হুম্মামকে দেশ ছেড়ে যেতে বললেন শামসুদ্দিন

24

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধর্মান্ধ ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর অত্যাচারে স্বাধীনতাত্তোরকালে বাধ্য হয়ে দেশত্যাগকারি সকল বাংলাদেশী নাগরিককে স্বদেশে ফিরিয়ে আনার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতের জন্যে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে দেশ ছেড়ে চলে যেতেও বলেন।
গতকাল শুক্রবার নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ-চট্টগ্রাম মহানগর শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি দাবি জানান।
সম্মেলনে এ বিচারপতি আরো বলেন, সাম্প্রদায়িক দ্বি-জাতি তত্তে¡র খোলস ছেড়ে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকল বাঙালি-আদিবাসীর মিলিত রক্তস্রোতে জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর চেতনা থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। বঙ্গবন্ধুর যে আদর্শ নিয়ে বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ করেছে তাকে নস্যাৎ করে মেজর জিয়া থেকে জেনারেল এরশাদ এদেশকে পাকিস্তানীকরণ করেছে, স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। আজও প্রশাসনে, বিচারবিভাগে, রাজনীতিতে, পুলিশ বাহিনীতে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দোসররা ক্রিয়াশীল। অথচ তাদের বিরুদ্ধে সরকারের দৃশ্যমান উদ্যোগ আজও দেখা যাচ্ছে না। সারাদেশে ওয়াজ মাহফিলের নামে ধর্ম ব্যবসায়ীরা মুক্তিযুদ্ধ, সংখ্যালঘু ও নারীদের বিরুদ্ধে একটানা বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছে। এদের ব্যাপারেও সরকারের ভ‚মিকা আরও কঠোর হতে হবে।
এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, রাষ্ট্রের কোন ধর্ম থাকতে পারে না। রাষ্ট্রধর্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থি। তিনি বলেন, বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা ছাড়া প্রকৃত অর্থে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রগতিশীলতার পক্ষে দেশকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নেওয়ার এখনই সময়। তিনি বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘুদের উপর হামলাকারীদের আজও দৃশ্যমান কোন শাস্তি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এহেন পরিস্থিতি ভবিষ্যৎ নিয়ে সংখ্যালঘুদের আতঙ্কিত করে তুলেছে।
বিচারপতি মনিক সংখ্যালঘু-আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ন্যায্য দাবির প্রতি আন্তরিক সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, ২০০১ সালের সাম্প্রদায়িক ঘটনা নিয়ে শাহবুদ্দিন কমিশনের রিপোর্ট আজও বাস্তবায়নে সরকারি কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে কোন অবস্থাতেই ধর্মান্ধ শক্তি বা তাদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকদের পক্ষে একটি ভোটও যাতে না পরে।
প্রকৌশলী পরিমল কান্তি চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষের পরিচালনায় এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন উদ্বোধক সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. জিনবোধি ভিক্ষু, উপদেষ্ঠা সুকুমার চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইন্দু নন্দন দত্ত, অভিজিৎ ধর বাপ্পি, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি তাপস হোড়, কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্তা, প্রকৌশলী শুভ্র দেব কর, অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী ও উত্তম কুমার শর্মা। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন সহ-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ পালিত। এর আগে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন যথাক্রমে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক। অতিথিবৃন্দ শান্তির প্রতীক পায়রা ও পেস্টুনসহ বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
সম্মেলনে ঘোষিত ও অনুমোদিত বিষয় নির্ধারণী কমিটির সভায় সর্বসম্মতভাবে প্রকৌশলী পরিমল কান্তি চৌধুরীকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত উপস্থিত সকলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উক্ত দুইজনের নাম অনুমোদন দেন।