সড়ক-ফুটপাতে হচ্ছে আরও ২৪ পুলিশ বক্স!

38

ফুটপাতেই এবার নির্মিত হচ্ছে দ্বিতল ভবন। আপাতত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে বাণিজ্যিক ভবন। আসলে তা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের বিশ্রামাগার। শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন ফুটপাতের উপর নির্মিত এ ভবনে যানবাহনের শৃঙ্খলা নিশ্চিতে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন অবস্থায় বিশ্রাম নিবেন। এমনকি ভবনটিতে বাথরুম, ওয়েটিং রুমের ব্যবস্থাও রাখা আছে।
এমন আরও ২৪টি পুলিশ বক্স নির্মাণ করতে চায় সংস্থাটি। অনুমতির জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) কাছে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। তবে যাচাইবাছাই ছাড়া অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকেও এ বিষয়ে অনুমোদন নেয়নি পুলিশ। এ ছাড়া নগর পরিকল্পনায় এমন স্থাপনা নির্মাণকে কোনোভাবে সমর্থন করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য স্থপতি আশিক ইমরান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের বিশ্রামের প্রয়োজন। তাই বলে ফুটপাত দখল করে স্থায়ী স্থাপনা তৈরি করা উচিত নয়।
নগরীর মুরাদপুর মোড়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওভারব্রিজের নিচে প্রাবাসী বেকারির সামনে রয়েছে ফুটপাত। কিন্তু সে ফুটপাত দখল করেছে হকার ব্যবসায়ীরা। ফুটপাতের ওপর পসরা সাজিয়ে বিক্রি হচ্ছে দেশি-বিদেশি ফল-ফলাদি। ট্রাফিক পুলিশদের জন্য যে বক্সটি স্থাপন করা হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ রাস্তার ওপর। অর্থ্যাৎ ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছেন হকাররা আর রাস্তা দখল করে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করছে ট্রাফিক পুলিশ। আরেক গুরুত্বপূর্ণ মোড় হল আগ্রাবাদ। সেখানেও ফুটপাতে রয়েছে ট্রাফিক পুলিশ বক্স। সে বক্সের সাথে তাল মিলিয়ে ফুটপাতের ওপর সারি করে বসেছে হকাররা। রং-বেরংয়ের লাইটিং দেখে রীতিমত বিপণি বিতান বলে মনে হবে যে কারোরই। তবে সত্যি হল, এটি পথচারীদের হাঁটার জন্য সিটি করপোরেশনের নির্মিত ফুটপাত। সে ফুটপাত দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছে হকাররা। সেটা নতুন কিছু না হলেও হকারদের সাথে সাথে ফুটপাতের ওপর ট্রাফিক পুলিশ বক্স নির্মাণ করেছে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। শুধু এ কয়েকটি মোড় নয়, নগরীর প্রায় ৮০টি স্থানে ফুটপাত দখল করে পুলিশ বক্স বসিয়েছে সিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, সিএমপি’র পত্রে বিআরটিসি মোড়, জিপিও’র সামনে আইল্যান্ডের উপর, জামালখান মোড়ে ডা. খাস্তগীর স্কুলের সামনে যাত্রী ছাউনির পাশে, ডিসি হিলের সামনে বৌদ্ধ মন্দির মোড়, আন্দরকিল্লা মোড় পুরাতন সিটি করপোরেশন ভবনের সামনে, চান্দগাঁ থানার পাশে বাস টার্মিনাল বর্হিমুখের উত্তর পাশে, কাপ্তাই রাস্তার মাথা গোল চত্বরের গোল চত্বরের দক্ষিণ পাশে, শেরশাহ মোড়ে রাস্তার পূর্বপাশে, বালুছড়া রাস্তার পূর্ব পাশে পিএইচপি’র দেয়াল ঘেঁষে, অক্সিজেন মোড় থেকে কুয়াইশ রোড়ের পূর্বপাশে, মেহেদীবাগ ও এমএম আলী রোড়ের সংযোগ স্থলে, জিইসি জামান হোটেলের নিচ তলায়, দেওয়ানহাট ফ্লাইওভারের নিচে, বাদামতলী এসএইচআর টাওয়ারের পাশে, বড়পোল মোড়, ওয়াই জংশন, টোল রোড়ে চট্টগ্রাম ফিলিং স্টেশন, একে খান মোড়ে শ্যামলী কাউন্টারের পাশে, সিটি গেট পাক্কা রাস্তার মাথা, পতেঙ্গা সি বিচ ক্রসিং, ইপিজেড এর উল্টো পাশে সাগর পাড়, সাগর পাড় বে টার্মিনাল, গুপ্তখাল মেঘনা পেট্রোলিয়ামের পাশে ও টোল প্লাজার পাশে আউটার রিং রোড়ের মুখে পুলিশ বক্স বাসনোর অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, আমরা বারবার ফুটপাত পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত থাকার কথা বলছি। কেননা এটা নগরবাসীর নাগরিক অধিকার। এটা সবসময় ক্ষুণ্ণ হয়ে আসছে। ফুটপাত দখলে হকারদের দোষী করি। তবে যখন দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো ফুটপাত দখলকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়, তখন বলার কিছু থাকে না। পৃথিবীর কোথাও এমন চিত্র নেই। নিতান্তই পুলিশ বক্সের প্রয়োজন হলে তা ফুটপাত বা রাস্তায় বসানো কোনোভাবে উচিত হবে না। এতে ফুটপাত দখলদাররা উৎসাহিত হবে। তাই বিষয়টির বিকল্প নিয়ে ভাবা উচিত দুই সংস্থারই। এমনটা মন্তব্য করেছেন এ নগর পরিকল্পনাবিদ।
সিটি মেয়র রেজাউল করিম পূর্বদেশকে বলেন, ফুটপাতে পুলিশবক্স বসানোর চাহিদাপত্র এখনও আমার হাতে আসেনি। কেউ অনুমতি চাইলে তো আর দেওয়া যায় না। যদি জনগণের দুর্ভোগ হয় তাহলে কোনোভাবে সিটি করপোরেশন অনুমতি দিবে না। তবুও প্রস্তাব আসলে ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি’ করে দেখবো। দেওয়ার মত হলে দেব, অন্যথায় অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোজাম্মেল হক জানান, সিএমপি ২৪টি পুলিশ বক্স বসানোর অনুমতি চেয়েছে। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তারা সেবা প্রদানের স্বার্থে এসব পুলিশ বক্স বসানোর কথা জানিয়েছে। তা আমরা ফাইলভুক্ত করেছি। সবধরনের যাচাইবাছাই করে দেখবো। তারপর অনুমতি দেব কি দেব না তা নিয়ে ভাবা হবে।