হানিফসহ ১৫ বাসে ডাকাতি করে তারা

7

পূর্বদেশ ডেস্ক

দূরপাল্লার বাসে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের মূলহোতা মো. হীরা শেখ ওরফে কালাম শেখ ওরফে সোলেমান শেখসহ ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। ডাকাত সর্দার হীরার নেতৃত্বে এ সংঘবদ্ধ দলটি গত ১ মাসে চট্টগ্রাম থেকে যশোরের বেনাপোলগামী হানিফ পরিবহন, ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ন্যাশনাল ট্রাভেলস পরিবহন ও ঢাকা থেকে কোটালীপাড়াগামী স্টার লাইন পরিবহনে ডাকাতি করেছে।
গ্রেপ্তার ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা হলো, মো. হাসান মোল্লা ওরফে ইশারত মোল্লা (৩৯), আরিফ প্রামাণিক ওরফে আরিফ হোসেন (৩৩), মো. নুর ইসলাম (৫৩), মো. রাজু শেখ, মো. রেজাউল সরকার (৪৯), মো. রতন (৩৬), মো. শরিপ্তল ইসলাম (৩৯), মো. হানিফ (৪২) ও মো. নজরুল ইসলাম (৩৫)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বিদেশি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি, আটটি দেশীয় অস্ত্র, চারটি শ্যামলী এনআর ট্রাভেলসের টিকিট ও তিনটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়।
গতকাল রবিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, শনিবার দিনগত রাতে ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্রসহ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
খন্দকার আল মঈন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা জানায় যে, তারা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র। এ দলের সদস্য সংখ্যা ১২/১৫ জন। গ্রেপ্তার ডাকাত সর্দার হীরা ও তার অন্যতম সহযোগী হাসান মোল্লা বিভিন্ন ডাকাতির পরিকল্পনা করে থাকেন। ডাকাত দলটি দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলামুখি যাত্রীবাহী বাসে উঠে ডাকাতি করে আসছিল। গত ২ বছরে তারা প্রায় ১০-১৫টি বাসে ডাকাতি করেছে। আগেও চক্রটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে শ্যামলী পরিবহন ও মামুন ট্রাভেলস, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ন্যাশনাল ট্রাভেলস ও একতা ট্রাভেলসে ডাকাতি করে বলে জানায়।
র‌্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, ঢাকা রুটের বাস ছাড়াও চট্টগ্রাম-সিলেট মহাসড়কে সৌদিয়া বাসে ডাকাতির সময় তারা বাস চালকের হাতে ও হেলপারের পেটে ছুরিকাঘাত করে। এছাড়া এ চক্রটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফাল্গুনী ট্রাভেলস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও কনক পরিবহন, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে সুরভী পরিবহন, হানিফ পরিবহন, সিলেট-রাজশাহী মহাসড়কে শ্যামলী পরিবহন ও রইস পরিবহন, ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে পাবনা এক্সপ্রেস ও সরকার ট্রাভেলস, রাজশাহী-বরিশাল মহাসড়কে সেবা গ্রিন লাইন পরিবহন ও তুহিন পরিবহনে ডাকাতি করে। খবর বাংলানিউজের
ডাকাতির কৌশল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডাকাতির জন্য তারা ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন দূরপাল্লার আন্তঃজেলা বাসসমূহকে টার্গেট করে। এক্ষেত্রে চক্রটির কয়েকজন আগেই নির্দিষ্ট বাসের কাউন্টার থেকে টিকিট কিনে বাসে উঠেন। অন্য সদস্যরা পরবর্তী বিভিন্ন কাউন্টার থেকে টার্গেটকৃত বাসে উঠেন। এছাড়া যেসব দূরপাল্লার বাস কাউন্টার ব্যতিত যাত্রী উঠায় তারা এসব বাসকে প্রাধান্য দিয়ে ডাকাতি করে থাকে।
সাধারণত তারা মহাসড়কের নির্জন এলাকায় বাস ডাকাতির জন্য বেছে নেয়। ডাকাতি করার পর তারা পুনরায় আশুলিয়ায় ফিরে আসে। এছাড়া বিভিন্ন সময় তারা বাড়িঘরে ডাকাতি করতো বলে জানা যায়। গ্রেপ্তার প্রত্যেকেই সর্বনি¤œ দুই থেকে সর্বোচ্চ ছয় বছর মেয়াদে কারাভোগ করেছে।
র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাত সর্দার হিরা জানান, তিনি আগে গার্মেন্টস পণ্য বিক্রি করতেন। পরে ডাকাতির পেশায় জড়িয়ে পড়েন এবং দীর্ঘ ১০/১২ বছর ধরে ডাকাতি করে আসছেন। সা¤প্রতিক ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি বাস ডাকাতির ঘটনা তার নেতৃত্বে সংঘঠিত হয়েছে। প্রত্যেকটি পরিবহনে ডাকাতিতে তিনি নিজে সশরীরে অংশগ্রহণ করেন। ডাকাতির সময় তিনি পরিবহনে উঠে প্রথমে বাস স্টাফদের এবং যাত্রীদের মারধর করে ভীতির সঞ্চার করেন। পরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করেন এবং বাকিরা যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করেন। তার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় ডাকাতিসহ অস্ত্র আইনে মোট সাতটি মামলা রয়েছে।
আসামিদের পৃথক জেলার বাস ডাকাতির মামলায় জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবে র‌্যাব।