হাটহাজারীতে চরম সঙ্কটে ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা

74

বন্দর নগরী চট্টগ্রামের অন্যতম প্রবেশদ্বার হাটহাজারী উপজেলার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র পৌরসভা সদর। করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাব ঠেকাতে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ২৪ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব ধরণের (কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যাতিত) ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে দীর্ঘ ১ মাস পেরিয়ে গেছে। দোকান কখন খুলতে পারবে, এমন সংবাদ না থাকার কারণে হতাশায় পড়েছেন হাটহাজারী উপজেলার হাজার হাজার ব্যবসায়ী ও কর্মচারী। ফলে চরম আর্থিক সঙ্কটে ভুগছেন তারা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, হাটহাজারী পৌরসভা, উপজেলার নাজিরহাট পুরাতন বাজার, কাটিরহাট বাজার, সরকার হাট, মুহুরী হাট বাজার, ইছাপুর ফয়জিয়া বাজার, চৌধুরী হাট, আমানবাজার, নজুমিয়া হাট, মদুনাঘাটসহ আরো বেশ কয়েকটি বাজারের কয়েক হাজার দোকান বন্ধ রয়েছে। হাতে গোনা কয়েকটি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান খোলা রয়েছে মাত্র।
এদিকে হাটহাজারীতে দোকান কর্মচারীরা এপ্রিল মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য করোনা পরিস্থিতির কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খোলা চিঠির মত করে পৌরসভা দোকানদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি/সম্পাদক বরাবরে আবেদন জানিয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত এর কোন সুরাহা কর্মচারীরা পায়নি বলে জানান হাটহাজারী দোকান কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাহাব উদ্দিন সাইফ।
তিনি আরও জানান, বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে দোকান মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দোকানপাঠ বন্ধ থাকায় গত এপ্রিল মাসের বেতন না হওয়ায় উপজেলার হাজার হাজার কর্মচারী চরম বিপাকে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দোকান মালিকরা এগিয়ে আসলে আমাদের এ কঠিন সময়ের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘব হবে। করোনাকালে দোকান মালিকরা যদি আমাদের পাশে না দাঁড়ায় তাহলে ঘরে বসে না খেয়ে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। তাই আমাদের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ জানায় দোকান মালিকদের প্রতি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌর সদরের একটি কাপড়ের দোকানের এক কর্মচারী জানান, ছেলেমেয়ে স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থেকে প্রতি মাসের বেতন দিয়ে ভালোভাবে চলতে পারতাম। কিন্তু আমার কোনো সঞ্চয় নেই। করোনা পরিস্থিতিতে তথা প্রশাসনের নিদের্শনা অনুযায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে বলে আমরা কাজে যোগ দিতে পারছি না। কোন রকমে চলার জন্য প্রতিষ্ঠানের মালিকরা যদি এপ্রিল মাসের বেতন দেয় তাহলে অন্তত দু-মুঠো ভাত খেয়ে দিন পার করতে পারবো।
স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতারা জানায়, হাটহাজারী উপজেলা লকডাউনের আওতায় আসার পর থেকেই পুরো হাটহাাজরীতে বাড়ানো হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল। গত ২৪ মার্চ থেকে উপজেলার সব ধরণের (কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যাতিত) ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। সরকারি আদেশ অমান্য করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে জরিমানাও করছে। এতে করে দীর্ঘদিন দোকান তালাবদ্ধ থাকায় বিভিন্ন পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে দোকান বন্ধ রাখতে গিয়ে আমরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, প্রতিবছর রমজানকে কেন্দ্র করে বিপণী বিতানসমূহে গ্রাহকের ব্যাপক অনেক ভিড় দেখা যেতো। আর এ কারণে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ডিজাইনের ও দামের হরেক রকম পণ্য নিয়ে সাজাতো তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু রমজান মাস চললেও দোকান খুলতে না পারায় হতাশ তারা। তবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় এবং আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে।
হাটহাজারী পৌরসভা দোকানদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম বলেন, আমরা সরকারি নিয়মানুসারে মার্কেট বন্ধ করেছি। এখনও বন্ধ রয়েছে কিন্তু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে দোকানের ভেতরে থাকা পণ্য নষ্ট হওয়ার পাশপাশি ব্যবসায়ীরা চরম আর্থিক সঙ্কটে রয়েছি। পাশপাশি বেকার হয়ে পড়েছে হাজারো দোকান কর্মচারী। তাদের আর্থিক সঙ্কটের কারণে দোকান মালিক ও কর্মচারী উভয়ের অবস্থা কাহিল। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খোলা চিঠির মত করে পৌরসভা দোকানদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি/সম্পাদক বরাবরে কর্মচারী সমিতির আবেদনটি আমার দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর পর আমি মার্চ মাসের বেতন দিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছি। তাছাড়া এপ্রিল মাসের বেতন দেয়া নিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ-আলোচনা চলছে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী আফিসার রুহুল আমিন বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এটা আমরা বুঝি। চলতি মাসের আগামী ১০ মে থেকে সরকার সীমিত আকারে খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছে। আপাতত আগের সরকারি নির্দেশনা সকলকে মেনে চলার অনুরোধ করছি। এছাড়া জাতির এ ক্রান্তিকালে দোকান মালিক তথা ব্যবসায়ীদের কর্মচারীদের পাশে থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।