হচ্ছে না বাঁশখালী সড়ক সম্প্রসারণ

154

নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বাস্তবায়নাধীন স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেলের ছোঁয়ায় আনোয়ারা-পটিয়া-চন্দনাইশের রাস্তা পাল্টে যাচ্ছে। কিন্তু পাল্টাচ্ছে না বাঁশখালী সড়ক। টানেল থেকে বের হওয়া যানবাহন চলাচলের জন্য সড়ক নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে আনোয়ারা, পটিয়া ও চন্দনাইশে। বাঁশখালীর মূল সড়ক সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আপাতত নেই বলে জানালেন দোহাজারি সড়ক জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ।
তার দেয়া তথ্যমতে, টানেলে চলাচলকারী যানবাহনের কথা মাখায় রেখে পটিয়া-কক্সবাজার সড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করার প্রকল্প ইতোমধ্যে প্রস্তুত করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আবার টানেলে চলাচলকারী যানবাহনের সুবিধার জন্য পটিয়া সড়কটি ক্রসিং থেকে কেরানিহাট পর্যন্ত ৩৪ ফিট করা হচ্ছে। বর্তমানে সড়ক রয়েছে ১৮ ফিট। এছাড়া আনোয়ারা-গাছবাড়িয়া সড়কটিও ১৮ ফিটের জায়গায় ৩৪ ফিট করা হচ্ছে।
এদিকে কর্ণফুলী টানেল হয়ে আনোয়ারা উপজেলার সিইউএফএল ঘাট-চাতরি চৌমুহনী-বাঁশখালী-পেকুয়ার মগনামা হয়ে সরাসরি কক্সবাজার সদরে যুক্ত হলে কক্সবাজারের দিকে সড়ক কমবে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। এই তথ্য উল্লেখ করে বাঁশখালী সড়ক সম্প্রসারণের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সুমন সিংহ জানান, বাঁশখালী সড়ক সম্প্রসারণে কোনো পদক্ষেপ আপাতত নেই। এটা আরো পরের বিষয়। হবে, আস্তে আস্তে হবে।
অন্যদিকে টানেল উদ্বোধনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য ততই বাড়ছে। ব্যবসায়ী, শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানেল চালুর পর এক বছরে এই অঞ্চলে বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ বেড়ে যাবে উল্লেখযোগ্য হারে। বর্তমানে শুধুমাত্র এখানকার কেইপিজেড থেকে বার্ষিক রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। টানেল চালু হলে বাস্তবায়নাধীন অন্য শিল্পকারখানা মিলিয়ে এক বছরে তা ১৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানেল চালু হলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম হবে একটি বিজনেস হাব। ব্যবসা-বাণিজ্যের এই ঢেউ প্রসারিত হবে আনোয়ারা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত। সে অনুযায়ী নতুন নতুন শিল্পকারখানা হচ্ছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকের নতুন নতুন শাখা হচ্ছে। এতে বিপুল কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বৈদেশিক বাণিজ্যও বেড়ে যাবে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ চালু হবে এই টানেল। সে অনুযায়ী ছয় লেনের সংযোগ সড়কের মধ্যে চার লেনের কাজ শেষ পর্যায়ে। নগরীর পতেঙ্গা হয়ে টানেল উঠবে আনোয়ারা বন্দর এলাকায়। আনোয়ারার কালা বিবিরদিঘি হবে টানেলকেন্দ্রিক বিকাশমান নতুন শহরের জংশন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের গাড়িগুলো টানেল দিয়ে নদী পার হয়ে গিয়ে থামবে কালাবিবির দিঘি এলাকায়। কারণ এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম ধাপ গিয়ে শেষ হয়েছে এই জায়গায়। সেখান থেকে পূর্বমুখী দুটি সড়ক বাঁশখালী ও আনোয়ারা-চন্দনাইশ হয়ে যুক্ত করেছে কক্সবাজারকে। ফলে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের নজর এখন আনোয়ারার চাতরী, উপজেলা সদর, বরুমচড়া, বৈরাগ, বন্দর এলাকাগুলোতেই বেশি। কিন্তু বাঁশখালী এক্ষেত্রে বঞ্চিতই থাকছে।
এই টানেল চালু হলে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল ও বাঁশখালীর কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড গ্রæপের ৩০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র, বাঁশখালীতে এস আলম গ্রæপের এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র বিকাশমান অর্থনীতির সেতুবন্ধন হবে। আনোয়ারার ৭৮৩ একর জমিতে ইকোনমিক জোনের কাজ চলছে। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে শুরু করে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তর চট্টগ্রামকে একটি ইকোনমিক হাবে পরিণত করতে সরকারি-বেসরকারি কর্মযজ্ঞ চলছে। গড়ে উঠছে উৎপাদনমুখী বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। টানেল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আনোয়ারায় এরমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে ২০ তফসিলি ব্যাংকের অন্তত ২৫ শাখা, উপশাখা ও এজেন্ট আউটলেট। এসব শাখা-উপশাখায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, কর্পোরেট হাউস ও শিল্পোদ্যেক্তাদের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার আমানত জমা রয়েছে বলে জানা গেছে।
টানেল কেন্দ্রিক বাঁশখালী সড়ককে সম্প্রসারণ না করার পরিকল্পনার বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, টানেলকেন্দ্রিক প্রকল্পের পরিকল্পনাতে বাঁশখালী সড়ক সম্প্রসারণের বিষয়টি থাকা দরকার ছিল। এটা না থাকা মানে পরিকল্পনায় গলদ। এখন শুনলাম চন্দনাইশ, আনোয়ারা ও পটিয়ায় সড়ক সম্প্রসারণে প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে উল্লেখিত সড়ক কেন্দ্রিক।
তিনি আরো বলেন, বাঁশখালী, কক্সবাজার ও মহেশখালী কেন্দ্রিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর দ্রুত সুফল নিশ্চিত করতে এবং কক্সবাজারের সাথে সড়ক যোগাযোগে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্ব কমাতে বাঁশখালী সড়ক সম্প্রসারণের বিকল্প নেই।