হেঁটে ৬৪ জেলা ভ্রমণে বাবর!

86

কোথায় যেন একবার পড়েছিলাম – ‘হাঁটা জিনিসটা খুব সোজা! হাঁটা মানে পেছনের পা টেনে সামনে নিয়ে আসা!’ স্বল্প দূরত্বে হাঁটা হয়তো সহজ কাজ, কিন্তু সুবিশাল দূরত্বে সেটা যথেষ্ট কঠিন কাজ বলেই ধারণা পর্বতারোহী ও সাইক্লিস্ট বাবর আলীর। সেই কঠিন কাজে হাত তথা পা দিতেই ২৫ অক্টোবর পঞ্চগড় থেকে হাঁটা শুরু করে ৬৪ জেলা ঘুরে কক্সবাজার পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নেন।
যাত্রাপথে ঝরহমষব টংব চষধংঃরপ- এর ব্যবহার কমানোর জন্য মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করবেন। দৈনন্দিন জীবনে আমরা বোতল, প্লেট, গøাস, মগসহ বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার করি। আমাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিকজাত দ্রব্যের মাত্র ১০ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব হয়। বাকি প্লাস্টিক যুগের পর যুগ পরিবেশে অপচনশীল অবস্থায় থেকে যায়। নদীনালার মাধ্যমে সেই প্লাস্টিক সাগরে চলে যায় যা জলজ প্রাণীর বসবাসের পরিবেশ অনুপযুক্ত করে ফেলে। তার মতে, হয়তো পুরোপুরি প্লাস্টিকের ব্যবহার বাদ না দিতে পারলেও সচেতনতার মাধ্যমে তা কমিয়ে আনা সম্ভব। হেঁটে ৬৪ জেলা ভ্রমণের পরিকল্পনাটা তার অনেকদিনের। কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে চাকরি ছাড়ার সময়ই সিদ্ধান্ত ছিল কমপক্ষে ছয় মাসের একটা ব্রেক নেবেন। সেই চিন্তা থেকেই গত দুই মাসে হিমালয় রেঞ্জের ৬ হাজার মিটারের তিনটি পর্বত আরোহণ করে এসেছেন বাবর আলী। এরপরে ২৫ অক্টোবর পঞ্চগড় থেকে হাঁটা শুরু করেন ৬৪ জেলা ঘুরে দেখতে। আনুমানিক ৭০-৮০ দিনে টার্গেট নিয়ে বেরিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে তাকে পাড়ি দিতে হবে তিন হাজার কিলোমিটার পথ। সারাদিন হাঁটবেন আর রাতে বিশ্রাম নেবেন। সবকটি জেলা ছুঁলেও সব কয়টার হয়তো জেলা সদর যেতে পারবেন না। কিছুক্ষেত্রে উপজেলা সদরেও থাকতে হবে তাকে।
তিনি বলেন, এই দীর্ঘ যাত্রাপথে আমার দরকার আপনাদের সাহায্য। আমার মূল যে সহায়তাটা দরকার সেটা হলো আবাসন সংক্রান্ত। আমার যাত্রাপথের কোনো জেলায়/ উপজেলায় আপনার নিজ বাড়ি/ বন্ধু/ আত্মীয়-স্বজন/ সহকর্মীর বাড়িতে আমার থাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারলে আমি খুবই আনন্দিত হবো। বেশ কিছু জেলা/ উপজেলা পরিষদ ডাকবাংলোতে থাকার মতো ব্যবস্থা আমার করা থাকলেও আমি ওসব ডাকবাংলোতে একা রাত কাটানোর চেয়ে মানুষের সঙ্গ অধিক উপভোগ করবো বলেই ধারণা। আর থাকার ক্ষেত্রে আমার এক্সপেকটেশন ন্যূনতম। কোনোরকম পিঠ ঠেকাতে পারলেই হয়। পাহাড়ে যারা যায়, তারা অল্পেই তুষ্ট থাকে কিন্তু! আবাসনের ব্যাপারে কেউ আমাকে হেল্প করতে পারলে এই পোস্টের কমেন্টে কিংবা ইনবক্সে জানাতে পারেন।’ বিশাল এই ভ্রমণ ঠিকভাবে শেষ করা নির্ভর করবে অনেকগুলা ব্যাপারের ওপর। নিজের শারীরিক সুস্থতা, আবহাওয়া, টানা এতদিন হাঁটার ধকল, রাস্তাঘাটে নিরাপত্তা ইত্যাদিই মূল চ্যালেঞ্জ।
২০১৭ সালে বেসিক মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স করেন ভারতের উত্তরকাশীর নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং থেকে। ভারতের বিভিন্ন রক ক্লাইম্বিং কোর্সে প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন।
কাপ্তাই কায়াক ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে একজন তিনি। কায়াক নিয়ে বেশ কিছু এক্সপিডিশনও করেছেন। এর মধ্যে কাপ্তাই-বিলাইছড়ি, কাপ্তাই-রাঙামাটি উল্লেখ্যোগ্য। সাইকেলে ক্রস কান্ট্রি রাইড সম্পন্ন করেছেন দু’বার। ২০১৬ সালে আখাউড়া-মুজিবনগরে এবং পরে ২০১৭ সালে টেকনাফ-তেঁতুলিয়ায়।
পেশায় চিকিৎসক বাবর আলীর জন্ম হাটহাজারী উপজেলার মধ্যম বুড়িশ্বর গ্রামে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। বিভিন্ন হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। পরে যোগ দেন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে।