হাসপাতালে বৈকালিক প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু

9

পূর্বদেশ ডেস্ক

দেশের সরকারি হাসপাতালে ফি দিয়ে রোগীরা এখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের থেকে বৈকালিক সেবা পাবেন। প্রাথমিকভাবে ৫১টি সরকারি হাসপাতালে এই সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের বৈকালিক চেম্বার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসকরা বিকালে নিজ কর্মস্থলে বসে রোগী দেখবেন। আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক প্র্যাকটিস শুরু করতে যাচ্ছি। এতে বিকাল ৩টা থেকে সাধারণ মানুষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা নিতে পারবেন।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘অল্প-সময়ের নোটিসে আজকে যেসব হাসপাতাল প্রস্তুত হতে পেরেছে, সেগুলোকে আজ যুক্ত করেছি। বিশেষ কোনো ক্রাইটেরিয়ার (বৈশিষ্ট্য) মাধ্যমে না। প্রথমে আমরা ২০টি উপজেলার কথা বলেছিলাম, এখন তা ৩৯টি হয়েছে। কারণ এরা সবাই প্রস্তুত, আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা আশা করছি, এ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সব হাসপাতালেই এই প্রাতিষ্ঠানিক প্র্যাকটিস চালু করতে পারব।’
পটিয়া : পটিয়া প্রতিনিধি জানায়, পটিয়া হাসপাতলে বৈকালিক প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা। গতকাল সরকারি কর্মসময় শেষে বিকাল তিনটা থেকে দুইজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারসহ মোট তিনজন ডাক্তার সেবা দিয়েছেন। তবে বিকাল পর্যন্ত মাত্র ১০ জন রোগী এ সেবা নেন। এখনো তেমন প্রচার না হওয়ায় রোগীর অপ্রতুলতা ছিলো। সংশ্লিষ্টদের ধারণা আগামী সপ্তাহ থেকে বাড়বে রোগীদের চাপ। গতকাল বিকাল ৩টায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সেবার উদ্বোধন করেন। পটিয়া থেকে এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী তাতে যুক্ত হন। এ সময় চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সব্যচাচী নাথ, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে দেশের বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা সদর হাসপাতালে সরকারি চিকিৎসকদের ‘প্রাতিষ্ঠানিক প্র্যাকটিস’ শুরু হয়। চট্টগ্রাম জেলায় একমাত্র পটিয়া উপজেলায় এ সেবা চালু করা হয়েছে। ‘সরকারি চিকিৎসকদের বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা’ চালুর কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীরা ¯¦ল্প মুল্যে আরো বেশি সেবা পবেন। সরকারি চিকিৎসকদের কর্মসময়ের পর হাসপাতালেই ব্যক্তিগত রোগী দেখার সুযোগ করে দেয়া হয়। বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টায় এ সেবায় নার্স ও টেকনিশিয়ানরা সপ্তাহে দুদিন কাজ করবেন। তারা যে সেবা দেবেন তার বিনিময়ে তাদের সম্মানী নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাপ্ত সম্মানীর একটি অংশ চিকিৎসকরা পাবেন, বাকি অংশ অন্যরা পাবেন। সরকারও একটি অংশ পাবে।
পটিয়া স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সব্যচাচী নাথ জানান, চট্টগ্রামের একমাত্র পটিয়া এ সেবার জন্য বাছাই করা হয়েছে। গত বুধবার এ সংক্রান্তে একটি পত্র পেয়েছি। এর পরপরই গতকাল এ সেবা চালু করেছি। সকালে পটিয়া আসনের এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এ সেবার উদ্বোধন করেন। বিকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
এ সেবার উদ্বোধন শেষে প্রতিক্রিয়ায় হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বলেন, অনেক টাকা খরচ করে জটিল রোগীদের নগরীতে যেতে হতো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সেবা নিতে। এখন থেকে পটিয়া হাসপাতালে এ সেবা চালু হওয়ায় টাকা ও সময় উভয়ে সাশ্রয় হবে। জাতির জনকের স্বপ্ন প্রান্তিক জনগোষ্ঠির দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া। সে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে এ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব ধরনের উন্নয়নে পটিয়াকে অগ্রাধিকার দিয়ে গেছেন।
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ কার্যক্রম উদ্ধোধন করেন। এ উপলক্ষে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালের সম্মেলনকক্ষে এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দীন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রæ চৌধুরী অপু, স্বাস্থ্য বিভাগের আহŸায়ক এম এ জব্বার, হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. শহিদ তালুকদার, সিভিল সার্জন ডা. মো. ছাবের, হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রিপেল বাপ্পী চাকমা। এছাড়া হাসপাতালের সিনিয়র ডাক্তার-নার্স এবং স্টাফসহ চিকিৎসা নিতে আসা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনের পরপরই খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে বিকাল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান শুরু করেন। প্রথম দিনেই সিনিয়র হৃদরোগ ও ডায়বেটিক বিশেষজ্ঞ ডা. সৈয়দুল আলম কোরাইশি, অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ ডা. সুবল জ্যোতি চাকমা, গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. জয়া চাকমা, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ওমর ফারুক রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন।
চিকিৎসা নিতে আসা পেশায় রাজমিস্ত্রি ফারুক হোসেন জানান, সরকারের এ কার্যক্রম তাদের জন্য সুফল বয়ে এনেছে। মাত্র ৩০০ টাকায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সেবা পাচ্ছেন। পাহাড়ে এ ধরনের সেবা পেয়ে তিনি খুশি। তার মতো আরও অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে আনন্দের সঙ্গে বাড়ি ফেরেন।
বিশেষজ্ঞ ডা. সৈয়দুল আলম কোরাইশি বলেন, রোগীদের জন্য সরকারের এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। সাধারণ মানুষ এর ফলে বেশ উপকৃত হবে।
এছাড়াও বান্দরবানের লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কক্সবাজারের জেলা সদর হাসপাতাল ও পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ সেবা শুরু হয়।
সরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকের মতোই সরকারি হাসপাতালে নামমাত্র ফি দিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর সুযোগ সৃষ্টি হলে বিষয়টি নিয়ে প্রচারণার অভাবে কোথাও রোগীর অনুপস্থিতি ছিল বলে জানা গেছে। এ জনহিতকর কার্যক্রমের সুফল যাতে দুস্থ দরিদ্র রোগীরা পায় সে বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।