১০ বছর করে কারাদন্ড ১৩ আসামির

8

পূর্বদেশ ডেস্ক

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুরে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের মামলায় ১৩ আসামির সবাইকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই রায়ে প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে তিন মাসের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক জয়নাল আবেদীন এ রায় ঘোষণা করেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, আসামিদের মধ্যে কারাগারে থাকা নুর হোসেন বাদল, আবদুর রহিম, আবুল কালাম, ইসরাফিল হোসেন মিয়া, মাঈন উদ্দিন সাজু, সামছুদ্দিন সুমন কন্ট্রাকটর, নুর হোসেন রাসেল, আনোয়ার হোসেন সোহাগ ও দেলোয়ার হোসেন দেলুকে রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত করা হয়।
বাকি চার আসামি আবদুর রব চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমান, জামাল উদ্দিন ও মিজানুর রহমান তারেককে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার কাজ চলে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মামুনুর রশীদ লাভলু জানান, ১৩ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছরের কারাদন্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার জরিমানা করেছেন বিচারক।
চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় শুনতে মামলার বাদী ভুক্তভোগী সেই নারীও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তার আইনজীবী মোল্লা হাবিবুর রাসুল মামুন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
আদালতে উপস্থিত বিভিন্ন মানবাধিকার ও নারী অধিকার সংগঠনের নেতারাও এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে আসামিদের স্বজনদের কয়েকজনকে রায়ের পর আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে যেতে দেখা যায়।
২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে স্থানীয় সন্ত্রাসী দল দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা মধ্যবয়সী এক নারীকে ঘরে ঢুকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে।
এ সময় মোবাইল ফোনে ধারণ করা একটি ভিডিও ঘটনার একমাস পর ৪ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সন্ত্রাসীদের ভয়ে আত্মগোপনে থাকা ওই নারীকে ওইদিনই উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।
ওই ঘটনা সাড়া দেশে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। নিপীড়কদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন সংগঠন।
এরপর বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পর্নগ্রাফি আইনে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় দুটি মামলা করেন ওই নারী।
পরে তিনি একই থানায় আরেকটি মামলা করেন, যেখানে ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর এবং ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল দুই দফায় তাকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয় স্থানীয় সন্ত্রাসী দল দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন দেলু ও তার সহযোগী আবুল কালামের বিরুদ্ধে।
গত ৪ অক্টোবর ওই ধর্ষণ মামলায় রায়ে দেলোয়ার ও কালামকে যাব্বজীবন করাদন্ড দেয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।
আর বিবস্ত্র করে নির্যাতনের এ মামলায় মোট ১৪ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছিল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগকে মামলার থেকে অব্যাহতি দিয়ে ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে আদালত।
বাদীসহ ৪০ জনের সাক্ষ্য শুনে আসামিদের সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে গতকাল মঙ্গলবার রায় দিলেন বিচারক।