১৪ কোম্পানির দুধ বিক্রি ও উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা

43

সীসাসহ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান থাকায় সরকারের মাননিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআইয়ের অনুমোদিত ১৪ কোম্পানির সবগুলোকেই ৫ সপ্তাহ পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। সেই সঙ্গে জনসাধারণকে পাস্তুরিত দুধ কেনা ও খাওয়ায় ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাজারে থাকা এসব কোম্পানির পাস্তুরিত দুধ চারটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে পরীক্ষা করানোর পর সেই প্রতিবেদন গতকাল গতকাল রবিবার হাই কোর্টে জমা পড়লে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেয়।
রাষ্ট্রায়াত্ত কোম্পানি মিল্কভিটাসহ ওই ১৪টি প্রতিষ্ঠানই বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিয়ে বৈধভাবে পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন ও বিক্রি করে আসছিল। হাই কোর্টের এই আদেশের ফলে এই ৫ সপ্তাহ দেশে বৈধভাবে পাস্তুরিত দুধ বিক্রির কোনো সুযোগ থাকল না।
১৪ কোম্পানির দুধগুলো হলো আফতাব মিল্ক অ্যন্ড মিল্ক প্রডাক্ট লিমিটেডের আফতাব, আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের ফার্মফ্রেশ মিল্ক, আমেরিকান ডেইরি লিমিটেডের মো, বাংলাদেশ মিল্ক প্রডিউসারস কো অপারেটিভ উইনিয়ন লিমিটেডের মিল্ক ভিটা, বারো আউলিয়া ডেইরি মিল্ক অ্যান্ড ফুডস লিমিটেডের ডেইরি ফ্রেশ, ব্র্যাক ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রজেক্টের আড়ং ডেইরি, ড্যানিশ ডেইরি ফার্ম লিমিটেডের আয়রান, ইছামতি ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রডাক্টের পিউরা, ইগলু ডেইরি লিমিটেডের ইগলু, প্রাণ ডেইরি লিমিটেডের প্রাণ মিল্ক, উত্তরবঙ্গ ডেইরির মিল্ক ফ্রেশ, শিলাইদহ ডেইরির আল্ট্রা, পূর্ব বাংলা ডেইরি ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের আরওয়া, তানিয়া ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস সেইফ একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাই কোর্টের এই বেঞ্চ গত ১৪ জুলাই বাজারে থাকা বিএসটিআই অনুমোদিত সব কোম্পানির পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষার নির্দেশ দেয়। এসব কোম্পানির দুধে এন্টিবায়োটিক, ডিটারজেন্ট, ফরমালিন, ব্যাকটেরিয়া ও ফরমালিন আছে কিনা তা পরীক্ষা করে চারটি গবেষণাগারকে এক সপ্তাহের মধ্যে আলাদাভাবে প্রতিবেদন দিতে বলে আদালত।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) ও সাভারের বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণাগারে বাজারের এসব দুধ স্বাধীনভাবে পরীক্ষা করতে বলা হয়। সেই সঙ্গে দুধে এন্টিবায়োটিক বা ডিটারজেন্ট আছে কিনা তা পরীক্ষার সক্ষমতা অর্জন করতে বিএসটিআইয়ের ল্যাবরেটরির কত সময় ও অবকাঠামো প্রয়োজন সে বিষয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা আদালতে জমা দিতে বলা হয়। সেই প্রতিবেদন গতকাল গতকাল রবিবার আদালতে জমা পড়লে দেখা যায়, একটি পরীক্ষায় ১৪ কোম্পানির দুধেই মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর মাত্রার সীসা পাওয়া গেছে। আরেকটি পরীক্ষায় ১৪ কোম্পানির দুধেই পাওয়া গেছে এন্টিবায়োটিক। খবর বিডিনিউজের
বিএসটিআইয়ের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়, দুধে এন্টিবায়োটিক বা ডিটারজেন্ট আছে কিনা তা তাদের ল্যাবে পরীক্ষার সক্ষমতা অর্জন করতে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সময় লাগবে। এরপর আদালত ১৪ কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে পাঁচ সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রুল জারি করে।
বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধ নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়েরিয়াল ডিজিস রিসার্চ, বাংলাদেশ’র (আইসিডিডিআর,বি) গবেষণা নিয়ে স¤প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ওই গবেষণায় বলা হয়, বাজারে থাকা ৭৫ শতাংশ পাস্তুরিত দুধেই ভেজাল রয়েছে; যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ। এরপর আদালত বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিয়ে কমিটি গঠন করে বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে খাদ্য ও স্বাস্থ্য সচিব এবং বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়।
ওই নির্দেশের পর গত ২৫ জুন বিএসটিআইয়ের আইনজীবী আদালতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। সেদিন আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনের ওপর কোনো শুনানি না হলেও বিএসটিআই আইনজীবী গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন।
তিনি সাংবাদ মাধ্যমকে বলেন, চৌদ্দটি কোম্পানির পাস্তরিত দুধে আশঙ্কাজনক বা ক্ষতিকর কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি। তার ওই বক্তব্য উদ্বৃত করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করলে তা আদালতের নজরে আসে। ওই দিনই এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বাজারে থাকা সাতটি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধের নমুনা পরীক্ষা করে সেগুলোতে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়ার কথা জানান।