হ্রদে কচুরিপানা, নৌ-চলাচলে ভোগান্তি

29

এম কামাল উদ্দিন, রাঙামাটি

রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে নৌযান চলাচলে ভোগান্তি চরমে। জলস্থলে যানবাহন আটকে যাচ্ছে জভোসা দূর-দূরান্ত থেকে টুটে আসা কচুরিপানার কারণে। এতে সীমাহীন বিঘ্ন ঘটছে নৌ-যান চলাচলে। গন্তব্যস্থলে গিয়ে পৌঁছাতে সময় লাগছে দীর্ঘক্ষণ। ফলে যাতায়াতে ভোগান্তি বাড়ছে নৌপথে চলাচল করা যাত্রীদের। এ নিয়ে নেই কোন স্থায়ী পরিকল্পনা বা সমাধানের উপায় দিশেহারা স্থানীয় প্রশাসন। কচুরিপানার কারণে আগত পর্যটকদের মনেও সংস্বয় দেখা দিয়েছে। অনেকে ভয়ে কাপ্তাই হ্রদে নৌ যান নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছে না। লঞ্চ শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ ও যাত্রীরা জানান, কাপ্তাই হ্রদে অতিরিক্ত কচুরিপানার জট বাঁধায় যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। এতে গন্তব্যে গিয়ে পৌঁছাতে দীর্ঘ সময় লাগছে। ভাসমান কচুরিপানার জট সরিয়ে যানবাহন চালালেও কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই আবার জট বাঁধে।জেলা সদর হতে নৌপথে যাতায়াতের উপজেলা সমূহ হলো-বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল, জুরাছড়ি, নানিয়ারচর ও বিলাইছড়ি কাপ্তাই হ্রদজুড়ে বিভিন্ন স্থানে কচুরিপানার জট বেঁধেছে। ফলে এসব এলাকায় নৌপথে যাতায়াতে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে নৌপরিবহণগুলোর। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রাঙামাটি সদরের কাপ্তাই হ্রদের হাজারিবাক, বালুখালী, বন্দুকভাঙা, মগবান, জীবতলীসহ বিভিন্ন স্থানে কচুরিপানার জটে বেঁধে আটকে যাচ্ছে কাপ্তাই হ্রদে চলাচল করা নৌ-যানগুলো। এতে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে অনেক দেরিতে। লঞ্চ ও বোটে চলাচলকারী যাত্রী, পর্যটক ও মালবাহী লঞ্চ, ইঞ্জচালিত বোট ও স্পিডবোট আটকে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন পর্যটক ও যাত্রীরা। বরকল উপজেলার ধামাইছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমল চাকমা বলেন, সরকারি নির্দেশনায় গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে। আমাদের প্রতিদিন স্কুলে যেতে হচ্ছে। কিন্তু কাপ্তাই হ্রদে অতিরিক্ত কচুরিপানার জট বাঁধায় যাতায়াতে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এসব জলেভাসা কচুরিপানার জট সরানোর ব্যবস্থা করা না গেলে জনসাধারণের ভোগান্তি দূর হবে না। যাত্রীরা বলেন, নৌপথে যাতায়াতকালে হ্রদের মাঝখানে কচুরিপানার জটে নৌকা আটকে গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রচুর সময় ব্যয় হচ্ছে। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা খুব ব্যাহত হচ্ছে। লঞ্চ মালিক সমিতি সভাপতি মো. মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, কাপ্তাই হ্রদে অতিরিক্ত মাত্রায় কচুরিপানার জট বেড়ে গেছে। ফলে ইঞ্জিনচালিত নৌকা, লঞ্চ, মালবাহী নৌপরিবহন, পর্যটকের বোট ও নৌকাসহ সব ধরনের নৌ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। কচুরিপানার জট অতিক্রম করে যাওয়ার পথে নৌযানগুলো আটকে গেলে তা সরাতে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কালক্ষেপন হচ্ছে। কচুরিপানার জট লাগার কারণে অনেক সময় নৌকাগুলোর ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। হ্রদ হতে কচুরিপানার জট সরানো না গেলে দুর্ভোগ অতিমাত্রায় বাড়তেই থাকবে। জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিএফডিসি, জেলা পরিষদ এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে উদ্যোগ নিতে লাগামহীন দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পেত হাজার হাজার নৌ-যাত্রী ও পর্যটকরা। কিন্তু এ নিয়ে কারও মাথাব্যথা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুল জাহের বলেন, কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানার জট সরিয়ে স্থায়ী সমাধান কখনও সম্ভব নয়। ২০১২ সালে একবার কচুরিপানা অপসারনের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু কারণে অকারণে তা সম্ভব হয়নি। কারণ জেলেরা মাছ শিকারের জন্য কচুরিপানা দিয়ে জাঁক তৈরি করে জট বাঁধায়। হ্রদে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব জাঁক ছিঁড়ে গিয়ে হ্রদের বিভিন্ন স্থানে ভাসমান জঞ্জালের জট বাঁধে।
ফলে কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানার দুর্ভোগে পড়তে হয় এসব এলাকার স্থানীয় লোকজনকে। এ বিষয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানার জঞ্জাল সরানোর স্থায়ী সমাধান কীভাবে করা যায়, তা এখনও সিদ্ধান্তহীনতায়। কচুরিপানা অপসারণের যন্ত্র রাঙামাটিতে নেই। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদেরকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে তারা জানিয়েছেন যে, এসব ভাসমান জঞ্জালের জট সরানো শ্রমিক দিয়েও সম্ভব হবে না। তবে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।