হালদায় নিষিদ্ধ ইঞ্জিন নৌকা ও ড্রেজারের ‘অত্যাচার’ বেড়েছে

92

হাটহাজারী, রাউজান ও ফটিকছড়ির মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া দেশের একমাত্র মিঠা পানির নদী হালদা। কার্প জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) মা-মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র এ নদীতে নিষিদ্ধ ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলাচল ও ড্রেজার নিয়ে বালু উত্তোলন কর্মকান্ড বেড়েছে। মা-মাছের ডিম ছাড়ার আগাম সময়ে এসব ড্রেজার দিয়ে রাতের অন্ধকারে নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। একই সাথে ইঞ্জিন চালিত নৌকা দিয়ে বালু পরিবহন করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে বিপন্ন হচ্ছে হালদা নদী ও পাড়ের জীববৈচিত্র্য এবং তাদের আবাসস্থল।
রাজনৈতিক পরিচয়ে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এসব ড্রেজার ব্যবহার করছেন। আর প্রতিদিন লুটে নিচ্ছেন কোটি টাকার সম্পদ। এতে ক্রমেই ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে হালদা। ফলে কার্প জাতীয় বিভিন্ন প্রজাতির মা-মাছের অবাধ বিচরণ ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি মা-মাছ মারা যাওয়াসহ নদীর পাড়, বসতঘর ও প্রতিষ্ঠান ভাঙনের মুখে পড়ছে। এছাড়া সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
কয়েকজন মৎস্যজীবী অভিযোগ করে বলেন, নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের কর্তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে রাতে ড্রেজার বসিয়ে নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে বালু তোলা হচ্ছে। এতে ৪০ কিলোমিটার জুড়ে ভাঙছে হালদা নদীর দু’পাড়। পাশাপাশি পাড় সংলগ্ন বিভিন্ন বসতঘর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ভাঙনের মুখে পড়েছে। সরকার ভাঙনরোধে কোটি টাকা ঢাললেও বালু তোলা বন্ধে কোন ব্যবস্থা নেই। কেই এর প্রতিবাদ করলে তাকে এলাকা ছাড়া হতে হয়।
হালদা পাড়ের গড়দুয়ারা ইউনিয়নের বাসিন্দা মৎস্যজীবী কামাল সওদাগর জানান, নদীতে মা-মাছের ডিম ছাড়ার আগাম সময়ে ড্রেজার ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা অবাধে চলাচল করছে। এসব ড্রেজার ও নৌকা দিয়ে সমানে বালু উত্তোলন ও পরিবহন করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে একটি সিন্ডিকেট।
তিনি জানান, ড্রেজারের আঘাতে মৎস্যসহ নানা প্রাণীকুলের প্রাণহানি ঘটছে। কয়েক দশক ধরে দখল-দূষণে বিপন্ন হচ্ছে হালদা। মৎস্যকুল ধ্বংসের পথে। মরে ভেসে উঠছে বিরল প্রজাতির ডলফিনও। হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
গতকাল শনিবার বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড. মো. মঞ্জুরুল কিবরিয়া জানান, আমি বর্তমানে হালদা নদীতে অবস্থান করছি। বালু উত্তোলন জন্য মারাত্মক হুমকি। তাছাড়া কার্প জাতীয় মা-মাছের ডিম ছাড়ার আগাম সময়ে হালদার বুকে নিষিদ্ধ ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও ড্রেজারের আনগোনা শুভকর নয়। এই গবেষক আরও বলেন, বালু উত্তোলনের কারণে নদীর তলদেশের মাটির গঠন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, শব্দ দূষণ বাড়ছে, পানি ঘোলা হচ্ছে, সূর্যের আলো ঠিকভাবে পৌঁছে না, বালুর সাথে জলজ প্রাণিও উঠে আসছে। এতে জলজ জীববৈচিত্র্যে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব তো পড়ছেই, সেই সাথে বালু তোলার ড্রেজারের আঘাতে প্রায়ই মারা যাচ্ছে অমূল্য জীববৈচিত্র্য। বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে নদীর পরিবেশ মাছের প্রজননের প্রতিকুলে চলে যাবে। এছাড়া নদী পাড়ের বসতঘর ও প্রতিষ্ঠান ভাঙনের মুখে পড়বে।