১২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল সিআইডির

126

সবুর শুভ

১৯৮৫ সালে সাবেক মেজর ওয়াদুদ হত্যা, ১৯৮৬ সালে মেহেরুজ্জামান, ১৯৮৭ সালে আবদুস সাত্তার তালুকদার, ১৯৯১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সোবহান, একই বছর গফুর ও ১৯৯২ সালে নুরুল ইসলামকে হত্যা। একেরপর এক হত্যাযজ্ঞে নেতৃত্ব দেয়া দুর্ধর্ষ আইয়ুব বাহিনীর প্রধান আইয়ুব আলী নিজেই হত্যাকান্ডের শিকার হন ২০১৯ সালে এসে। আবদুস সাত্তারকে নৃশংস কায়দায় হত্যার প্রতিশোধ নিতেই ঘটনার ৩২ বছর পর তার দুই ছেলে ভাড়াটে খুনি দিয়ে খুন করান আইয়ুবকে। আলোচিত এ মামলার তদন্ত থানা পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও সিআইডির হাতঘুরে সম্পূরক অভিযোগপত্র পর্যন্ত গড়ায়। সিআইডির অধিকতর তদন্তের ফল হিসেবে গতকাল মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে ১২ জনকে অভিযুক্ত করে দাখিল করা হল অভিযোগপত্র। সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা মো. মুজাহিদুল ইসলাম এ অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।
যাদেরকে বিচারের জন্য এ মামলায় সোপর্দ করা হয়েছে তারা হলেন, ১৯৮৭ সালে হত্যাকান্ডের শিকার আবদুস সাত্তারের দুই ছেলে মো. মহসিন ও মো. হাসান, আবদুল আজিজ প্রকাশ মানিক, মো. আজিম, আবদুল জলিল, মো. রুবেল, মো. মহসিন উদ্দিন, মো. আবদুল করিম প্রকাশ পুতুল, মো. মুন্সি মিয়া, মোহাম্মদ ইউনুছ, মো. আবদুল কুদ্দুস ও মো. ইকবাল চৌধুরী প্রকাশ ইকবাল। আর এজাহারে থাকা মো. ওয়াকিল আহমদ ও সন্দিগ্ধ আসামি মো. জাহিদুল ইসলাম প্রকাশ জহিরকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
অভিযোগপত্রে থাকা তথ্যমতে, ১৯৮৭ সালে রাঙ্গুনিয়ায় আবদুস সাত্তার তালুকদারকে দিনদুপুরে জবাই করেন হত্যা করে আইয়ুব বাহিনীর প্রধান মো. আইয়ুব আলী। তারও দু’বছর আগে আবদুস সাত্তারের হাতের আঙ্গুল এক কোপে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিলেন আইয়ুব। পিতার উপর চলা এ বর্বরতার সময় সাত্তারের ছেলে মহসিন এবং হাসান খুব ছোট থাকলেও হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিজ্ঞা মনের ভেতরে পুষিয়ে রাখেন। এ নিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। শেষতক ২০১৯ সালের ৪ অক্টোবর আসামিরা রাঙ্গুনিয়ার আলমশাহ পাড়ায় একটি বৈঠক করেন। বৈঠক থেকে আব্দুল জলিল, মো. রুবেল ও মো. মহিন নামে তিনজনকে আইয়ুবের ওপর নজরদারি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ৫ অক্টোবর ঘটনার দিন এ তিনজনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর আসামিরা আলমশাহ পাড়ায় অস্ত্র নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। রাঙ্গুনিয়ার লালানগর ইউনিয়নের একুইল্যা পুকুর পাড়ের বসাকপাড়ার মুখে সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেলে করে আসছিলেন আইয়ুব। এ সময় অপেক্ষারত সিএনজি টেক্সি থেকে নেমে তার মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে পালিয়ে যান আবদুল আজিজ। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান সন্ত্রাসী আইয়ুব।
এদিকে ১৯৯১ সালে আইয়ুব বাহিনীর হাতে মুক্তিযোদ্ধা সোবহান হত্যাকান্ডটি নির্দয়তার সকল সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। পিতাকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার সময় সোবহানের দুই ছেলে কবির ও সবুরকে পথে আটকে খেঁজুর কাঁটা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে চোখ উপড়ে ফেলেছিল এ বাহিনী। সোবহানের দুই ছেলের মধ্যে একজন মারা গেছেন ইতোমধ্যে।
অন্যদিকে আইয়ুবকে হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী জাহেদা বেগম রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। প্রথমে রাঙ্গুনিয়া থানার পুলিশ সাড়ে তিন মাস তদন্ত করে হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি। পরে আদালত মামলাটি পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন।
তদন্ত শুরু করেই জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আদালতে সোপর্দ করেন পিবিআই’র পরিদর্শক মোজাম্মেল হক। এরপর একে একে স্বীকারোক্তি দেন আবদুল আজিজ প্রকাশ মানিক, মো. আজিম, আবদুল জলিল, মো. রুবেল ও মো. মহিন উদ্দিন। এতে হত্যাকান্ডের কারণ ও পরিকল্পনার কথা সবিস্তারে আদালতের সামনে তুলে ধরেন আসামিরা। উঠে আসে আইয়ুবকে হত্যায় ২০ লাখ টাকার চুক্তির কথাও।
পিবিআই তদন্ত শেষে ১২ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিলে আইয়ুবের স্ত্রী এতে নারাজি আবেদন দাখিল করেন। এ অবস্থায় আদালতের আদেশে মামলাটি তদন্তে যায় সিআইডির কর্মকর্তা মো. মুজাহিদুল ইসলামের কাছে। তিনি তদন্ত শেষে উল্লেখিত ১২ আসামির বিরুদ্ধেই অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করলেন।