হাজারী গলিতে ভেজাল ওষুধের যত গোডাউন

47

ফারুক আবদুল্লাহ

চট্টগ্রামে ওষুধের বৃহৎ পাইকারি বাজার হাজারী গলিতে সস্তা ও ভালো মানের ওষুধ মিলে, এটি সাধারণ মানুষের বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসকে পুঁজি করে একটি ভেজাল বিরোধী সিন্ডিকেট হাজারী গলিকে ‘ভোজাল ওষুধের ডিপো’ বানিয়ে রেখেছে। প্রশাসনের ভেজাল বিরোধী অভিযানে এটি এরইমধ্যে প্রমাণিত। এর আগেও যত বার ভেজাল বিরোধী অভিযান চালানো হয়, তাতে লাখ লাখ টাকার নকল, ভেজাল, অনুমোদনহীন বিদেশি ও সরকারি ওষুধ জব্দ করেছে প্রশাসন। তবুও ভেজাল ওষুধের মজুদ ও সরবরাহ বন্ধ হয় না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধ যেমন জীবন রক্ষা করতে পারে, তেমনি একই ওষুধ নকল, মেয়াদোত্তীর্ণ কিংবা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ না করলে কার্যকারিতা হারিয়ে জীবনহানিও ঘটাতে পারে। এছাড়া এসব ওষুধ খেলে চামড়ার ওপর মারাত্মক এলার্জি সৃষ্টিসহ কিডনি ও লিভার নষ্ট হতে পারে। মস্তিষ্কের প্রদাহে অজ্ঞান হয়ে মারাও যেতে পারে। সর্বোপরি এ ধরনের ওষুধ সেবনে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে।
অনুসন্ধানের তথ্য মতে, হাজারী গলিতে নকল-ভেজাল ও ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ সরকারি ওষুধ বেঁচাকেনার সাথে জড়িত বেশকিছু ফার্মেসির গোডাউন চিহ্নিত। এসব দোকানের ব্যবসায়ীদের সাথে ভেজাল বিরোধী সিন্ডিকেটের রয়েছে দহরম মহরম সম্পর্ক। এদের যেকোনো সমস্যায় সিন্ডিকেটের হস্তক্ষেপে রক্ষা পায় তারা। তাদের হাজারী গলির বিভিন্ন মার্কেটের অলিগলিতে রয়েছে ভেজাল ও নকল ওষুধের গোডাউন।
গোডাউনগুলো হলো হাজারী গলি বিজয় বিতান মার্কেটের নিচতলায় ৩টি গোডাউন, জিসি মার্কেটের নিচতলায় ২টি গোডাউন, রাজ লক্ষী মার্কেটের নিচতলায় ১টি এবং মোহাম্মদীয় মার্কেটের নিচতলায় ১টি গোডাউন, আজম প্লাজা মার্কেটের নিচতলায় ১টি গোডাউন, সূর্য মার্কেটের নিচতলা, ২য় তলা ও ৩য় তলায় ৩টি গোডাউন, খাজা মার্কেটের নিচ তলায় ১টি গোডাউন, আর এস প্লাজার নিচ তলায় ১টি গোডাউন, ছবিল কমপ্লেক্সের ২য় তলায় ৪টি গোডাউন, জহুর শপিং মার্কেটের নিচতলায় ২টি গোডাউন, রশিদ মার্কেটের নিচতলায় ২টি গোডাউন, মসজিদ গলির নিচতলায় ২টি গোডাউন, শাপলা বিতানের নিচতলায় ১টি গোডাউন, রাজলক্ষী মার্কেটের নিচতলায় ১টি গোডাউন, ছবিল কমপ্লেক্সের ২য় তলায় ১টি এবং এই মার্কেটের ২য় তলায় ২টি গোডাউন, মোহাম্মদীয় মার্কেটের নিচ তলায় গোডাউন, জহুর শপিং মার্কেটের নিচতলায় ২টি গোডাউন, জিসি মার্কেটের নিচতলায় গোডাউন, হার্ডিস প্রেস মার্কেটের নিচতলায় গোডাউন, একই মার্কেটের নিচতলায় ও ২য় তলায় গোডাউন, জহুর শপিং মার্কেটের নিচতলায় ৩টি গোডাউন, খাজা মার্কেটের নিচতলায় ১টি গোডাউন, রশিদ মার্কেটের নিচতলায় এবং পুরান গির্জা কমিউনিটি সেন্টারের নিচে ৩টি গোডাউন।
প্রসঙ্গত, গতকাল মঙ্গলবার হাজারী গলিতে অভিযানের খবরে দোকান বন্ধ করে সটকে পড়ে সেখানকার ব্যবসায়ীরা। এসময় দোকান বন্ধ থাকায় প্রশাসনের লোকজন দীর্ঘসময় রাস্তায় অবস্থান নিয়ে ব্যবসায়ীদের দোকান খুলতে অনুরোধ জানায়। অন্যথায় পরবর্তীতে বড় ধরনের অভিযানের কথা জানায়। এসময় বেশ কয়েকজনকে বলতে দেখা গেছে, পরে অভিযান চালালে তখন আমরা এসব ওষুধপত্র অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে পারবো। তখন অভিযানে এসে কোনো ধরনের নকল ও ভেজাল ওষুধ তো মিলবে না।
উল্লেখ্য, গতবছরের ১৩ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে হাজারী লেইনের চারটি ওষুধের দোকানকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করে। এসব দোকানের ব্যবসায়ী তাদের অপরাধ স্বীকার করায় নিউ ড্রাগ হাউসকে ১ লাখ টাকা, এম মেডিকোকে ৬০ হাজার টাকা, গোপাল মেডিকেল হলকে ৮০ হাজার টাকা, প্রভাতী ড্রাগ হাউসকে ৪০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করে। একইভাবে গতবছরের ৭ জুন সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ১৪টি অনিয়মের দায়ে ৩০টি ফার্মেসিকে অতিরিক্ত দামে ওষুধ বিক্রি ও অবৈধ ওষুধ মজুদসহ ২৯টি মামলায় ১০ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।