হযরত মওলা আলী কারয়ামাল্লাহ ওয়াজহাহু’র পবিত্র কাবা শরীফে আগমন

301

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম একদা বলেন, ইয়া আলী তোমার মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্য আছে যাহা আমাদের কারো মধ্যে নেই। মওলা আলী বললেন আপনি কি বলছেন, যা আপনার মধ্যেও নাই? আপনি হলেন সাইয়েদুল মোরসালীন। তখন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যেমন তোমার পবিত্র জন্ম হয়েছে পবিত্র কাবার অভ্যন্তরে, আমার হয়নি, তোমার শ্বশুর সাইয়েদুল মুরসালীন যাহা আমার নয়, তোমার শাশুড়ি হযরত খাদিজাতুল কোবরা যাহা আমার নয়, তোমার স্ত্রী খাতুনে জান্নাত আমার নয় এবং তোমার দুই পুত্র ইমাম হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, জান্নাতের যুবকদের সরদার, যাহা আমার নয়। সেই কারণে তুমি ভাগ্যবান ও মর্যাদাবান, তবে তুমি আমার হতে আর আমি তোমার থেকে।”আল হাদিস শরীফ
হাশেমী গোত্রের উপর মক্কার পবিত্র কাবাঘরের তত্ত্বাবধানের ভার ন্যস্ত ছিল। এই দায়িত্ব হিসাবে কাবাঘরের সান্ধ্য প্রদীপ জ্বালানোর দায়িত্ব পালন করতেন হাশেমী গোত্রপ্রধান আবু তালেবের স্ত্রী ও হযরত মওলা আলী কারয়ামাল্লাহ ওয়াজহাহু’র মাতা ফাতিমা। এক সন্ধ্যায় তাঁর মাতা ফাতিমা কাবাঘরে প্রদীপ জ্বালানোর জন্য প্রবেশ করার পরপরই বাইরে ভীষণ ধূলিঝড় চলতে থাকল। ফলে ফাতিমা কাবাঘরে আটকা পড়ে গেলেন। এই আটকা পড়া অবস্থায় পূর্ণ গর্ভবতী ফাতিমার প্রসববেদনা আরম্ভ হল এবং অতি সহজে কারো সাহায্য ব্যতীতই হযরত মওলা আলী কারয়ামাল্লাহ ওয়াজহাহু ভূমিষ্ঠ হলেন। অতঃপর চোখ খুলছিলেন না এবং খাদ্য হিসাবে কিছুই গ্রহণ করছিলেন না। খবর পেয়ে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম কাবাঘরে গেলেন। তিনি নবজাতক শিশুকে তাঁর পবিত্র কোলে তুলে নিলেন। তিনি শিশুকে কোলে তুলে নেওয়ার সাথে সাথে শিশু তার চোখ খুলে। বিশ্বনবীর মুখ দর্শন করলেন ( মূর্তিতে ভরপুর কাবাঘরের কোন মুর্তি তার প্রথম দৃষ্টিতে আসল না)। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মুখের লালা নবজাতকের মুখে দেওয়াতে তা নবজাতক চুষে খেলেন।তাঁর শানে অপর একটি দু’আ আছে, “আল্লাহ তাঁর মুখমন্ডল সম্মানিত করুন”। ইবন সা’দ হযরত ইবন যায়দ ইবন হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর থেকে বর্ণনা করছেন, “হযরত আলী কখনো মূর্তিপূজা করেননি। সে কারণে তাঁকে ‘কাররামাল্লাহু ওয়াজহাজু’ বলা হয়। আবার এই হযরত মওলা আলী কারয়ামাল্লাহ ওয়াজহাহু দুনিয়ায় আবির্ভাবের স্মরণীয় ঘটনা। তারপর হস্তি বাহিনী নিয়ে খৃষ্টান সৈন্যাধ্যক্ষ আব্রাহার কাবাঘর ধ্বংসের জন্য মক্কা আক্রমণ আরব দেশের, আরও এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। যাহাকুরআন শরীফের সূরা আল ফীলে এর উল্লেখ আছে তাঁকে ইসলামের সূচনাকাল থেকে বহুবার বহুক্ষেত্রে ইসলামের শত্রুদের মুকাবিলা করে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামকে রক্ষা করতে হয়েছে। তাঁকে লিপ্ত হতে হয়েছে বহু আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধে। এসব যুদ্ধে হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম’র বড় সহায় ছিলেন শেরে খোদা হযরত মওলা আলী কারয়ামাল্লাহ ওয়াজহাহু। যৌবনের প্রারম্ভেই তাঁকে লিপ্ত হয়েছিল অসম সাহসিকতার প্রতীক বদর, ওহুদ, খন্দক ও খায়বরের যুদ্ধে। এ সবেই তাঁর অসীম বীরত্ব ইসলাম তথা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামকে অপূর্ব সহায় শক্তির উদাহরণ স্থাপিত হয়েছিল। হযরত মওলা আলী কারয়ামাল্লাহ ওয়াজহাহুর জীবনে একাধারে ধার্মিক, জ্ঞানী, তাপস ও বীরত্বের ভূমিকা সবই হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম মহান সান্নিধ্যের সুফল। রাসূলে পাক হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম – তাঁকে গড়ে তুলেই শেষ করেন নি। আরও তিনি ঘোষণা দিয়ে গেলেন “আমি জ্ঞানের শহর, আর হযরত মওলা আলী কারয়ামাল্লাহ ওয়াজহাহু তার দরজা।” আল হাদিস শরীফ
“আমীরুল মু’মিনীন হযরত মওলা আলী কারয়ামাল্লাহ ওয়াজহাহু পবিত্র কাবা গৃহের অভ্যন্তরে জন্মগ্রহণ করেছেন। পৃথিবীতে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি পবিত্র কাবা গৃহের ভিতরে জন্মগ্রহণ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম এর বয়স যখন ৩০ বৎসর তখন রজব মাসের ১৩ তারিখ শুক্রবারে হযরত মওলা আলী কারয়ামাল্লাহ ওয়াজহাহু শুভ আবির্ভাব হয়। শাহান শাহে বেলায়ত, দরইয়া সাখাওয়াত, দস্ত কুদরত, সাহেবে কারামাত, মওলায়ে কায়েনাত, আমীরুল মু’মিনীন, ইমামুল মুসলিমীন, হায়দারে কারার, সাহেবে যুলফিকার হযরত মওলা আলী কারয়ামাল্লাহ ওয়াজহাহুর নাম মোবারক রাখেন “আলী”।
উপনাম আবুল হাসান এবং আবু তোরাব, তাঁর উপাধি আসাদুল্লাহিল গালিব অর্থাৎ আল্লাহর বিজয়ী সিংহ। তিনি স্বয়ং আবু তোরাব (মাটি ওয়ালা) উপাধিটি বেশী ভালবাসতেন, যেহেতু স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এ নামে ডেকেছেন। এবং আল্লাহ্র ঘরে ফজরের নামাজ পালনকালে ২১ রমজানুল মোবারক ৪০ হিজরী কুফার মসজিদে খারেজী দলের নেতা আব্দুর রহমান মোলজুমের কর্তৃক মস্তিষ্কে প্রচন্ড আঘাতে তাঁর শাহাদাত হয়। মহান মওলার শুভ আগমন দিবসে আহলে বাইত এর সদস্যকে সম্মান প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে কেয়ামতের দিন সুপারিশ ,আল্লাহর ফয়েজ, বরকত ও রহমত অর্জনের যোগ্যতা আমাদেরকে দান করুক আমীন। আমীন সুম্মা আমীন।

লেখক : প্রাবন্ধিক