সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ দিনে ৭ জনের প্রাণহানি

9

নিজস্ব প্রতিবেদক

সামনে ঈদ। বাবার সাথে শপিং করতে যাচ্ছে পাঁচ বছরের শিশু আবদুল মোমিন। তাদের আর শপিং করা হলো না। পথেই লরির চাপায় প্রাণ গেল বাপ-ছেলেই দু’জনেরই। গতকাল শনিবার সকালের ঘটনা এটি। দুইদিন আগে ইফতারি নিয়ে বাসায় ফেরার পথে স্বামী-স্ত্রীর পিষ্ট হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। শুধুমাত্র সড়ক দুর্ঘটনায় গত ৬ দিনে ৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। বেপরোয়া গাড়ির গতি, ভাঙা সড়ক, ফুটপাত দখল, ভঙ্গুর ট্রাফিক ব্যবস্থা ও মানুষের অসচেতনতার কারণে এমনটা হচ্ছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
এমনকি গত মাসে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৮৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। যা মাসের হিসেবে সর্বোচ্চ। গত ৪ এপ্রিল এমন তথ্য উপস্থাপন করে সংবাদ সম্মেলন করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
নগরীর বন্দরটিলা এলাকায় লরিচাপায় রিকশার আরোহী ছেলে ও বাবা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে আরেক ছেলে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে শাহ প্লাজা নামের একটি বিপণিকেন্দ্রের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এতে বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ করে দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। নিহতরা হলেন, আবু সালেহ (৩৮) ও তার নয় মাস বয়সী ছেলে আবদুল মোমিন। আহত অপর ছেলের নাম মাহিদ (৪)। তারা বন্দরটিলার আকমল আলী রোডে থাকতেন বলে জানা যায়। আবু সালেহ ইপিজেডের এইচকেডি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রিকশায় আবু সালেহ, তার স্ত্রী ও দুই ছেলে ছিলেন। লরির ধাক্কায় চারজনই সড়কে ছিটকে পড়ে যান। রিকশাটি এতে দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলে দু’জন মারা যান। মাথায় আঘাত পাওয়া মাহিতকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আবু সালেহের স্ত্রী ও রিকশাচালক জখম হননি। এ ঘটনায় লরিসহ চালককে আটক করার তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল বশর।
গত ৩ এপ্রিল শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক এলাকায় বাসের চাপায় ৭ বছর বয়সী শিশু আদিব মিয়া নিহত হয়। ৬ এপ্রিল মোটরসাইকেলে করে বিকাল ৫ টার দিকে বাসায় ফিরছিলেন মো. ইকবাল চৌধুরী ও তার স্ত্রী সখিনা। লালখান বাজার মোড়ে মিক্সার ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল দুজনেরই। গত ৮ এপ্রিল অনন্যা আবাসিক এলাকায় বাসের চাপায় ফরহাদ হোসেন (১৮) নামে আরও এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন।
জানা গেছে, নগরীতে ২ লাখের বেশি যানবাহন চলাচল করে। এর মধ্যে ট্রাক এবং কাভার্ড ভ্যান রয়েছে ৩০ হাজারের বেশি। বিশেষ করে বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে এসব ট্রাক নগরের সড়ক দিয়ে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের দিকে যাতায়াত করে।
বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে বাস-মিনিবাসের ১৪টি রুট রয়েছে। এসব রুটে ১ হাজার ১৩৪টি বাস-মিনিবাস চলাচল করছে। এছাড়া ১৬টি হিউম্যান হলারের রুটে ১ হাজার ২৫০টি এবং ১৬টি অটোটেম্পু রুটে ১ হাজার ৬৬২টি গাড়ি চলছে।
অপরদিকে ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই চট্টগ্রাম বিভাগে ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৮৮ যানবাহন চলাচল করছে। এসব যানবাহনের মধ্যে রয়েছে ট্রাক, মিনি ট্রাক, বাস, হিউম্যান হলার, মিনিবাস, টেম্পো, সিএনজি অটোরিকশা ও মাইক্রোবাস। এর মধ্যে অটোরিকশা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া নগরে লাইসেন্সধারী রিকশার সংখ্যা ৩৫ হাজার। কিন্তু সড়কে চলাচল করে লাখেরও বেশি। অলি-গলিতে চলাচল করছে ২০ হাজারের বেশি রিকশা। এদিকে গ্রামাঞ্চলের জন্য নিবন্ধিত সিএনজিচালিত অটোরিকশাও শহরে প্রবেশ করছে। নগরের বাকলিয়া, আরেফিন নগর, হামজারবাগ, বহদ্দারহাট-কালুরঘাট এবং নতুন ব্রিজ থেকে কোতোয়ালী থানার মোড় এলাকায় চলাচল করে এসব যানবাহন। বিআরটিএ’র হিসাবে প্রতিবছরই চট্টগ্রামে মোটরসাইকেল নিবন্ধনের হার বাড়ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিবন্ধনের সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৫৭৩টি। আর এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১ লাখের বেশি মোটরসাইকেল নিবন্ধন হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন বলছে, সড়ক দুর্ঘটনার প্রায় অর্ধেকই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। গত বছরে চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা হয়েছে ১ দশমিক ২৪ শতাংশ ও নিহত হয়েছে ১৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ। শুধুমাত্র মার্চ মাসে দেশে সড়কে ৪৫৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫৮৯ জন ও আহত হয়েছেন ৬৪৭ জন। নিহতদের মধ্যে ৬১ জন নারী ও ৯৬ জন শিশুও রয়েছে। গত ৪ এপ্রিল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে এই সংগঠন।