হাকিম হাবিবুর রহমান

5

 

হাকিম হাবিবুর রহমান, ব্রিটিশ ভারতে ঢাকার একজন ইউনানি চিকিৎসক, উর্দু লেখক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও বিবরণীলেখক।
হাবিবুর রহমান নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহর একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। ঢাকার উপর রচিত তার দুইটি গ্রন্থ আসুদগান-এ-ঢাকা এবং ঢাকা পাঁচাস বারাস পেহলে ঢাকার উপর দুইটি মৌলিক তথ্য সমৃদ্ধ গ্রন্থ। তার পাÐুলিপি, মুদ্রা, অস্ত্র এবং শিল্পকর্মের বিশাল সংগ্রহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে হাকিম হাবিবুর রহমান সংগ্রহ নামে সংরক্ষিত রয়েছে। তার জন্মস্থান ছোট কাটরা মহল্লার নিকটস্থ হাকিম হাবিবুর রহমান লেন তার স্মরণে নামকরণ করা হয়েছে।
হাবিবুর রহমান ঢাকা মাদ্রাসা ও কানপুরের দারুল উলুম মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছেন। তিনি দীর্ঘ ১১ বছর যাবত কানপুর, লখনৌ, দিল্লি ও আগ্রায় তিব এবং ইউনানি চিকিৎসা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। ১৯০৪ সালে তিনি তার চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ইউনিনি চিকিৎসা ক্ষেত্রে তার অবদানের জন্য ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৯ সালে তাকে শিফাউল মুলক খেতাব প্রদান করে।
পূর্ব বাংলায় হাকিম হাবিবুর রহমান খিলাফত আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন। ১৯২০ এবং ৩০ এর দশকে তিনি ঢাকার স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান সর্দারদের সালিস ছিলেন। তিনি ১৯০৬ সালে উর্দু মাসিক পত্রিকা আল মাশরিক সম্পাদনা করতেন। খাজা আদিলের সাথে যৌথভাবে ১৯২৬ সালে তিনি উর্দু মাসিক পত্রিকা জাদু প্রকাশ করেন। ১৯৩০ সালে তিনি ঢাকার তিব্বিয়া হাবিবিয়া কলেজ স্থাপন করেন। ঢাকা জাদুঘরে তার সাধারণ সমর্থনের পাশাপাশি তিনি তার সংগ্রহের ২৩১টি পুরনো স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা ১৯৩৬ সালে জাদুঘরে দান করেন।
তার প্রতিষ্ঠিত তিব্বিয়া হাবিবিয়া কলেজ বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন মেডিকেল কলেজ এবং সবচেয়ে পুরনো ইউনানি মেডিকেল কলেজ। এই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ইউনানি চিকিৎসার পথিকৃৎ হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। এখানে পড়াশোনা করা চিকিৎসকরা ডিইউএমএস (ডিপ্লোমা ইন ইউনানি মেডিসিন এন্ড সার্জারি) উপাধি পেত। একে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইউনানি মেডিকেল কলেজে রূপান্তর করা হয় এবং বিইউএমএস (ব্যাচেলর ইন ইউনানি মেডিসিন এন্ড সার্জারি) ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
হাবিবুর রহমান একজন উর্দু সাংবাদিক ও লেখক ছিলেন। তিনি আহসান ছদ্মনামে লিখতেন। আসুদগান-এ-ঢাকা এবং ঢাকা পাঁচাস বারাস পেহলে ছাড়াও তার অন্যান্য প্রধান রচনা হল আল-ফারিক (১৯০৪), সক্রেটিসের জীবনী হায়াত-এ-সুকরাত (১৯০৪), তাজকিরাতুল ফুজালা এবং মাসাজিদ-এ-ঢাকা। দীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবত তিনি বঙ্গে লিখিত আরবি, ফারসি ও উর্দু বই সংগ্রহ করেছেন এবং সুলাসা গুসালা নামে একটি ক্যাটালগ প্রকাশ করেছেন। ইনশায়ে শায়েকে তিনি মীর্জা গালিব এবং ১৯ শতকে ঢাকার উর্দু কবি খাজা হায়দার জান শায়েকের মধ্যকার পত্রাবলী তিনি সঙ্কলন করেছেন। পূর্ববঙ্গ ও আসামে উর্দুর পৃষ্ঠপোষকতার জন্য তিনি আঞ্জুমানে উর্দু সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি ছিলেন।
১৯৯৪ সালে তার স্মরণে হাকিম হাবিবুর রহমান ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। ভেষজ ও ইউনানি চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা পরিচালনা; চিকিৎসাশাস্ত্র, বিজ্ঞান, ধর্ম ও আধুনিক জ্ঞান বিষয়ে দাতব্য প্রতিষ্ঠান স্থাপন; মেধাভিত্তিক পদক প্রদান; ভেষজ ও ইউনানি চিকিৎসাবিজ্ঞানের জ্ঞান বিনিময়; সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম আয়োজন; এবং হাকিম হাবিবুর রহমানের সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক আদর্শের প্রচার জন্য এটি স্থাপিত হয়। ১৯৯৬ সালে ভারতের হাকিম সৈয়দ জিল্লুর রহমানকে তার কৃতিত্বের জন্য পুরস্কার প্রদান করা হয়। সূত্র : উইকিপিডিয়া