হেফাজত বনাম আওয়ামী লীগ সমাজ বাস্তবতার নিরিখে

41

কামরুল হাসান বাদল

১। ১৯৭১ সাল। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বলতম সময়, সবচেয়ে গৌরবময় সময়। স্বর্ণের অক্ষরে লিখে রাখবার সময়। বাঙালি ধর্ম-বর্ণ, ছোট-বড় নির্বিশেষে ওই একবারই ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। সকল ভেদাভেদের ওপরে উঠতে পেরেছিল। আর সে অপূর্ব অসাধারণ শক্তিই বাঙালিকে বীরের জাতিতে, বিজয়ীর জাতিতে পরিণত করেছিল। ইতিহাসের সেই অবিশ্বাস্য কাজটি সংঘটিত হয়েছিল বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য দূরদর্শি ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে। বাঙালি অর্জন করেছিল তার প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র। প্রথমবার বাঙালি একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। তাই ‘একাত্তর’ বাঙালির স্বাধীনতার সমার্থক হয়ে উঠেছে এখন।
স্বাধীনতার এক বছর পূর্তির আগেই জাতিকে একটি অসাধারণ সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়ে সংবিধান প্রণয়নের জন্য ড. কামাল হোসেনকে প্রধান করে একটি কমিটি করে দিয়েছিলেন তিনি। এবং রাষ্ট্রের মূলস্তম্ভ হিসেবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুই।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না বাংলাদেশের জন্ম নিছক একটি দেশভাগের মতো ঘটনা নয় কিংবা যুদ্ধ করে একটি দেশকে শুধু আলাদা করাই নয়। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ ছিল কিছু নির্দিষ্ট আদর্শ প্রতিষ্ঠার লড়াই যা বঙ্গবন্ধু ঘোষিত রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। এই চার মূলনীতিই বাংলাদেশ স্বাধীন করার লক্ষ্য ও প্রেরণা। এই চার মূলনীতিই প্রকৃত বাংলাদেশ।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হলো। দুটিই ফেডারেল রাষ্ট্র। বহু ধর্মের বহু ভাষার বহু সংস্কৃতির ভারত প্রজাতন্ত্র স্বাধীনতা পাওয়ার পরপরই চলতে শুরু করলো গণতান্ত্রিক পন্থায়। ফলে বৃহৎ রাষ্ট্র হওয়া সত্তে¡ও, ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির দেশ হওয়া সত্তে¡ও সমস্ত রাজ্যগুলোকে নিখিল ভারতের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিল। প্রথম থেকেই ভারত গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে চলেছে। ফলে প্রতিটি রাজ্যের স্বার্থ ও মর্যাদা রক্ষা করে ঐক্যবদ্ধ ভারত গড়ে উঠতে পেরেছিল। কিন্তু তার পাশাপাশি পাকিস্তানে ছিল উল্টো চিত্র।
পাকিস্তানে প্রথম থেকেই গণতন্ত্রকে পদদলিত করা হয়েছে এবং বিভিন্ন প্রদেশের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করে নব্য উপনিবেশিকে পরিণত হয়েছিল। ’৪৭ সালে তথাকথিত স্বাধীনতা অর্জিত হলেও ১৯৪৮ সাল থেকে পাকিস্তানের শাসক শ্রেণির প্রতি বাঙালি তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অনাস্থা, অবিশ্বাস শুরু হতে থাকে। অখÐ পাকিস্তানের ২৩ বছরের ইতিহাসে শাসকগোষ্ঠী গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে বারবার। সামরিক শাসকদের অধীনেই দেশ পরিচালিত হয়েছে অধিকাংশ সময়ে। রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের মতামতকে কখনোই গুরুত্ব দেয়নি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। ফলে সে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের সংবিধানে জাতির পিতা উৎকীর্ণ করলেন এক মহান আদর্শ ও দিক নির্দেশনা-‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ।’ অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু জনগণের একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা ও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন। পাকিস্তানের ২৩ বছরের অপশাসন দেখে তিনি জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
পাকিস্তান ছিল মূলত একটি পুঁজিবাদী লুটেরা শ্রেণির রাষ্ট্র। ২৩ বছর ধরে বাঙালিকে শোষণ করেছে তারা। এদেশের পুঁজি লুট করে পশ্চিম পাকিস্তানে গড়ে তুলেছিল শিল্পকারখানা। পাকিস্তানের ২২ পরিবার নিয়ন্ত্রণ করতো পাকিস্তানের ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা তথা সিংহভাগ অর্থনীতিকে। পাকিস্তানের সিংহভাগ সম্পদ কুক্ষিগত ছিল শাসকশ্রেণির বশংবদ লুটেরা পুঁজিপতিদের কাছে। স্বাধীনদেশের মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে, সম্পদের সুষম বন্টনের লক্ষ্যে, মানুষকে শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। মূলনীতি হিসেবে সমাজতন্ত্রকে গ্রহণ করেন। এ লক্ষ্যে বৃহৎ কলকারখানাগুলো জাতীয়করণ করেছিলেন।
তিনি সা¤প্রদায়িকতার হিংগ্র, নিষ্ঠুর রূপ খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলায় মন্ত্রী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। সে সময় কলকাতাসহ নানা স্থানে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল। দাঙ্গা উপদ্রæত এলাকায় বঙ্গবন্ধু ত্রাণ সাহায্য নিয়ে গেছেন সোহরাওয়ার্দীর নির্দেশে। দাঙ্গা প্রশমনে তিনি অসামান্য ভূমিকা পালন করেছিলেন । তিনি দেশভাগের ফলে সৃষ্ট সা¤প্রদায়িক দাঙ্গায় বাংলা ও পাঞ্জাবে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু দেখেছেন। তার ভয়াবহ ও নিষ্ঠুর রূপ দেখেছেন। দেশভাগের পর ১৯৬৪ সালে ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায় সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা দেখেছেন ফলে তিনি এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন সেখানে যেন সা¤প্রদায়িকতার কোনো স্থান না থাকে। সকল ধর্মের, সকল বর্ণের মানুষ যেন সমমর্যাদায় বসবাস করতে পারে। ধর্মের কারণে যেন কোনো মানুষ নিগৃহীত না হয়। অত্যাচারিত না হয় সেজন্য তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় মূল চারনীতিতে স্থান দেন।
পাকিস্তান রাষ্ট্রটিই ছিল এক আজগুবি রাষ্ট্র। দ্বিজাতি তত্তে¡র ভিত্তিতে ভাগ হওয়া পাকিস্তান ছিল মুসলমানদের রাষ্ট্র। পশ্চিম পাকিস্তান আর পূর্ব পাকিস্তান মিলে যে রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা করা হলো তার মাঝখানে দূরত্ব ছিল ১১শ মাইল। ‘মুসলিম জাতি’ ধারণাটাই ভুল। মুসলিম স¤প্রদায় হতে পারে জাতি নয়। ফলে মুসলিম জাতির জন্য আলাদা রাষ্ট্র, হিন্দুর জন্য আলাদা রাষ্ট্র এই নীতিটিই একটি সা¤প্রদায়িক নীতি। আর এই নীতিতে ভারত ভাগ করে সা¤প্রদায়িকতাকেই উস্কে দেওয়া হয়েছে শুধু, তাতে সাধারণ মানুষের মুক্তি ঘটেনি। এদেশের মুসলমানরা জাতিতে বাঙালি, স¤প্রদায়গতভাবে মুসলিম। মানুষ ধর্ম পরিবর্তন করে তার স¤প্রদায়গত পরিচিতি পরিবর্তন করতে পারে, জাতীয় পরিচয় বা জাতিসত্তা পরিবর্তন করতে পারে না। কেউ একজন খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করে খ্রিস্টান হতে পারেন ব্রিটিশ হতে পারেন না। তেমনি আরব জাতি আর মুসলিম স¤প্রদায় এক জিনিস নয়। আরব জাতির মধ্যে অনেক স¤প্রদায়ের লোক আছে। তারা আরব জাতির অংশ, তারা আরবের সংস্কৃতি বহন করে। জাতিসত্তা গড়ে উঠতে প্রয়োজন হয় হাজার বছর। বঙ্গবন্ধু তাই সংবিধানে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে ঘোষণা ও সন্নিবেশিত করেছিলেন। হাজার বছরের বাঙালি জাতীয়তাবাদের অসা¤প্রদায়িক চেতনার দেশ গড়তে চেয়েছিলেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদের রেনেসাঁর সূত্রপাত করে জাতির আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তাই বলে তিনি দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার ও মর্যাদা খাটো করেননি। গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যায় তাদের সমান অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করেছিলেন।
এই চার মৌলিক নীতি থেকে সরে আসার উপায় নেই বাংলাদেশের । আমেরিকার পর বাংলাদেশ দ্বিতীয় রাষ্ট্র যেটি ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল। এই ঘোষণাপত্রের আলোকে সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে “জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে।” বঙ্গবন্ধু স্বপ্রণোদিতভাবে সংবিধানে এই মূল চারনীতিকে গ্রহণ করেছিলেন। আর এই সংবিধান জাতীয় সংসদে পাস করেছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যগণ।
২। আজ সেই আওয়ামী লীগের সাথে হেফাজতে ইসলাম বা অন্যান্য ধর্মীয় সংগঠনের সখ্য বা সংঘাত দেখে যারা হায় হায় করছেন তাদের জন্য কিছু তথ্য তুলে ধরা দরকার। তুলে ধরা দরকার যারা ১৯৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতি দেখেনি। যারা ২০০১ সালে নির্বাচন এবং নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি দেখেনি। যারা ২০০৬ সালের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখেননি তাদের জন্য। কিংবা দেখেও ভুলে থাকার চেষ্টা করছেন তাদের জন্য।
১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার ঘটনাটি সাধারণ সামরিক অভ্যুত্থান নয়, ক্ষমতার পালা বদল নয় এবং গ্রেফ একজন রাষ্ট্রপতিকে হত্যার ঘটনাও নয়। সে হত্যাকাÐের পেছনে রয়েছে অনেক গভীর ও কুটিল ইতিহাস। যেদিন বাংলাদেশের সংবিধানে সমাজতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে মৌলিক নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয় সেদিনই বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদÐ ঘোষিত হয়েছিল। ফলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাÐ একই সাথে একটি আদর্শের, একটি স্বপ্নের এবং একটি রাষ্ট্রের হত্যাকাÐ। মৌলিক নীতিহীন একটি রাষ্ট্র মৃত রাষ্ট্রই বটে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঘাতক মোশতাক ও জিয়াউর রহমান গং রাতারাতি সংবিধান থেকে সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে মুছে দিয়েছিলো। মোশতাক বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ইসলামী প্রজাতন্ত্র করতে চেয়েছিল।
মোশতাকের পর জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে একাত্তরের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরাজিত শক্তিকে বার্তা দিয়েছিলেন তিনি কোন আদর্শে এবং কোন ভাবধারায় দেশকে পরিচালিত করতে চান। তিনি ইতিহাস থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মুছে ফেলার সাথে সাথে সর্বক্ষেত্রে পাকিস্তানি ভাবধারা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রকে পরিত্যাগ করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্থলে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রচলন করেন। তিনি তথাকথিত বহুদলীয় গণতন্ত্রের আড়ালে বা সুযোগে দেশে একাত্তরের পরাজিত শক্তি, স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারী গোলাম আজমকে দেশে ফিরিয়ে আনেন এবং তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। তিনি দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেন। যা বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর নিষিদ্ধ করেছিলেন। তিনি সংবিধানে বিসমিল্লাহ সংযোজন করেন এবং তিনি ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহারের পথ সুগম করে তোলেন। তিনি বক্তৃতা শুরু করতেন বিসমিল­াহির রাহমানির রাহিম বলে। এর দ্বারা বোঝানোর চেষ্টা করতেন বঙ্গবন্ধুর সরকার এদেশে ধর্মহীনতা তৈরি করেছিলেন। তিনি এবং তার অনুসারীরা ধর্মনিরপেক্ষতার অপব্যাখ্যা করে ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধর্মহীনতা বলে প্রচার করতেন। তার আমল থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মীয় উন্মাদনাকে প্রশ্রয় দেওয়া শুরু হয় এবং সমাজের সর্বক্ষেত্রে সা¤প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটিয়েছেন। তারপর রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে আরেক জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করেন ইসলামকে যদিও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকতে পারে না। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যস্ত এভাবে শাসকগোষ্ঠী সা¤প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটিয়েছে। রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার বাড়িয়েছে।
এর পাশাপাশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও একটি পরিবর্তন ঘটে। ১৯৭৩ সালে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের পর তেলের দাম বাড়াতে থাকে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাওয়া লাগে। তাদের দেশে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি একটি বড় পরিবর্তন ঘটায়। তাদের মুদ্রার মান বেড়ে যায়। ৭০ দশকের শেষ থেকে বিপুল বাঙালি সেসব দেশে কর্মী ও শ্রমিক হিসেবে যাওয়া শুরু করে। এই বাঙালিরা মধ্যপ্রাচ্য গিয়ে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি তাদের সংস্কৃতিতেও আকৃষ্ট হতে থাকে। সেদেশে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জন করে অনেকে সে টাকার বিশাল অংশ দেশের মসজিদ-মাদরাসার উন্নয়নে দান করতে থাকে। রাতারাতি সারাদেশে গজিয়ে ওঠে অসংখ্য মাদরাসা। তারা তাদের পরিবারে মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতি চালু করে। বাড়তে থাকে বোরকা আর আলখেল্লার প্রচলন। তাদের অনেকের সন্তানকে মাদরাসায় ভর্তি করানো হয়। সাধারণ নিম্নবিত্ত পরিবারের এই মানুষের মধ্যে বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশের আগেই তারা আক্রান্ত হয় মরুভূমির দেশ মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতিতে। ফলে দেশ রেমিট্যান্সের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হলেও সামাজিক ক্ষেত্রে আরও পশ্চাদমুখী হয়ে পড়ে। এই প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। এদের অর্থে এবং বিদেশ থেকে সংগৃহীত অর্থে গড়ে ওঠা মাদরাসার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, সে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। এর মধ্যে ওহাবী মাদরাসার সংখ্যাই বেশি যারা হেফাজতে ইসলাম নামে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। এভাবে সমাজে একটি বিশাল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় এখন আওয়ামী লীগ থাকলেও সমাজ চলে গেছে জামায়াত ও হেফাজতিদের নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাববলয়ে। এখন দেশে অজগ্র মাদরাসা। এইসব মাদরাসার শিক্ষার্থীরা বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদিকে কুফরি কাজ বলে মনে করে ।
১৯৭৫ সালের পর আওয়ামী লীগ ও এর নেতাকর্মীদের আক্রমণ করা হতো একদিকে বাকশালী ও অন্যদিকে নাস্তিক বলে। ধর্মনিরপেক্ষতাকে তারা ধর্মহীনতা বলে প্রচার করে আওয়ামী লীগের নেতাদের জনবিচ্ছিন্ন করার কৌশল নেয়। আওয়ামী লীগ নেতারা ধর্মবিরোধী এই অপপ্রচার ও নিন্দা মোকাবেলার কৌশল হিসেবে বেশি বেশি নামাজ পড়া-রোজা রাখা, হজ্ব করা, মাথায় টুপি দেওয়ার মতো কাজ শুরু করেন। মসজিদ মাদরাসায় যাওয়া আসা ও সাহায্য সহযোগিতা বাড়িয়ে দেন। মধ্যপ্রাচ্যের অর্থের সাথে সাথে সাংস্কৃতিক প্রভাব তার সাথে দীর্ঘ ২৮ বছর শাসক শ্রেণি কর্তৃক রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে সা¤প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কূপমÐুকতা এই সমাজকে গ্রাস করেছে। পোশাক দেখে এখন অনেক সময় বোঝার উপায় থাকে না এটি বাংলাদেশ নাকি আফগানিস্তানের কোনো প্রদেশ।
৩। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে, শ্রেণিবিভক্ত শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে আমাদের দেশে প্রকৃত মানবিক শিক্ষার প্রসার ঘটেনি। অনেক ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থা অন্যতম যেখানে পড়াশোনা করে দেশের ৪০ শতাংশের কাছাকাছি শিক্ষার্থী। কারো কারো মতে ছাত্র সংখ্যা অনুযায়ী শিক্ষাক্ষেত্রে কওমী মাদরাসার স্থান দ্বিতীয় যা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা প্রধানত দুই ধরনের। একটি সরকারি অন্যটি কওমী।
সরকারি (এগুলো সুন্নি মাদরাসা হিসেবে পরিচিত) মাদরাসায় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি নিয়ন্ত্রণ ও নির্ধারণ করে সরকার। অন্যদিকে কওমী মাদরাসায় সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কয়েকবার চেষ্টা করেও সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি সরকার নিয়ন্ত্রিত মাদরাসাগুলোর অনেকাংশে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া চালু করা গেলেও কওমী মাদরাসায় তা সম্ভব হয়নি। এইসব মাদরাসায় অমুসলিম লেখকদের কোনো লেখা পড়ানো হয় না। বিজ্ঞান পড়ানো হয় না। এমনকি এইসব মাদরাসার শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই দেশের বা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসও পড়ে না তাই কিছু জানেও না। কওমী মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থাকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিতে এবং এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের মূলধারার শিক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত করার দাবি বেশ পুরনো। কিন্তু কওমী মাদরাসার নেতাদের বিরোধিতায় তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। শিক্ষার্থীর দিক দিয়ে কওমী মাদরাসা এবং সমর্থকদের দিক দিয়ে হেফজাতে ইসলাম আজ একটি বিশাল সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয় নিবন্ধিত অনিবন্ধিত মিলিয়ে বাংলাদেশে ইসলামী দলের সংখ্যা অর্ধশতেরও বেশি। হেফাজতের মতো সংগঠনের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে দেশে রাজনীতি করা বর্তমানে কঠিন হয়ে পড়েছে এটাই এখন নির্মম সত্য। শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।
সিপিবি ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলো পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে সেদিন হেফাজতকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছিল। সেখানে বিএনপি থেকে শুরু করে এরশাদের জাতীয় পার্টি এমনকি বাঘা সিদ্দিকী বলে খ্যাত মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর রাজনৈতিক দলও লোটা-কম্বল নিয়ে হেফাজতের পাশে দাঁড়িয়েছিল। আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সেদিন হেফাজতের কাঁধে বন্দুক রেখে আওয়ামী লীগ সরকারকে পতনে বাধ্য করার স্বপ্ন দেখেছিল। সেই একই হেফাজত আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছে, শেখ হাসিনাকে ‘কওমী মাতা’ হিসেবে ভূষিত করেছে। এটা দেখে অনেকে হতাশ হলেও মনে রাখতে হবে এখন এটাই রূঢ় বাস্তবতা বাংলাদেশের। আমি এখানে এককভাবে আওয়ামী লীগের কোনো দোষ দেখি না। আমি এই বাস্তবতা মনে না নিলেও মেনে নিয়েছি। কারণ আওয়ামী লীগকে আজ এখানে আসতে এই সমঝোতা করতে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোই বাধ্য করেছে।
নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেন বিএনপি’র রাজনীতির হাল ধরেছিলেন। যে বিএনপি জামায়াতের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। যে বিএনপি দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পুনর্জন্ম দিয়েছে। যে বিএনপি একাত্তরের ও পঁচাত্তরের ঘাতকদের পুনর্বাসিত করেছে। মন্ত্রী বানিয়েছে, সাংসদ বানিয়েছে। যে বিএনপি ২১ আগস্টের মতো ন্যাক্কারজনক, ইতিহাসের ঘৃন্যতম রাজনৈতিক হত্যাকাÐ সংঘটিত করেছে। বিএনপি এখনো জামায়াতকে পরিত্যাগ করেনি যে জামায়াত বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ সৃষ্টির অন্যতম প্রধান প্লাটফর্ম। জেএমবি, হুজি এবং অন্যান্য জঙ্গিবাদী সংগঠন সৃষ্টি হয়েছে জামায়াতের কর্মী-নেতা এবং সে দলের আর্থিক ও সামাজিক সমর্থনে। জঙ্গি সমর্থিত জামায়াতের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিএনপি’র সাথে যদি ড. কামালের মতো লোক যোগ দিতে পারেন, কাদের সিদ্দিকীর মতো লোক যোগ দিতে পারেন সেখানে হেফাজতের সমাবেশে শেখ হাসিনার যোগ দেওয়া কেন ‘হারাম’ বলে বিবেচিত হবে তা বোধগম্য নয়।
এই আওয়ামী লীগই তো বাহাত্তরের সংবিধান রচনা করেছিল। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেছিল। এসব নীতি সংবিধানে সন্নিবেশিত করতে কোনো দলকে আন্দোলন করতে হয়নি। মানববন্ধন করতে হয়নি, সুশীল শ্রেণিকে বিবৃতি দিতে হয়নি, টক শোতে আলোচনা হয়নি, উচ্চ আদালত থেকে রুল জারি করা হয়নি। জনগণের একটি প্রকৃত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে, বাঙালিকে সুসভ্য করার অভিলাষে বঙ্গবন্ধু এবং তার সরকার নিজেরাই তা করেছিলেন। বিরোধীপক্ষ ডান-বাম-মধ্য-উদার-জঙ্গি-ঘাতক-মুক্তিযোদ্ধা মিলে হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ঐক্যবদ্ধ হবেন আর শেখ হাসিনা শুধু নীতি নিয়ে বসে বসে জপ করবেন তাতো হবার নয়।
আজ যারা নিরাপদ দূরত্বে থেকে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সমালোচনা করছেন তারা করতে থাকুন। মনে রাখতে হবে এদের বাবাদের পরামর্শ শুনলে বঙ্গবন্ধু এ দেশ স্বাধীন করতে পারতেন না। এদের বড় ভাইদের কথা শুনলে, পরামর্শ মানলে ২১ বছর পর শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে পুনরায় রাষ্ট্রক্ষমতায় আনতে পারতেন না। আজ তাদের কথা শুনলে, তাদের পরামর্শ নিলে বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ থাকবে না।
বাংলাদেশে মূলত দুটি রাজনৈতিক ধারা। একটি আওয়ামী লীগ অন্যটি আওয়ামী লীগ বিরোধী ধারা। বিভিন্ন নামে অভিহিত হলেও দিনশেষে সবার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। ‘৯১-এর নির্বাচনে পরাজয়ের আগে এই বাস্তবতা অন্য অনেকের মতো শেখ হাসিনাও বুঝতে পারেননি। যখন থেকে বুঝতে পেরেছেন তখন থেকে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশলও পাল্টাতে থাকে। ‘যে দেশের যে রীতি’ নীতিতে তিনি রাজনৈতিক ও দেশ পরিচালনার কৌশল নির্ধারণ করেছেন। নীতিটি অনেকটা ব্রিটিশদের ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’-এর মতো। এই নীতিতে বিএনপি থেকে জামায়াতকে আলাদা করতে না পারলে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা সম্ভব হতো না। শুধু তাই নয়, এরপর জামায়াত -বিএনপি থেকে হেফাজতকে আলাদা করতে না পারলে পরপর তিন টার্ম আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা সম্ভব হতো না। এখন প্রশ্ন হতে পারে এমন সমঝোতা করে কতদিন টিকে থাকবে আওয়ামী লীগ। এটাতো ওষুধ খেয়ে ব্যথা কমিয়ে রাখার মতো হচ্ছে। সময়মতো অপসারণ না করলে ফোঁড়া একদিন ক্যান্সারে রূপ নেবে।
সমস্যা হচ্ছে ফোঁড়া কাটতে গিয়ে রগ কেটে ফেলার ঝুঁকি থাকলে আওয়ামী লীগ সে অপারেশনে রাজি হবে কি না? কারণ আওয়ামী লীগের ঘাড়ের ওপর যতক্ষণ বিএনপি-জামায়াত ও চরম উগ্রবাদীরা নিশ্বাস ফেলবে ততদিন আওয়ামী লীগ কোনো ঝুঁকি নেবে না। আওয়ামী লীগের পরিবর্তে যদি বিএনপি-জামায়াতের মতো দলই ক্ষমতায় আসে সে ক্ষেত্রে জনগণেরও একটি অংশ সে ঝুঁকি নেবে না।
শেষমেষ কথা দাঁড়াচ্ছে এই, সমাজকে পরিবর্তন করতে, সমাজকে মেরামত করতে দেশের প্রগতিশীল দল ও সংগঠনগুলো একাট্টা হতে হবে। আজ সমাজ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে তার দায় আমাদের সবাইকে নিতে হবে এবং সেসঙ্গে উত্তরণের উপায়ও নির্ণয় করতে হবে।
একটি বিষয় ভুলে গেলে চলবে না তা হলো বর্তমান সরকারপ্রধানের অবস্থানের কথা। বিশ্বজুড়ে যখন হিংসার বিস্তার হচ্ছে, দেশে দেশে হানাহানি, অবিশ্বাস ও পারস্পরিক দোষারোপ বাড়ছে এবং সে পরিস্থিতি থেকে এই উপমহাদেশও মুক্ত নয় সে সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, বাংলাদেশে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার নিয়ে বাস করবে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে কথা ওঠানোর চেষ্টা হয়েছে। বাংলাদেশ অসা¤প্রদায়িক চেতনার দেশ। এখানে সব ধর্মের মানুষ সমান সুযোগ নিয়ে চলবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই মাটিতে আমরা এখন মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ আছি বলে অন্য ধর্মের লোকদের ছোট করে দেখব, তা নয়। সবাই এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধে রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। কাজেই এ দেশের মাটিতে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার নিয়ে বাস করবে। যার যার ধর্ম পালনের স্বাধীনতা সবারই থাকবে।’
আওয়ামী লীগের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে একথাগুলো বলেন তিনি। যখন মিয়ানমার অধিকতর বৌদ্ধ ধর্মীয় দেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, ভারতে বিজেপির নেতৃত্বে চরম হিন্দুত্ববাদের বিকাশ ঘটানো হচ্ছে, ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তানের কথা নাই-বা তুললাম তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব ধর্মের মানুষের রাষ্ট্রের কথা বলছেন সে কথাও আমাদের মনে রাখা দরকার।
দেশের এবং বিশ্বের পরিস্থিতি আওয়ামী লীগকে অধিকতর আপোষের রাজনীতির দিকে ঠেলে দিয়েছে যার জন্য আওয়ামী লীগ একা দায়ী নয়। এবং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিতে আজ যে ভয়াবহ সা¤প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটেছে তার জন্য এককভাবে আওয়ামী লীগ দায়ী নয়। সংবিধানে বিসমিল­াহ সংযোজন, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ও দেশে সা¤প্রদায়িকতার বিস্তর ঘটিয়েছে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি অথচ দেশের একশ্রেণির বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিক এর জন্য যতটা না ওই দুই দলকে দোষারোপ করেন তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি করে থাকেন আওয়ামী লীগের যারা এর কোনোটার জন্যই দায়ী নয়।
জাতির কাঁধ থেকে জামায়াত-হেফাজত-উগ্রবাদের বোঝা নামানোর একক দায়িত্ব আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনার ওপর চাপিয়ে না দিয়ে সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করা উচিত। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে চরম অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী শক্তিকে ক্ষমতায় আনার চেষ্টা আত্মঘাতী। বাংলাদেশ এখন যে অবস্থানে আছে বাঙালির সহস্রা বছরের ইতিহাসে এর চেয়ে ভালো থাকার নজির খুঁজে পাওয়া যায় না।
সবকিছুর মধ্যে যারা ভুত দেখছেন তারা দয়া করে ইতিহাসের পুনর্পাঠ করতে পারেন।

লেখক : কবি ও সাংবাদিক