হাজার মাসের চেয়ে উত্তম ক্বদরের রাত

139

মহিমান্বিত রমজান মাস আল্লাহর অবারিত রহমতে ভরপুর। আল্লাহর কালাম মহাগ্রন্থ কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে এ পবিত্র মাসে। এ মাসের যে রাতে এ পবিত্র গ্রন্থ নাজিল হয়, সে রাতটিও মহা মূল্যবান। তাই একে ‘ক্বদর রাত’ অর্থাৎ সম্মানিত রাত বলা হয়। পবিত্র কুরআনের সূরা ক্বদরে আল্লাহ পাক বলেন, ‘নিশ্চয় আমি (তা-আলকুরআন) ক্বদরের রাতে অবতীর্ণ করেছি।’ অর্থাৎ আল্লাহপাক লওহ-ই মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে ক্বদর রাতে কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। পবিত্র কুরআন অবতীর্ণের কারণে এ রাত সম্মানিত হয়েছে। এ মহিমান্বিত রাতের ফজিলত বর্ণনায় সূরা ক্বদরে আল্লাহ বলেছেন, ‘ক্বদরের রাত হাজার মাস থেকে উত্তম’ অর্থাৎ এ একটি রাতের এবাদতের ফজিলত হাজার মাসের এবাদতের ফজিলতের সমান মর্যাদা।
লায়লাতুল ক্বদর অর্থ কদরের রাত্রি। কদর শব্দের প্রধানত দুটি অর্থ করা হয়। ১. তাকদির নির্ধারণ, ভাগ্য ইত্যাদি অর্থাৎ এ রাত ভাগ্য বা বাজেট নির্ধারণের রাত। ২. সম্মান মর্যাদা ও মাহাত্ম অর্থাৎ লায়লাতুল কদর মহাত্মপূর্ণ মর্যাদাশীল রাত। এ রাতে বান্দার আগত বছরের আয়-ব্যয়, সুখ-দুঃখ, ভাল-মন্দ, জন্ম-মৃত্যু প্রভৃতি বিষয় নির্ধারণ করা হয়।
লায়লাতুল ক্বদর হুযূর (সা.) এর উম্মতদের জন্য বিশেষ উপহার। তাফসীর কারীরা লিখেছেন, আগেকার উম্মতগণের যারা হাজার মাস এবাদত করতেন তাদের আবেদ বলা হতো। তাদের হায়াত ছিল বেশি। কিন্তু উম্মতে মুহাম্মদীর হায়াত কম। তারাতো সে সুযোগ পাবে না। তাই নবী করিমের উসিলায় তাঁর উম্মতগণের এ বিশেষত্ব অর্জন হয় যে, ক্বদর রাতে সওয়াবের নিয়তে এবাদত করবে তার পূর্বেকার গুনাহ ক্ষমা হয়ে যাবে। এ পবিত্র ও মহা ফজিলতপূর্ণ রাতটি আল্লাহ পাক গোপন রেখেছেন। এ রাতটি রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে একটি রাত। এ রাতটি নির্দিষ্ট করা হয়নি এজন্যে, যেন আল্লাহর বান্দারা রমজান মাসের শেষ দশকের প্রত্যেক রাতে ক্বদর রাতের সন্ধানে এবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত থাকে। অথবা এজন্যে নির্দিষ্ট করেন নি, যাতে কোন বান্দা সারা বছর এবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত থাকে। অথবা এজন্যে নির্দিষ্ট করেন নি, যাতে বান্দা সারা বছর এবাদত না করে শুধু ওই রাতের এবাদত করে ক্ষান্ত হয়।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, হুযূর (সা.) গোটা রমজান মাস এবাদতে কাটাতেন এবং শেষ দশ রোজায় আরো বেশি এবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত হতেন। অধিকাংশ ওলামা মাশায়েখের মতে রমজানের ২৬ দিবাগত ২৭ তম রাত শবে ক্বদর। পবিত্র কুরআন, হাদীসে পাক ও বুযুর্গানে দ্বীনের আমল ইত্যাদি থেকে রমজানের ২৭ তম রাত শবে ক্বদর হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
শবে ক্বদরে পাঠের দোয়া : হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, আমি হুযূর (সা.) থেকে জিজ্ঞাসা করলাম, শবে ক্বদরের অজিফা কী হওয়া চাই? তখন তিনি এ দোয়াটি বললেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওয়ুন করিম, তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি, অর্থাৎ ওহে দয়াময়, তুমি দয়ালু ক্ষমা কারী, তুমি ক্ষমা ভালবাস, আমাকে ক্ষমা করো। কদর রাতে কুরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ, জিকির, দরূদ শরীফ ইত্যাদির সাথে এ দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করা চাই। প্রত্যেক মু’মিন মুসলমানের উচিৎ এ মহিমান্বিত রাতে এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহর করুণা লাভ করা।