হত্যা ৯ আসামির মৃত্যুদন্ড

18

ফটিকছড়ি উপজেলায় ১৭ বছর আগে পূর্ব শত্রূতার জেরে এক প্রবাসীকে জবাই করে হত্যার ঘটনায় মামলার নয় আসামিকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় আদালত প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা দেওয়ারও আদেশ দিয়েছেন।
গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ফারজানা আক্তার এ রায় দিয়েছেন।
দন্ডিত আসামিরা হলেন শাহীন, বাবুল, ল্যাডা নাছির, নুরুল ইসলাম, মো. জোবায়ের, দিদার, আবু বক্কর বাঁশি, ইসমাইল ও মো. জঙ্গু। এদের মধ্যে শাহীন ছাড়া বাকি সবাই পলাতক আছেন। রায় ঘোষণার সময় শাহীনকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাকে আবার কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয়।
মামলার নথি ও এজাহারের ভিত্তিতে আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. জহিরুল ইসলাম জানান, ২০০৩ সালের ১ নভেম্বর ফটিকছড়ির দক্ষিণ রাঙামাটিয়া গ্রামের নেছার আহমেদ প্রকাশ তোতাকে নৃশংসভাবে গলা কেটে খুন করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন তার স্ত্রী মোর্শেদা আক্তার বাদি হয়ে ফটিকছড়ি থানায় আটজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয় ৮ জনকে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, নেছার আহমেদ দুবাই প্রবাসী ছিলেন। ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় জেল খেটে ২০০৩ সালে তিনি দেশে ফেরত আসেন। কিন্তু ভিসা সংক্রান্ত জঠিলতায় বিদেশে আর যাওয়া হয়নি। একই গ্রামের জনৈক এজাহার মিয়ার কাছে তিনি পাঁচ হাজার টাকা পেতেন। বারবার ধর্ণা দিয়েও সেই টাকা উদ্ধার করতে পারেননি নেছার। তার সঙ্গে এলাকার সন্ত্রাসী ল্যাডা নাছির ও তার সহযোগীদের পূর্ব শত্রæতা ছিল। ল্যাডা নাছির কৌশলে সেই টাকা উদ্ধারের কথা বলে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ তৈরি করে। নেছার তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করেন।
অন্যদিকে নাছির নেছারকে হত্যা করে এর দায় এজাহারের উপর চাপানোর পরিকল্পনা করে। কিন্তু হত্যার পর সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালের ১ নভেম্বর বিকেল ৫টার দিকে এজাহারের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারের কথা বলে নেছারকে তার বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় আসামিরা। পরদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নেছারের স্ত্রী মোর্শেদা স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে দক্ষিণ রাঙামাটিয়া গ্রামে একটি পাহাড়ের পাদদেশে সড়কে তার স্বামীর রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা তদন্ত করে পুলিশ মোট ১০ জনকে আসামি করে ২০০৪ সালের ১৪ মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। বিচার চলাকালে ‘কপাল কাটা নাছির’ নামে একজন মারা যান। এ কারণে তাকে বিচার কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। দশজনের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় আদালত নয় আসামির প্রত্যেককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বেঞ্চ সহকারী জহিরুল ইসলাম।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলী মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন জানান, মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। এ কারণে আসামিদের সর্বোচ্চ দন্ড দেয়া হয়েছে। একইসাথে আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এ মামলা প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ ১০ জন সাক্ষীকে আদালতের সামনে উপস্থাপন করে। ঘটনার পর আসামিদের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। পরে জামিনে গিয়ে আটজন পালিয়ে যান।