হু হু করে বাড়ছে কাগজের দাম

21

আসহাব আরমান

অস্থিরতা বিরাজ করছে কাগজের বাজারে। হু হু করে বাড়ছে দাম। সবধরনের কাগজের দাম বেড়ে হয়েছে তিনগুণ। পাইকারিতে কাগজের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় পণ্যের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গত কয়েক মাস ধরে দফায় দফায় কাগজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছে মুদ্রণ শিল্প-কার্টন ও শিক্ষাসামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠনগুলো। প্রভাব পড়েছে খুচরা বিক্রেতা ও ভোক্তাদের মধ্যেও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে দেশের বাজারেও বেড়েছে কাগজের দাম। এছাড়া দেশে তৈরি কাগজের প্রায় সবধরনের কাঁচামালই আমদানি করতে হয়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে জাহাজ ভাড়া বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। ফলে মুদ্রণ সংশ্লিষ্ট কেমিক্যালের দামও বেড়েছে। পাশাপাশি বিদেশি কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে দেশি কাগজের চাহিদা।
নগরীর বিভিন্ন ছাপাখানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে কাগজের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। গত ৬ মাসে দেশি ও বিদেশি কাগজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ। দেশীয় কাগজ যেটি আগে রিম প্রতি দাম ছিল ২ হাজার ১০০ টাকা, তা এখন কিনতে হচ্ছে ৩ হাজার ৩০০ টাকায়। অন্যদিকে কার্ড/বোর্ড টাইপের যে বিদেশি কাগজ রয়েছে সেগুলোতে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশের বেশি।হোয়াইটপ্রিন্ট কাগজের দাম টনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। প্রতিটন হোয়াইট নিউজপ্রিন্ট কাগজের দাম ২০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায়। এছাড়া লেজার কাগজ প্রতিটনের দাম ৩০ হাজার টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। প্রতিটন নিউজপ্রিন্ট কাগজের দাম ৬৪ হাজার থেকে বেড়ে ৮৫ হাজার টাকা হয়েছে। কম দামি এ কাগজের দাম বেড়েছে ৩৩ শতাংশ।
আন্দরকিল্লা এলাকার কোয়ালিটি প্রিন্টার্স এন্ড সাপ্লাইয়ার্সের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সেলিম চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, সবধরনের কাগজের দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশের বেশি। এলসি খুলতে না পারায় আমদানি বন্ধ রয়েছে। ফলে দেশীয় কাগজের দাম বেড়েছে। একইসাথে বেড়েছে বিদেশি কাগজের দামও। তবে বিদেশি কাগজের তুলনায় দেশি কাগজের চাহিদা ও দাম দুটোই বেড়েছে। তিনি বলেন, বার বার দাম বাড়ায় আমরা আগের দামে পণ্য সরবরাহ করতে পারছি না। অনেক সময় অর্ডার নেওয়ার পর দেখা যায় কাগজের দাম বেড়ে গেছে, ফলে লস হয়। কাগজের দাম বৃদ্ধির অনুপাতে বেশি দামে আমাদের পণ্যগুলো বিক্রি করতে পারছি না।
এদিকে কাগজ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উপকরণের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। পাইকারিতে ১২০ পৃষ্ঠার এক ডজন খাতা আগে বিক্রি হয়েছিল ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায়। এখন তা ৪০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এছাড়া ডায়েরি, নোটবুক, বিভিন্ন ফাইলপত্র, লেজার খাতা, বক্স ফাইল, খাতার মতো কাগজের উপকরণের দাম ৩০ শতাংশের মতো বেড়েছে।
নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার জাহিন লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী মাওলানা শামসুল আলম পূর্বদেশকে জানান, বেশিরভাগ স্টেশনারি সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মাঝারি আকারের ১০০টি খাকি খামের দাম ২৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা। এছাড়াও খাতা, নোটবুক, ডায়েরি ও কাগজ সংশ্লিষ্ট সকল পণ্যের দাম বেড়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রেস মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক লায়ন মো. আয়ুব পূর্বদেশকে জানান, কাগজের দামবৃদ্ধিতে প্রেস ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে দফায় দফায় কাগজের দাম বাড়ছে। রাশিয়া ইউক্রেন-যুদ্ধের কারণে কাগজ আমদানি কমে এসেছে। ফলে দেশীয় কাগজের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম বেড়েছে উল্লেখ্যযোগ্য হারে। এছাড়া রং, কেমিক্যাল ও কেরোসিন তেলসহ মুদ্রণ শিল্পের সবধরনের উপকরণের দাম বেড়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে মুদ্রণ শিল্প।