‘হাতিটি লোকালয়ে থাকতেই পছন্দ করছে’

19

পূর্বদেশ ডেস্ক

ছয় দিনের ব্যবধানে দু’বার কাদায় আটকা, প্রথমবার বনে ফিরলেও দ্বিতীয়বার তাকে ফেরানো যায়নি; ‘অসুস্থ’ হয়ে লোকালয়েই আছে হাতিটি। এর মধ্যে গত ২/৩ দিন ‘খেতে না পারায়’ ক্রমশ হাতিটি দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
হাতিটিকে চিকিৎসা দিতে ডুলাহাজরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কখন, কীভাবে হাতিটিকে সেখানে নেওয়া হবে তা চূড়ান্ত হয়নি।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার জামিলাবাদ নূরের ঘোনা এলাকায় এখন বন বিভাগের তত্ত¡াবধানে আছে মাদি হাতিটি। তার বয়স ১২ বছরের বেশি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
গত ২৯ এপ্রিল রাতে উপজেলার কোদালা চা বাগান সংলগ্ন তৈলাভাঙা বিলে কাদায় আটকা পড়েছিল বন্য হাতিটি। বারবার চেষ্টা করেও উঠতে না পারলে পরদিন দুপুরে স্থানীয়দের সহায়তায় কাদা থেকে হাতিটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগের কর্মীরা।
সেদিন দড়ি খুলে দিলে দৌড়ে বনে ফিরে যায় হাতিটি। এর আগেও পাশের পাহাড়ি বনে হাতিটিকে একা চলাফেলা করতে দেখা গেছে বলে স্থানীয়দের বরাতে জানিয়েছিল বন বিভাগ।
এর ছয় দিন পর ৪ মে কোদালা চা বাগানের পূর্বপাশে জামিলাবাদের একটি বিলে আবার কাদায় আটকে যায় হাতিটি। পরদিন ৫ মে আবার হাতিটিকে উদ্ধার করা হয়।
গত ৫ মে উদ্ধারের পর পিঠে ক্ষত দেখে হাতিটিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ক্ষত সেরে গেলে ৭ মে অবমুক্ত করা হয়। এরপর হাতিটি পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে গিয়েছিল।
“১০-১২টি হাতির একটি দল সেদিন ওই পাহাড়ে ছিল। কিন্তু হাতির ওই দলের সাথে এই হাতিটি বনে ফিরে যায়নি। দেখে মনে হচ্ছে হাতিটি যে কোনো কারণে লোকালয়ে থাকতেই পছন্দ করছে।
নারিঞ্চা বন বিটের অফিসার মিন্টু কুমার দে বলেন, ছেড়ে দেবার পর একরাত হাতিটি পাহাড়ে ছিল। এরপর আবার লোকালয়ে ফিরে আসে। এরপর কোদালা চা বাগানের ভিতর হাতিটি আরও দুবার অল্প কাদায় আটকে গেলে তাকে উদ্ধার করা হয়। খবর বিডিনিউজ’র
ফরেস্টার মো. মাসুদ কবীর বলেন, “শুরু থেকে আমরা খাবার দিচ্ছি। গ্রামবাসীও খাবার দিচ্ছিল। মুক্ত অবস্থায় ঘুরে ফিরে থাকত। শারীরিক দুর্বলতা দেখে স্যালাইন দেওয়া হয়। এরপর কিছুটা সবল হয়। কিন্তু এখন অল্প দুর্বাঘাস ছাড়া কিছুই খেতে পারছে না। হাতিটির ক্ষুধা আছে। খাবার মুখে নিলেও গিলতে পারছে না।
মুক্ত অবস্থায় কয়েকদিন ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করার সময় লোকমান নামের এক গ্রামবাসী খাবার দিতে গেলে তাকে শুঁড় দিয়ে আঘাত করে বন্য হাতিটি। আহত লোকমান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানান ফরেস্টার মো. মাসুদ কবীর।
সোমবার পর্যন্ত হাতিটি মুক্ত অবস্থায় নূরের ঘোনা এলাকায় ছিল। মঙ্গলবার দুর্বল হয়ে পড়ে যাওয়ায় হাতিটিকে সেখানে বেঁধে রাখা হয়েছে।
বন বিভাগের কোদালা বন বিটের অফিসার নবীন ধর বলেন, “গত ২/৩ দিন ধরে এটি নূরের ঘোনা এলাকায় আছে। শরীর দিন দিন দুর্বল হচ্ছে।” এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের (ইআরটি) ১০ জন সদস্য পালাক্রমে এখন হাতিটির খেয়াল রাখছে।
ঢাকায় কর্মরত প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরেনারি সার্জন রাঙ্গুনিয়ার শিলক ইউনিয়নের বাসিন্দা সৈয়দ হোসেন ৩০ এপ্রিল প্রথমবার উদ্ধারের সময় হাতিটিকে দেখেন।
তিনি বলেন, “সেদিনই হাতিটিকে দুর্বল লেগেছিল। হাতিটি এখন যেহেতু খাবার গিলতে পারছে না, হয়ত মুখ গহ্বরে কোনো ক্ষত থাকতে পারে। অতিরিক্ত দুর্বল হলে এবং খাবার গ্রহণ করতে না পারলে জরুরি ভিত্তিতে প্রচুর পরিমাণে আইভি স্যালাইন দেওয়া উচিত। সাথে ভিটামিন ও মিনারেল। তবে হাতিটিকে ট্রাঙ্কুলাইজ করতে হলে আগে এর শারীরিক অবস্থা প্রাণী চিকিৎসক দিয়ে অবশ্যই পরীক্ষা করাতে হবে।”
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, “উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে হাতিটির দেখাশোনা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু বন্যহাতিটির জন্য আসলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন। আমরা বলেছি, সাফারি পার্কে নিয়ে হাতিটিকে সেবা দিলে ভালো হবে।”
বুধবার বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং বন বিভাগের ঢাকা ও চট্টগ্রামের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাতিটিকে দেখে গেছেন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, “১০ মে একবার দাঁড়ানো অবস্থা থেকে পড়ে যাওয়ায় আপাতত হাতিটিকে বেঁধে রাখা হয়েছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাতিটিকে দেখেছেন।