১০০ বছর বাঁচার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তারা

59

সুসান ওয়াইল্ডার তার ‘শতবর্ষী অলিম্পিক’ এর জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। ২০৬২ সালে তিনি শতবর্ষী বয়সী হবেন। ওয়াইল্ডারের বয়স এখন ৫৭ বছর। তার চাওয়া বৃদ্ধ বয়সেও সুস্থ থাকা। সে সময় তিনি বাগান তৈরি, ভ্রমণ, নাতি নাতনিদের সঙ্গে খেলাধুলা এবং স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরা ফেরা করতে চান।
শত বছর বয়সেও সুস্থ থাকার জন্য নিজেকে ফিট রাখতে ব্যস্ত রয়েছেন এই মধ্য বয়স্কা। সুসান ওইয়াল্ডার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের লাইফস্কেপ নামে একটি ফ্যামিলি মেডিসিন প্রাকটিস প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং প্রতিষ্ঠাতা। এই বয়সেও তিনি রোজ দুই থেকে পাঁচ মাইল হাঁটা অনুশীলন করছেন। হাঁটার পাশাপাশি শারীরিক কসরত ও অলিম্পিকের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি। শরীর ফিট রাখাতে প্রতিনিয়ত অনুশীলন করার বিকল্প নেই।
ওয়াইল্ডারের মতে, শরীর সুস্থ রাখতে এগুলো অপরিহার্য। বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন ১০০ বছর বেঁচে থাকলেই জীবনের লক্ষ্য পূরণ হয়ে যায়। তবে অন্যরা মনে করেন, ১০০ বছর বয়সেও সুস্থ এবং সক্রিয় থাকাটাই মূল চ্যালেঞ্জ। তারা আশা করেন ‘শতবর্ষী অলিম্পিক’ বৃদ্ধ বয়সে সুস্থ থাকার চ্যালেঞ্জ জয় করতে সহায়তা করবে। স্ট্যান্ডার্ড অলিম্পিকে মূল লক্ষ্য থাকে স্বর্ণ জয়। আর ‘শতবর্ষী অলিম্পিকের’ লক্ষ্য থাকে নিজের শরীরকে প্রাকৃতিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করার ব্যক্তিগত প্রতিযোগিতা।
এখানেও পুরষ্কার আছে, তা হলো ১০০ বছর পরেও কীভাবে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যাবে তার মূলমন্ত্র।সুসানে ওয়াইল্ডার একটি পডকাস্ট শোনার সময় ‘শতবর্ষী অলিম্পিক’ সম্পর্কে ধারণা পেয়েছিলেন। এই অনুষ্ঠানে একজন ফাংকশনাল মেডিসিন মেন্টর মার্ক হাইম্যান বৃদ্ধ বয়সে সুস্থ থাকার পন্থা সম্পর্কে বলেন। পডকাস্টে তিনি ৪৭ বছর বয়স্ক কানাডিয়ান-
আমেরিকান সার্জন পিটার আটিয়া এর সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। আটিয়া বিশ্বাস করেন সুস্থ মানসিকতা চর্চা এবং শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার মধ্যমে বৃদ্ধ বয়সেও সুস্থ থাকা যায়। আটিয়ার ভিতর এই ধারণা জন্মেছিল তার এক বন্ধুর পিতা-মাতার অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার সময়। শারীরিক আঘাতজনিত কারণে তারা জীবনের শেষ দিনগুলোতে অনেকটা নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছিলেন।
গলফ খেলা এবং বাগান করার মতো কাজগুলোও তারা করতে পারত না। আটিয়া তখনই ভেবেছিলেন অ্যাথলেটরা অলিম্পিকের জন্য যেমন প্রস্তুতি নেয় বৃদ্ধ বয়সেও সুস্থ থাকার জন্য প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। পিটার আটিয়া নিজে শত বছর বয়েসে পৌঁছালে ১৮টি শারীরিক পরিশ্রমের তালিকা প্রস্তুত করেন। যার মধ্যে ৩০ পাউন্ডের গবলেট স্কোয়াটের মতো অনুশীলনগুলো বেছে নিয়েছিলেন।
তার ওই তালিকার অনুশীলনগুলোকেই তিনি ‘শতবর্ষী অলিম্পিক’ হিসেবে আভিহিত করেছেন। আটিয়া মনে করেন, শত বছর বয়সেও শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা সম্ভব অনুশীলনের মাধ্যমে। সবাই যে ১০০ বছর বেঁচে থাকে বিষয়টি তেমন নয়। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেও ১০০ বছর বাঁচার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অক্সফোর্ড ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন এজিংয়ের পরিচালক জর্জ লিসন মনে করেন, শারীরিকভাবে যথেষ্ট সক্রিয় এবং শক্তি থাকলেই বৃদ্ধ বয়সে সুস্থ থাকা সম্ভব।
লিসন একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করে বলেন, পেশিতে শক্তি সঞ্চিত থাকলে বৃদ্ধ বয়সে সক্রিয় থাকা সম্ভব। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পেশির ভর এবং হাড়ের ঘনত্ব হারাতে শুরু করে। গবেষণায় দেখা যায়, ৩০ বছর বয়সের পর প্রতি দশকে পেশির ভর পাঁচ শতাংশ কমতে শুরু করে। হারানো পেশির ভর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।
সুসানে ওয়াইল্ডারের প্রতিষ্ঠান লাইফস্কেপ শতবর্ষ বয়সেও সুস্থ থাকার কৌশল সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করেন। চিকিৎসক, পুষ্টিবিদ এবং ফিটনেস বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ওয়াইল্ডারের প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা পরীক্ষা করে প্রত্যেকের আলাদা ডায়েট, অনুশীলন এবং স্বাস্থ্য পদ্ধতি তৈরি করে। মানসিকভাবে প্রস্তুতির বিষয়টিও এর সঙ্গে জড়িত। তাদের সেবা গ্রহণ করা কয়েকজন ১২০ বছর পর্যন্তও সুস্থভাবে বাঁচার জন্য আশাবাদী।
ওয়াইল্ডার নিজেও এই অনুশীলন যথাযথভাবে পালন করে বৃদ্ধ বয়সে তরুণদের মতো সুস্থ থাকতে চাইছেন। জুলিয়া হকিনস ১০৪ বছর বয়সী এক নারী। প্রায়শই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানা রাজ্যের ব্যাটন রাউজে তার বাড়ির বাইরের রাস্তায় হাঁটেন। তিনি নিজের বয়সের গ্রূপে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দুটি বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন।
তিনি ১০১ বছর বয়সে ১০০ মিটার ড্যাশে রেকর্ড গড়েন। ১০২ বছর বয়সে ৬০ মিটার ড্যাশে রেকর্ড গড়েন। জুলিয়া হকিনস ‘শতবর্ষী অলিম্পিক’ ধারণা সৃষ্টির পূর্বেই নিজেকে প্রস্তুত করতেন। তিনি একজন সাইক্লিস্ট ছিলেন। ১০০ বছর বয়সে দৌড়বিদ হয়েছেন। হকিনস মনে করেন সাইকেল চালানোর কারণেই শতবর্ষী হয়েও তিনি সক্রিয় এবং সুস্থ। সূত্র: বিবিসি