হাটহাজারীতে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী

56

হাটহাজারীতে ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অবিরাম বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জীবনযাত্রা। উপজেলার ছিপাতলী, নাঙ্গলমোড়া, গুমানমর্দ্দন, গড়দুয়ারা, মেখল ও হাটহাজারী পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এছাড়া এসব এলাকায় তলিয়ে গেছে মৌসুমি ফসল ও খামার-পুকুরের মাছ এবং দুইটি মহাসড়কসহ প্রায় ৩০-৪০টি অভ্যন্তরীণ সড়ক।
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পোল্ট্রি খামারিরা।
উপজেলার সদরের সাথে বিভিন্ন ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পানিবন্দী মানুষ। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ। বন্যার কারণে উপজেলার অনেক গ্রাম অন্ধকারে নিমজ্জিত। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নাজিরহাটের ঝুকিপূর্ণ হালদা সেতু।
সরেজমিন দেখা গেছে, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের হাটহাজারী পৌরসভার মুন্সির মসজিদ এলাকা সিকি কিলোমিটার, ধলই ইউনিয়নের এনায়েতপুর এলাকার আধা কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের সুবেদার পুকুরপাড় এলাকায় মহাসড়ক দুইটি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে সড়ক দুইটিতে যান চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বড় গাড়ি ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে পারলেও সিএনজি ট্যাক্সি, কার, মাইক্রোবাস চলাচল করতে পারছে না। ফলে সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। নি¤œাঞ্চলের সাথে উপজেলার সদরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বৃষ্টি ও বন্যার কারণে উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউপি পরিষদের কার্যালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, স্কুল, মাদ্রাসা পানিতে থৈ থৈ করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় অঘোষিত ভাবে ক্লাস বন্ধ হয়ে গেছে।
গত শুক্রবার রাতের প্রবল বর্ষণে হাটহাজারীর মির্জাপুর ইউনিয়নের সরকারহাট বাজারের দেড় শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তারা।
বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে দেড় শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে মাছ চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় অসংখ্য মানুষ জাল দিয়ে মাছ শিকার করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। অনেকে বন্যার পানিতে কারেন্ট জাল বসিয়ে মাছ শিকার করছেন।
বর্ষণ ও বন্যার কারণে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিদ্যুতের ভেল্কিবাজি নিত্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাহাড়ি ঢলে পৌরসভার মুন্দারী ছরার বাঁধ ভেঙে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেও ঢলের পানি ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে।
বন্যার পরিস্থিতি সম্পর্কে হালদা নদী সংলগ্ন এলাকা ছিপাতলী ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আহসান লাভু বলেন, শুক্রবার সকাল থেকেই পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট, পরিষদ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল, মাদ্রাসায় পানি ঢুকেছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল, অবিরাম বৃষ্টিতে হালদা নদীর মূল বেড়িবাঁধের একটি কালভার্ট হয়ে পানি ঢুকে পুরো এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। স্কুল, মাদ্রাসার পাঠদান বন্ধ রয়েছে। যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ। অতি প্রয়োজনে নৌকাই একমাত্র মাধ্যম। তবে হালদায় বর্ষার আগে বিভিন্ন খাল খননের কারণে এবার গতবারের চেয়ে বন্যা, জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কম। দুর্যোগে এলাকাবাসীর জন্য কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রও খোলা হয়েছে।
পাহাড়ি ঢলের কারণে গুমানমর্দ্দন ইউনিয়নের সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে জানিয়ে স্থানীয় যুবক জাহেদুল আলম চৌধুরী জানান, শুক্রবার মাগরিবের পর থেকেই রাস্তাঘাট ডুবে আমাদের বাড়িঘরে দুই তিন ফুট করে পানি উঠে গেছে। বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল আর চারদিক থেকে নেমে আসা হালদার পানি উঠায় বন্যা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া ও দুর্গতদের সহায়তার করা হবে উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন বলেন, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতে কয়েকটি ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকার কিছু ওয়ার্ডের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন ও শুকনো খাবার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আমরা ইউনিয়নের প্রতিটা চেয়ারম্যানকে ডি (চাহিদা) ফর্ম দিয়ে দিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সেসব বিতরণ করা হবে।
তিনি বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারীদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খিচুরির ব্যবস্থাও রয়েছে। তাছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গত ৪শ পরিবারকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ৪শ বস্তা ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। এরমধ্যে ছিল চাল, ডাল, তেল, লবণ, মুড়ি, চিড়া, মোমবাতি, ম্যাচ, বিস্কুট ও চিনি। এসব ত্রাণসামগ্রী পূর্ব ফরহাদাবাদ, গুমানমর্দ্দন, ছিপাতলী, নাঙ্গলমোড়া, মেখল, গড়দুয়ারা, উত্তর ও দক্ষিণ মাদার্শায় বন্যাদুর্গতদের মধ্যে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। এছাড়া দুর্গতদের সাহায্যার্থে উদ্বারকর্মী ও চিকিৎসক দল প্রস্তুত রয়েছে।