‘হুন্ডি’ রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় বাধা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ জরুরি

14

এদেশের অর্থনৈতিক সোর্সগুলোর অন্যতম রেমিট্যান্স। দেশের লাখো মানুষ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে শ্রম বিক্রি করে এ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন। এতে প্রবাসী পরিবার যেমন উপকৃত হয় তেমনি দেশের অর্থনীতিও সচল হয়। ব্যাংক ও সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন মানি ট্রান্সফার ও এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে এ রেমিট্যান্স দেশে আসে। এ পদ্ধতি নিরাপদ ও কল্যাণকর হলেও একশ্রেণির মানুষ অবৈধ পথে ‘হুন্ডি’র মাধ্যমে বিদেশ থেকে তাদের কষ্ট উপার্জিত অর্থ পরিবারের কাছে পাঠিয়ে থাকেন। এটি অবৈধ পন্থাই নয় শুধু ঝুঁকিপূর্ণও বটে। সম্প্রতি বৈশ্বিক মন্দার কারণে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে শুরু করলে সরকারের টনক নড়ে। তাদের বোধদয় হয় এ অবস্থায় হুন্ডির লাগাম না টানলে রেমিট্যান্স প্রবাহ ভয়াবহ রকমের হ্রাস পেতে পারে। আমরা মনে করি, দেরিতে হলেও সরকার এ বিষয়ে তাদের মনোযোগ দেয়ায় হুন্ডি ব্যবসায়ীদের তৎপরতা কিছুটা হলেও কমবে। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, হুন্ডি হচ্ছে অর্থ পাচারের একটি ভয়ংকর রূপ ও মাধ্যম। অভিযোগ আছে, হুন্ডি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। এই অভিযোগ যে অমূলক নয় তা স্পষ্ট হয় হুন্ডি ব্যবসায়ীদের প্রভাব বিস্তারের প্রবণতা থেকে। মুহূর্তের মধ্যে তারা বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তরের ক্ষমতা রাখে। হুন্ডির মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীরা বিদেশে অর্থ পাচার করে বাড়ি বানাচ্ছেন, জমি কিনছেন, কারখানা গড়ছেন। বিদেশে অর্থ পাচার হলে দেশের অর্থনীতির ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তাতে কারো কোনো সন্দেহ নেই। কোনোভাবেই অর্থ পাচার রোধ করা যাচ্ছে না, তেমনি পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার কোনো প্রচেষ্টাও আমরা দেখছি না। এ পর্যন্ত অর্থ পাচার রোধে যত কথা হয়েছে, সে অনুপাতে কি কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? হয়নি। অর্থ পাচার রোধ কঠিন বিষয় নয়। সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সব বিভাগেরই যদি সমতৎপরতা থাকে এটি রোধ করা সম্ভব। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্বজুড়ে চলছে ডলার সংকট। এই পরিস্থিতির শিকার হয়ে যখন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে আর ব্যাংক ও খোলাবাজারেও চলছে ডলারের সংকট; তখন জানা গেল, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করে গত এক বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রতিটি চক্র প্রায় ৩ কোটি টাকা হুন্ডি করেছে। শুধু তাই নয়, এমএফএসের দুই হাজার এজেন্ট সিমের মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন করেছে বলে তথ্য পেয়েছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিট। গত সপ্তাহে কুমিল্লা ও ঢাকায় অভিযান চালিয়ে এমন একটি চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পেয়েছে সিআইডি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গেøাবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অর্থ পাচারের পরিমাণ বাড়ছে। বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে আলাপ-আলোচনার কথাও শোনা যায় কিন্তু কার্যত সেই উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। মাত্র একবার ২০০৭ সালে আমরা একটি ঘটনায় মাত্র ২১ কোটি টাকা ফেরত আনার কথা জেনেছি। এরপর এ ধরনের উদ্যোগ আর নেয়া হয়নি বা হলেও তার সফলতার খবর আমরা জানতে পারিনি। সুখের বিষয়, আমরা ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হব এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার আশা করছি। দেশে যে হারে দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে এবং এর মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে, তাতে এসব লক্ষ্য অর্জন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। আমরা আশা করি, সরকার হুন্ডির বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করেছে, তা অব্যাহত রাখবে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে দেশে কিংবা দেশ থেকে বিদেশে বৈধ পথে টাকা স্থানান্তরের চ্যানেলগুলো আরো সহজ করার উদ্যোগ নিতে হবে।