হালদায় ৪ বছরে ৩১ ডলফিনের মৃত্যু

18

হাটহাজারী প্রতিনিধি

চারদিনের ব্যবধানে হালদায় আবারও ভেসে উঠেছে অতিবিপন্ন প্রজাতির মিঠাপানির একটি মৃত ডলফিন। গতকাল সোমবার দুপুরে হাটহাজারী উপজেলার উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের হালদা নদী থেকে ডলফিনটি উদ্ধার করা হয়। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে হালদায় এ পর্যন্ত গত চার বছরে দূষণমুক্ত পরিষ্কার পানিতে বিচরণ করা ৩১টি ডলফিনের মৃত্যু নিয়ে বেশ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় রয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহিদুল আলম জানান, রামদাস মুন্সীর হাট এলাকায় নদীতে একটি মৃত ডলফিন ভাসতে দেখে জনৈক খোরশেদ আলম উপজেলা প্রশাসন এবং নৌ পুলিশকে খবর দেয়। পরে হালদা অস্থায়ী নৌ পুুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মো. আশরাফুল ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মৃত ডলফিনটি উদ্ধার করে। পরবর্তীতে ওই এলাকায় নদীর পাড়ে মৃত ডলফিনটি মাটিচাপা দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়কারী হালদা গবেষক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদা নদীতে রামদাস মুন্সীর হাট এলাকা থেকে উদ্ধারকৃত মৃত ডলফিনটিতে পচন ধরেছে। এটি ছিল হালদা নদী থেকে উদ্ধারকৃত ৩১তম মৃত ডলফিন। ডলফিনটির দেহে পচন ধরার কারণে শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন আছে কিনা তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে ডলফিনটির মৃত্যু কিভাবে হয়েছে তা প্রয়োজনে দুই মাস পর মাটিচাপা দেয়া ডলফিনের কঙ্কাল (অস্থি বা হাড়) তুলে ময়নাতদন্ত (পরীক্ষা) করবেন বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে, প্রায় সাড়ে ৫-৬ ফুট দৈর্ঘ্যরে এবং প্রায় ৬০-৭০ কেজি ওজনের মৃত ডলফিনটি আইইউসিএন এর লাল তালিকায় অন্তর্ভূক্ত এমনটা দাবি করে ওই হালদা গবেষক বলেন, ডলফিনের এই প্রজাতিটিকে অতিবিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। হালদায় যে ডলফিন দেখা যায়; তা স্থানীয়ভাবে উতোম বা শুশুক নামে পরিচিত। মিঠাপানির স্তন্যপায়ী এই প্রাণী গেঞ্জেস বা গাঙ্গেয় ডলফিন। সাধারণত পরিবেশ নিদের্শক এসব ডলফিন দূষণমুক্ত পরিষ্কার পানিতে বিচরণ করে। প্রসঙ্গত, গত ৩০ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ মাদার্শার বড়ুয়া পাড়া এলাকায় মাছের জন্য পাতানো ঘেরা জালে আটকে ৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪০ কেজি ওজনের একটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়। এটি ছিল হালদা নদী থেকে উদ্ধারকৃত ৩০তম মৃত ডলফিন। ডলফিনটির দেহ পচে যাওয়ায় শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
গবেষকদের মতে, বর্তমান পৃথিবীতে এই অতি বিপন্ন প্রজাতির আর মাত্র ১২০০ থেকে ১৮০০টি ডলফিনের সদস্য অবশিষ্ট রয়েছে। এরমধ্যে হালদা নদীতে রয়েছে ২০০-২৫০টি ডলফিন। এগুলোর মধ্যে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৬ মাসে হালদা নদীতে ১৮টি মৃত ডলফিন পাওয়া যায়। এত বেশি সংখ্যক ডলফিনের মৃত্যুর ঘটনা অনুসন্ধান করে চবির হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির পক্ষ থেকে তা ঠেকাতে সরকারের কাছে কয়েক দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বালুমহাল ইজারা দেওয়া বন্ধ এবং নদীতে ড্রেজার চলাচল নিষিদ্ধ করা। কারণ অধিকাংশ ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে ড্রেজারের প্রপেলারের আঘাতে বলে তাদের অনুসন্ধানে উঠে আসে।