হতদরিদ্রদের ইফতার ও খাদ্য সামগ্রীতে ভাগ বসাল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা

6

রামু প্রতিনিধি

কক্সবাজারের রামুতে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে একটি দাতা সংস্থার দরিদ্র ও হতদরিদ্র মুসলিমদের জন্য দেওয়া কয়েক লাখ টাকার ইফতার ও খাদ্য সামগ্রীতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ সচ্ছল ব্যক্তিরা ভাগ বসিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৪ মার্চ রামু উপজেলা পরিষদের বাঁকখালী মিলনায়তনে এসব পণ্যসামগ্রী প্রদান করে ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ নামের একটি সংস্থা। পণ্যসামগ্রী বিতরণকালে ব্যানারে লেখা ছিলো ‘রমাদান ফুড ডিস্ট্রিবিউশন ২০২৪’। পবিত্র মাহে রমজানকে ঘিরে দরিদ্র মুসলিম পরিবারের জন্য এসব ইফতার ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করার কথা থাকলেও ১২০ জনের তালিকায় ছিলেন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ১৯ জনের নাম। হতদরিদ্রদের জন্য দেয়া এসব ইফতার ও খাদ্য সামগ্রী দরিদ্রদের পরিবর্তে পেয়েছেন অধিকাংশ সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং বিত্তশালী পরিবার। এ কারণে পণ্য সামগ্রী বিতরণকালে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
১২০ জনের তালিকায় পণ্যসামগ্রী পেয়েছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন, উপজেলা প্রশাসনের উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিউটন বসাক, উপজেলা আইটি টেকনিশিয়ান কামরুল আজিম, অফিস সহকারী মো. সরওয়ার উদ্দিন, অফিস সহকারী নুর হোসেন, অফিস সহায়ক মিজানুর রহমান, জারিকারক সুলতান আহমদ, উপজেলা পরিষদের অফিস সহকারী অথনু শর্মা ও জসিম উদ্দিন, উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ইমাম মীর আহমদ, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী জনি বড়–য়াসহ উপজেলা পরিষদের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারি। এমনকি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের গাড়ি চালক কামাল হোসেন বাহাদুর, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি চালক পিয়াস বড়–য়াও বাদ পড়েননি। তালিকায় উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মরত আরও অনেকের নাম রয়েছে। আবার উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরে ইতিপূর্বে কর্মরত ছিলেন এমন ব্যক্তিরাও পেয়েছেন হতদরিদ্রদের জন্য দেয়া এসব ইফতার ও খাদ্য সামগ্রী।
পণ্যসামগ্রী বিতরণ নিয়োজিত ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ এর ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর জাবেরুল গনি জানান, মাহে রমজান উপলক্ষে এসব পণ্য বিতরণ করা হচ্ছে। উপকারভোগীদের তালিকা তারা করেননি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিরুপম মজুমদার এ তালিকা তাদের দিয়েছেন। তালিকায় মুসলিম ছাড়াও ১৯ জন অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর নাম থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি। পণ্যসামগ্রী বিতরণকালে ব্যানারে এ সংক্রান্ত যে কোন অভিযোগ থাকলে যোগাযোগের জন্য একটি মুঠোফোন নাম্বার দেয়া হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে ওই নাম্বারে একাধিকবার কল করে সংযোগ বন্ধ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামু উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আফসানা জেসমিন পপি জানান, মাহে রমজানের জন্য এসব সামগ্রী বিতরণ করা হলেও প্রকৃত উপকারভোগী তথা হতদরিদ্র পরিবার ছিলো নগণ্য। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিরুপম মজুমদার এ তালিকাটি করেছেন। এরমধ্যে তাকে (পপি) এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিনকে মাত্র ১০ টি করে কার্ড দেয়া হয়েছে।
আফসানা জেসমিন পপি আরও জানান, তাকে ১০টি কার্ড দেয়া হয়েছিল। এসব কার্ড তিনি রশিদনগর, কাউয়ারখোপ, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের হতদরিদ্র পরিবার এবং ৩ জন ইমমাকে দিয়েছেন। কিন্তু বিপুল সংখ্যক কার্ড পেয়েছেন সরকারি চাকরিজীবী ও সচ্ছল পরিবারের সদস্যরা। যা দুঃখজনক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিরুপম মজুমদার জানান, উপজেলা প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারি আছেন যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তাদেরও ঈদ করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে তারাও কষ্টে আছে। তাই উপজেলার সবখানে দেয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবে অসচ্ছল কর্মচারিদের সেই তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ২৯৪ পরিবারকে এসব পণ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রামু উপজেলা পরিষদের বাঁকখালী মিলনায়তনে ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ নামের সংস্থাটি ১২০ জনকে পণ্য সামগ্রী প্রদান করে। এরমধ্যে প্রতিজনকে ২৬ কেজি চাল, ৩ কেজি মশুর ডাল, ৩ কেজি ছোলা, সয়াবিন তেল, ২ কেজি চিনি, ১ কেজি লবণ, ১ কেজি পোলাও চাল, ২ কেজি করে চিড়া বিতরণ করা হয়। যার অধিকাংশ হতদরিদ্রদের পরিবর্তে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ সচ্ছল পরিবারের সদস্যরা।