হারিয়ে গেছে হলুদ নীল খামের চিঠি

14

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘করুণা করে হলেও চিঠি দিও, খামে ভরে তুলে দিও/ আঙ্গুলের মিহিন সেলাই/ ভুল বানানেও লিখো প্রিয়, বেশি হলে কেটে ফেলো তাও,/ এটুকু সামান্য দাবি, চিঠি দিও, তোমার শাড়ির মতো/ অক্ষরের পাড়-বোনা একখানি চিঠি।’- কবি মহাদেব সাহা’র ‘চিঠি দিও’ কবিতার মতো এখন কেউ তার প্রেমিকাকে এমন কথা বলে না।
হারিয়ে গেছে চিঠি! হারিয়ে গেছে হলুদ, নীল খামে প্রিয়জনকে কাগজে লেখার সেই আবেগ। ফুরিয়ে গেছে ডাকঘরের মাধ্যমে চিঠি পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা। এ কারণে ডাক বিভাগেরও এখন সেই ব্যস্ততা নেই। সাইকেলের বেল বাজিয়ে ডাক পিয়নের ‘চিঠি এসেছে…চিঠি…’ এমন কথাও আর শোনা যায় না।
এখন চিঠি শূন্য ডাকঘর। এমনকি চিঠির প্রচলন নেই বললেই চলে। অথচ এক সময় ডাক বিভাগ ছিল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। চিঠি, পণ্য, পার্সেল, টাকা পরিবহনের একমাত্র ভরসা ছিল ডাক বিভাগ। পরিবারের কেউ দেশের বাইরে কিংবা অন্য কোথাও অবস্থান করলে তার খোঁজ নেওয়া হতো চিঠির মাধ্যমে। তাকে বাড়ির খোঁজ দেওয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিল এই চিঠি লিখন পদ্ধতি। তাছাড়া প্রেমিক প্রেমিকাকে, ভাই বোনকে ও বোন ভাইকে, মা ছেলেকে, বাবা ছেলেকে, ছেলে বাবা-মাকে নিজের অবস্থান জানাতে চিঠি লিখতেন। কিন্তু সময়ের সাথে সব বদলে গেছে।
আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া আজ শহর ছেড়ে অজপাড়া গাঁয়েও পৌঁছে গেছে। এ কারণে হাতে লেখা চিঠির কদর কমে গেছে। তাই এখন আর ডাক বক্সগুলো ব্যবহার হয় না। দু’একটি ছাড়া বেশির ভাগই ভাঙা ও মরিচা পড়ে নষ্ট হওয়ার পথে। এখন মুঠোফোনে এসএমএস, মেইল আর ফেসবুকে ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন চ্যাটঅ্যাপ প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এখন বিদেশে যোগাযোগ করলে ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে সরাসরি দেখা সম্ভব হচ্ছে।
তবে চিঠির আনন্দ কোনভাবেই প্রযুক্তির মধ্যদিয়ে পাওয়া সম্ভব নয়। চিঠিতে এক ধরনের আবেগ আছে; কাগজে লেখা সে চিঠির ভাষা আর কম্পিউটারের কি-বোর্ড কিংবা সেলফোনের কি-প্যাডে লেখার মধ্যে সে আবেগ কাজ করে না।
আজ (৯ অক্টোবর) বিশ্ব ডাক দিবস। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ডাক অধিদপ্তর এ দিবসটি পালন করবে। এ উপলক্ষে ডাক অধিদপ্তরের উদ্যোগে আলোচনা সভা, পত্রলিখন প্রতিযোগিতা এবং বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘পোস্ট ফর প্ল্যানেট’। বাংলায় যার অর্থ হলো: ‘বিশ্বের জন্য ডাকঘর’।
উল্লেখ্য, ১৮৭৪ সালের ৯ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরে ২২টি দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গঠিত হয় ‘ইউনির্ভাসেল পোস্টাল ইউনিয়ন’। পরবর্তীতে এ সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতিসংঘে উত্থাপিত একটি প্রস্তাব পাসের মাধ্যমে ১৯৬৯ সালে ৯ অক্টোবরকে বিশ্ব ডাক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ইউনিভার্সেল পোস্টাল ইউনিয়ন (ইউপিইউ) এবং আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদস্য পদ লাভ করে। এরপর থেকে দেশে প্রতিবছর বিশ্ব ডাক দিবস পালিত হয়ে আসছে।
মোস্তাফা জব্বার বিবৃতিতে বলেন, আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো চিঠিপত্রের যুগ শেষ হওয়ায় দুর্দশাগ্রস্ত ডাক সার্ভিসকে একটা ভাল অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। আমরা ইতোমধ্যে সেটা অনেকটা পেরেছি। ই-কমার্সের জন্য ডাকঘর এখন একটা নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
দেশব্যাপী ডাকঘরের যে বিশাল অবকাঠামো ও জনবল আছে তা দেশের অন্য যেকোন প্রতিষ্ঠানের নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, হিমায়িত খাবার থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় ক্রেতার হাতে পৌঁছে দিতে ডাকঘরের বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, ডাকঘর ডিজিটাইজেশনের অভিযাত্রার ধারাবাহিকতায় পয়েন্টস অব সেলস মেশিনের মাধ্যমে ডাকদ্রব্যে সংযুক্ত বারকোড স্ক্যান করে প্রয়োজনীয় তথ্য ইনপুটসহ প্রেরক প্রাপকের ঠিকানার ছবি সংযুক্ত করে বুকিং সম্পন্ন করার ফলে গ্রাহকগণ সহজেই বারকোড স্ক্যান করে তাদের ডাকদ্রব্যের অবস্থান শনাক্ত করতে পারছেন।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় ডিজিটাল যুগের উপযোগী ডাক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় ডাকঘর ডিজিটাইজেশনের পথ নকশা আমরা তৈরি করছি। খুব শিগগিরই তা বাস্তবায়ন শুরু হবে। ইতোমধ্যে ১৪টি শর্টিং সেন্টার নির্মাণ ও ডিজিটাইজ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে রেলে চিলিং বগি ও ডাকের অন্যান্য গাড়িতে চিলিং ভ্যান চালু করার উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি।