হালদার জীববৈচিত্র্য নষ্ট করেছে পাউবো

28

রাহুল দাশ নয়ন

হালদায় এবার প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিম ছাড়েনি মা মাছ। ডিম ছাড়ার বিশেষ স্থান নদীর কুম (গভীর এলাকা) ভরাট হওয়ার কারণে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারেনি। আর নদীর কুম ভরাট হওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) দুষছে মৎস্য অধিদপ্তর। গত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ বাস্তবায়ন কমিটির ভার্চুয়াল সভাতেও পানি উন্নয়ন বোর্ড হালদার জীববৈচিত্র নষ্ট করছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তীররক্ষা প্রকল্পের দুই পাশে বাঁধ দেয়া এবং পাথর বøক ফেলে ৯টি কুম ভরাট করার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান মৎস্য কর্মকর্তারা। সেই সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও যুক্ত ছিলেন।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান মজুমদার পূর্বদেশকে বলেন, ‘হালদার কুমের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলায় কুমের গভীরতা কমে গেছে। হালদায় ২৯টি কুমের মধ্যে ৯টির মতো ভরাট হয়ে গেছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র সাত্তারহাট পয়েন্টেই ফেলা হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার জিও ব্যাগ। যে কারণে মা মাছ তেমন ডিম দিতে পারে নাই। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার অনেক কম ডিম দিয়েছে।’
জানা যায়, হালদা নদী দক্ষিণ এশিয়ার একক কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র। হালদা নদীর অঙ্কুরিঘোনা থেকে রামদাসহাট পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে। যেখানে মা মাছ ডিম ছাড়ে এমন ২৯টি গভীর এলাকা (কুম) আছে। এই কুম ভরাটের কারণে হালদায় এ মৌসুমে প্রত্যাশিত ডিম মিলেনি। এতে ডিম সংগ্রহকারীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ বাস্তবায়ন কমিটির সর্বশেষ সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের কারণে হালদা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানানো হয়। সভায় বলা হয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক হালদা নদীর কিছু অংশে নদীর দুই পার্শ্বে বাঁধ দেয়ার ফলে নদীতে বর্তমানে একটি বদ্ধ পরিবেশ বিরাজ করছে। নদীর স্বাভাবিক গতি প্রবাহে বাঁধার সৃষ্টি হচ্ছে যা জীববৈচিত্রের জন্য হুমকি। নদীর ভিতরে কুম ভরাট করার ফলে প্রজনন স্থান সংকুচিত হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের চলমান কার্যক্রমের কারণে হালদার ৯টি কুম ভরাট করে ফেলেছে যা হালদার জন্য বিরাট ক্ষতি। পূর্বে কিছু কিছু কুমের গভীরতা ১৯ মিটার থাকলেও বর্তমানে তা ৯ মিটারে নেমে এসেছে। গত ফেব্রæয়ারি মাস হতে ইঞ্জিন চালিত নৌকা বন্ধ থাকার সিদ্ধান্ত থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড তা মানেনি। হালদা নদীর জীববৈচিত্র রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ বাস্তবায়ন কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করে সরকার। গেজেটের ৪(ঠ) মোতাবেক রুইজাতীয় মাছের প্রাক-প্রজনন এবং প্রজনন মৌসুম (মার্চ-জুলাই) পর্যন্ত ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলাচল করতে পারবে না বলে জানানো হয়। সরকারি এই নির্দেশনার কারণে প্রায় এক বছর হালদা নদীরক্ষা প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। গত বছরের ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মা মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুম শেষে কাজ করার নির্দেশনা দিলে পুনরায় প্রকল্প কাজ শুরু হয়। ১৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীরক্ষা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পাউবো।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. রমজান আলী প্রামাণিক পূর্বদেশকে বলেন, ‘হালদায় প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট কোনো কুম আমরা নষ্ট করিনি। বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জরিপ করেই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। জরিপ দেখেই যেখানে কুম আছে সেখানে জিও ব্যাগ কিংবা ব্লক ফেলা হয়নি। আমাদের দ্বারা কুম ভরাট হয়েছে বলে মনগড়া কথা বলা হচ্ছে। মানুষের প্রয়োজনীয়তার কথা চিন্তা করেই নদীভাঙন রোধে হালদায় প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজও শেষ হয়েছে।’