশে ৩০ শতাংশ মৃত্যু বেড়েছে।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, মৃত্যুর সংখ্যার হিসেবে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৩৮তম অবস্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ, তার দশ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর আসে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কোভিড-১৯ এ প্রথম মৃত্যুর এক মাস পর ২০ এপ্রিল ১০০ ছাড়িয়ে যায় মৃত্যুর সংখ্যা; এই তালিকা পাঁচশ ছাড়ায় ওই বছরের ২৫ মে। এই হিসেবে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়াতে সময় লেগেছিল ২ মাস ৭ দিন। পরের ১৬ দিনে মৃত্যুর তালিকায় আরও ৫০০ জনের নাম যোগ হয়, তাতে ১০ জুন মোট মৃত্যু পেরিয়ে যায় এক হাজারের ঘর। এরপর দ্রুত সংক্রমণ বাড়ায় লাফিয়ে বাড়তে থাকে মৃত্যুর সংখ্যাও।
ফলে এক মাসেরও কম সময়ে নতুন ১ হাজার জনের মৃত্যুতে গত বছরের ৫ জুলাইয়ে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছিল।
এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর আসে, যা ছিল ২০২০ সালের কোনো দিনের সর্বাধিক মৃত্যু।
মৃতের সংখ্যা আরও এক হাজার বাড়তে লেগেছিল আরও কম সময়। ২৩ দিনে অর্থাৎ ২৮ জুলাই সেই সংখ্যা তিন হাজার স্পর্শ করে।
এক মাসের কম সময়ে আরও এক হাজার মৃত্যুতে গত ২৫ আগস্ট মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
প্রায় একই সময় পর ২২ সেপ্টেম্বর মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ৫ হাজারের ঘর। এরপর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে ধীর গতিতে।
মৃত্যুর তালিকায় আরও এক হাজার জন যোগ হতে সময় লাগে ৩৩ দিন, তাতে প্রথম মৃত্যুর সাড়ে সাত মাসের মাথায় ৪ নভেম্বর তা ৬ হাজারের ঘর ছাড়ায়।
তার আরও ৩৮ দিন পর ১২ ডিসেম্বর তা ৭ হাজার ছাড়ায়। এর ৪২ দিন পর চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৮ হাজার পেরোয়।
এর ৬৭ দিন পর ৩১ মার্চ মোট মৃত্যু ৯ হাজার ছাড়ায়, যা ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধীরগতির মৃত্যুর সময়।
তবে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে এপ্রিলে নিয়মিতই সংক্রমণ ও মৃত্যুর রেকর্ড ওঠানামা করছে। ফলে গত ১৫ দিনে দ্রæত হাজার মৃত্যুর রেকর্ড দেখল দেশ।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত বছরে জুন, জুলাই ও অগাস্টে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
এর মধ্যে জুলাইয়ে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ২৬৪ জন, জুনে ১ হাজার ১৯৭ জন ও অগাস্টে ১ হাজার ১৭০ জন মারা গিয়েছিল এই মহামারিতে।
গত বছরের মার্চ মাসে সবচেয়ে কম সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। প্রাদুর্ভাবের মাসে মাত্র ৫ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর পর এপ্রিলে ১৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
চলতি বছরের ফেব্রæয়ারি মাসে সংক্রমণ কমতে থাকায় মৃত্যুও কমে আসে, এ মাসে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছিল নতুন করোনা ভাইরাসে। কিন্তু মার্চে মৃতের সংখ্যা আবারও বাড়তে শুরু করে। এপ্রিলে সবচেয়ে কম সময়ে মাত্র ১৫ দিনে মহামারী কেড়ে নেয় ১ হাজার ৩৫ জনের প্রাণ।