হতাশার আঁধারে উঠল ‘নতুন সূর্য’

25

মহানগর ও উপজেলায় গত ৭ ফেব্রূয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় করোনা ভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম। সেদিন সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কেন্দ্রে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের টিকা গ্রহণের মধ্যদিয়ে বহুল প্রতীক্ষার করোনা টিকার যুগে প্রবেশ করে চট্টগ্রাম। টিকা ঘিরে ছিল উৎসাহ-উদ্দীপনা।
টিকা গ্রহণে কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি এখন পর্যন্ত। করোনার থাবায় যখন পুরো পৃথিবী ‘হতাশার সুড়ঙ্গে আটকে ছিল’, ঠিক তখনই এদেশে করোনা ভ্যাকসিন বা টিকা আশার আলো হিসেবে আসে। টিকা আনায় নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের পর সেদিন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বশর, সানশাইন চ্যারিটিজের চেয়ারম্যান সাফিয়া গাজী রহমান প্রমুখ টিকা গ্রহণ করেন।
পরে টিকা নেন দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. ম রমিজ উদ্দিন চৌধুরী, পরিচালনা সম্পাদক জসিম উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলহাজ আলী আব্বাস, বিএমএ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান, চমেক উপাধ্যক্ষ ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ, চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরীসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, পুলিশসহ অগ্রাধিকার তালিকাভুক্তদের অনেকে এদিন টিকা নিয়েছিলেন।
উদ্বোধনের প্রথম দিনে মহানগর ও উপজেলা মিলিয়ে এক হাজারের বেশি সম্মুখসারির যোদ্ধাকে টিকা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে মহানগরের ৬টি কেন্দ্রে ৪২৩ জন এবং ১৪ উপজেলা হাসপাতালে আরো ৬৬৭ জন সম্মুখসারির যোদ্ধাকে এ টিকা দেয়া হয়। সব মিলিয়ে প্রথম দিন ১ হাজার ৯০ জন করোনার টিকা পান চট্টগ্রামে।
প্রাথমিক অবস্থায় ডাক্তার, পুলিশ, সাংবাদিক ও নার্সদের ফ্রন্টলাইনার হিসেবে টিকা দেয়া হলেও পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরকে টিকার আওতায় আনা হয়। শুরুতে টিকা নিতে মানুষের প্রচÐ ভিড় থাকলেও ধীরে ধীরে তা কমে আসে। টিকা গ্রহণে মানুষ দ্বিধাদ্ব›েদ্ব থাকলেও পরে নেতিবাচক ধারণা কেটে যায়।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, চট্টগ্রামে এসেছে সব মিলিয়ে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন। এর মধ্যে নগরের জন্য বরাদ্দ হয় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯০৫ ডোজ। বাকি ৩ লাখ ১ হাজার ৯৫ ডোজ টিকা বরাদ্দ দেয়া হয় ১৪ উপজেলার জন্য।
গতকাল রবিবার বিকেল পর্যন্ত চট্টগ্রামে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৪৪৭জন টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে নগরে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭৯ জন এবং জেলায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৭৬৮ জন। এ পর্যন্ত জেলা ও মহানগরে টিকা নিতে অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন ৪ লাখ ৪০ হাজার ৪৮৮ জন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম সেনানিবাস হাসপাতাল, চট্টগ্রাম পুলিশ হাসপাতাল, সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম নৌ বাহিনী হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বিমান বাহিনী হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতাল, চসিক বন্দরটিলা হাসপাতাল, চসিক মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতাল, চসিক ছাফা মোতালেব মাতৃসদন হাসপাতাল, ইউএসটিসি হাসপাতাল, সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মা ও শিশু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রে টিকা নিচ্ছে মানুষ। ১৪ উপজেলায় টিকা দেয়া হচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে।