সড়ক কেড়ে নিল ৮ প্রাণ

50

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত ও আহত হয়েছেন ৩২ জন। এর মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফে ৩ রোহিঙ্গা নিহত ও ১৭ জন রোহিঙ্গা আহত এবং চকরিয়ায় ২ জন নিহত ও ৮ যাত্রী আহত হন। চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ১ বৃদ্ধা নিহত ও আহত হন ১ মহিলা; চন্দনাইশে ১ জন নিহত ও ৬ জন আহত এবং লোহাগাড়ায় নিহত হন ১ জন। গতকাল শুক্রবার, গত বৃহস্পতিবার ও মঙ্গলবার এসব দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
পূর্বদেশের টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, ঈদে আনন্দ করতে বের হয়ে কক্সবাজারের টেকনাফে সড়ক দুর্ঘটনায় তিন রোহিঙ্গা নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরও ১৭ জন রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। গতকাল শুক্রবার দুপুরের দিকে টেকনাফের নোয়াখালী পাড়া মেরিন ড্রাইভ সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন উখিয়া বালুখালীর জি-বøকের মোহাম্মদ জুবাইর (১৭), একই শিবিরের সি-ব্লকের মোহাম্মদ ইদ্রিস (৩০) ও নূর মোহাম্মদ (৪০)। আহতরা উখিয়া বালুখালী ও থাইংখালী রোহিঙ্গাক্যাম্পের সদস্য বলে ধারণা করছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, লেগুনায় করে ঘুরতে বের হওয়া একদল রোহিঙ্গা যুবক দুপুর ১টার দিকে টেকনাফের নোয়াখালীপাড়া মেরিন ড্রাইভে পৌঁছান। এ সময় তাদের বহনকারী লেগুনাটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। পরে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সুমন বড়ুয়া ও ডা. টিটু চন্দ্র শীল আহতদের তিন জনকে মৃত ঘোষণা করেন।
ডা. টিটু চন্দ্র শীল বলেন, দুর্ঘটনায় তিন রোহিঙ্গা মারা গেছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ১৭ জন। এদের মধ্যে পাঁচ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় তিন জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল হাসান বলেন, ঈদে গাড়ি নিয়ে আনন্দে করতে বের হওয়া একদল রোহিঙ্গা যুবক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এ সময় তিন রোহিঙ্গা সদস্য নিহত হন।
চকরিয়া প্রতিনিধি জানান, চকরিয়ায় যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষে এক নারীসহ ২ জন নিহত ও ৮ যাত্রী আহত হন। এ সময় মাইক্রোবাসটি সম্পূর্ণ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। আহতদের মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার মেদাকচ্ছপিয়া ঢালা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন চকরিয়ার খুটাখালীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর ফুলছড়ি এলাকার খলিলুর রহমানের স্ত্রী রওশন আক্তার (৪৫) ও রামু উপজেলার চা-বাগানস্থ রমনী পাড়া এলাকার দিপক পালের ছেলে সনেট পাল (২৭)। নিহত ও আহতরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী।
চকরিয়ায় মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) জসিম উদ্দিন বলেন, শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মেদাকচ্ছপিয়া ঢালা এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা কক্সবাজার অভিমুখি ইউনিক পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সাথে বিপরীতমুখি অপর একটি যাত্রীবাহী মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই এক নারীসহ ২ জন নিহত ও ৮ যাত্রী আহত হয়। দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসটি সম্পূর্ণ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আহতদের মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এসআই জসিম উদ্দিন আরও বলেন, দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনের প্রেক্ষিতে মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি দুটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্ততি চলছেভ
ফটিকছড়ি প্রতিনিধি জানান, ফটিকছড়িতে সড়ক দুর্ঘটনায় এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের কুম্ভারপাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন অপর এক মহিলা জোসনা আকতার (৪৫)। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতের নাম তামান্না খাতুন (৫৫)। তিনি নাজিরহাট পৌরসভাধীন কুম্ভারপাড়া গ্রামের বদিউল আলমের স্ত্রী। ঈদের পরদিন বিকেলে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার পথে তিনি এ দুর্ঘটনার শিকার হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার সময় ফটিকছড়ি সদর থেকে ছেড়ে আসা একটি মোটরসাইকেল সড়কের কুম্ভারপাড়া এলাকায় পৌঁছলে সেখানে রাস্তা পারাপার হচ্ছিলেন তামান্না খাতুনসহ তার জা জোসনা আকতার। এ সময় দুজনই মোটরসাইকেলের ধাক্কায় সড়কের পাশে ছিটকে পড়েন। দ্রæত দুজনকে এলাকার লোকজন উদ্ধার করে ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে তামান্না মৃত্যু হয়।
ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাবুল আকতার বলেন, দুর্ঘটনার পরপরই মোটরসাইকেল চালককে আটক করা হয়েছে। পরে উভয় পক্ষের পরামর্শে লাশ বিনা ময়নাতদন্তে গতকাল শুক্রবার দাফন করা হয়।
চন্দনাইশ প্রতিনিধি জানান, চন্দনাইশ উপজেলার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজি অটোরিক্শার মুখোমুখি সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও ৬ জনের অধিক আহত হন।
গত মঙ্গলবার ভোরে চট্টগ্রাম অভিমুখি যাত্রীবাহী বাস দোহাজারী অভিমুখি সিএনজি অটোরিক্শার মুখোমুখি সংঘর্ষে সিএনজির এক যাত্রী নিহত হন। তার নাম জানা যায়নি।
অন্যদিকে সাতবাড়িয়ার ফোরক আহমদের ছেলে মাহমুদ হোসেন (৫০), পেকুয়া কক্সবাজারের নুর আলমের ছেলে শাকের হোসেন (৩০), পটিয়া অলিহাট এলাকার মো. ইলিয়াছের ছেলে নুরুল ইসলামসহ (৪০) ৬ জন আহত হন। আহতদেরকে স্থানীয় বিজিসি ট্রাস্ট হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি দু’টি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তবে গাড়ির চালক-হেল্পার পলাতক রয়েছেন।
লোহাগাড়া প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ায় ম্যাজিক বাস ও নোয়াহ গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে এক চালকের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার দুপুর ১টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে উপজেলার আমিরাবাদ তজু মুন্সীর গ্যারেজ এলাকায়।
নিহত চালকের নাম মাওলানা জিয়াবুল হক (৪০)। তিনি ম্যাজিক বাসের চালক ও সাতকানিয়া উপজেলার করইয়া নগর সিকদার পাড়ার মৃত নুরুল হক সিকদারের পুত্র বলে জানা গেছে। তিনি ৩ কন্যা সন্তানের জনক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাস্থলে কক্সবাজারমুখি নোয়াহ গাড়ি ও বিপরীতমুখী ম্যাজিক গাড়ির মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ম্যাজিক গাড়ির চালক গুরতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথম লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আশংকাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, ঘটনাস্থল থেকে গাড়ি ২টি উদ্ধার করে দোহাজারী হাইওয়ে থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে।