হঠাৎ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি বাজার তদারকি জোরদার করতে হবে

24

গত তিনমাস ধরে সরকারের নানা উদ্যোগের মধ্যেও পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির গতি যখন কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছেনা, ভোক্তা সাধারণ যখন পেঁয়াজ নিয়ে দুঃচিন্তার প্রহর গুণছে তখন আরো বেশকিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অসহনীয় পর্যায়ে উঠে গেছে। পেঁয়াজের পর একে একে চাল, ডাল, ময়দা, আটা, সয়াবিন তেল, ডিম, শীতকালীন তরিতরকারিসহ নানা পণ্যের মূল্য এখন এমন পর্যায়ে রয়েছে যে, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্যাব) বুধবার সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য হয়েছে। গতকালের সংবাদ সূত্র অনুযায়ী এরসাথে যোগ হতে যাচ্ছে বিদ্যুতের দামও।
শীতকালীন শাক-সবজি, তরিতরকারিসহ ২০টি নিত্যপণ্যের দাম অসহনীয় উল্লেখ করে সেগুলোর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকারকে তাগিদ দিয়েছে ক্যাব। বস্তুত শীতকালীন সবজির দাম কেন ক্রেতাসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে তার যেমন কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা নেই, তেমনি ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না অন্যান্য নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যের। আসলে শুরুটা হয়েছিল পেঁয়াজ নিয়ে। পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকটকে পুঁজি করে অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, আমদানিকারক, আড়তদার, মজুদদার ও খুচরা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করে ভোক্তাদের পকেট থেকে হাতিয়ে নিয়েছে শত শত কোটি টাকা। সরকারি নানা উদ্যোগের পরও পেঁয়াজের সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, ফলে এর দাম কমলেও এখনও সাধারণ ভোক্তাশ্রেণির ক্রয়ক্ষমতার বাইরে রয়ে গেছে। পেঁয়াজের পাশাপাশি গত ১ মাস ধরে চালের মূল্য বেড়েই চলেছে ক্রমান্বয়ে।
চট্টগ্রামের প্রতিটি বাজারে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৮ টাকার অধিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে চাল। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে ব্যবসায়ী সূত্রে উল্লেখ করা হয়, মৌসুমের শেষে চালের দাম একটু বাড়তি থাকে। নতুন চাল বাজারে আসলে কমে যাবে। ওদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় ডিমের দাম ডজনে বেড়েছে ২০ টাকা, বয়লার মুরগীর দামও প্রতি কেজিতে ১০টাকা করে বেড়েছে। কয়েকদিন আগে গুজব ছাড়িয়ে লবণের দামও হঠাৎ বাড়ানো হয়, যদিও তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার দ্রæত পদক্ষেপ নিয়েছে। লবণের দাম এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ক্যাব সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। তাই যদি হয়, তাহলে এ দেশে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ থাকার কথা নয়। বস্তুত পুরোটাই ব্যবসায়িক কারসাজি। এ কারসাজির মাধ্যমে একদিকে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অতি মুনাফা করছে, অন্যদিকে তারা বিব্রত করছে সরকারকেও। ক্যাব নেতারা নিত্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন, যা প্রণিধানযোগ্য।
বলা হয়েছে, প্যাকেটজাত ও বস্তাজাত পণ্যের সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে তা গায়ে লেখা বাধ্যতামূলক করা হলে ভোক্তারা উপকৃত হবেন। ক্যাব ভোক্তা স্বার্থ অধিকার রক্ষায় স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় অথবা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি পৃথক বিভাগ প্রতিষ্ঠারও দাবি জানিয়েছে।
সরকারকে এ দাবি বিবেচনায় রাখতে হবে অবশ্যই। এছাড়া শীতকালীন শাক-সবজিতে বাজার সয়লাব হলেও কেন, কি কারণে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। সংবাদপত্রে প্রকাশ পেয়েছে, এ মৌসূমে যেখানে ১০/১৫ টাকায় এ আটি শাক মেলার কথা সেখানে ৩০/৩৫ টাকা পর্যন্ত দাম হাকানো হচ্ছে। এছাড়া ফুলকপি, বাধাকপি, সীম, মুলা, ডেরস, বেগুন, ধনিয়াপাতা, টমেটোসহ সব কাঁচাপণ্যের বাজার দর আকাশ ছোঁয়া। আমরা মনে করি, এক অস্বাভাবিক বাজার দর সিন্ডিকেট সৃষ্ট। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি। আমরা মনে করি, বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে নজরদারির কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে কঠোরভাবে ভোক্তা আইন প্রয়োগ করতে হবে।